জাহিদ হাসান, ঢাবি শিক্ষার্থী

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

এনটিআরসিএ’র নিয়োগে যাচ্ছেতাই অবস্থা কেন?

আলোকিত জনগোষ্ঠী গড়তে বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক দশকে শিক্ষার সর্বস্তরেই চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষার এই ব্যাপক অগ্রগতি ও সক্ষমতা অর্জন অর্থনীতির ভিত্তিকেও করেছে মজবুত ও টেকসই। দেশকে বিশ্বের বুকে দিয়েছে পৃথক পরিচিতি। একসময় বিপুলসংখ্যক কোমলমতি শিশু স্কুলে যাওয়ারই সুযোগ পেতো না। অনেকে আবার স্কুলে গেলেও প্রাথমিক পর্যায় থেকে ঝরে পড়তো। পাবলিক পরীক্ষায় ছিল নকলের ছড়াছড়ি। গত কয়েক বছরে বদলে গেছে শিক্ষাক্ষেত্র, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পাশাপাশি চলমান রয়েছে এমপিওভূক্তির কার্যক্রমও। তাইতো বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্যের তালিকায় নিঃসন্দেহে শীর্ষে শিক্ষা। কিন্তু, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দানের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। এই প্রেক্ষাপটে সনদধারীদের করা রীট মামলায় গত ৩ বছর যাবৎ বেসরকারী শিক্ষা প্রাতষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। যার দরুন এসকল প্রতিষ্ঠানে একধরণের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বচ্ছভাবে কম্পিউটারাইজ্ড পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এনটিআরসিএ কে। এতে করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের স্বপ্ন দেখতে থাকে নিবন্ধন সনদধারীরা। কিন্তু, গত ২৪ জানুয়ারী এনটিআরসিএ প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে নানা সন্দেহজনক প্রশ্ন দানা বেঁধেছে শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের মনে। তাছাড়া তারা এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত সমস্যাকেও দুষছেন সমান তালে।

বাস্তব উদাহরণ, টুম্পা রানি। তিনি ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে সহকারী শিক্ষক হিন্দু ধর্ম শিক্ষায় নিবন্ধিত। তার রোল নম্বর ৩১৫০৪০২০। সম্মিলিত জাতীয় মেধা তালিকায় তার মেরিট ১৬৩ এবং সিরিয়াল ২০২। টুম্পা রানি ১৪টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। তার প্রথম পছন্দ ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ গার্লস হাই স্কুল। দ্বিতীয় পছন্দ ছিল বিনোদপুর হাই স্কুল শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। টুম্পা রানি তার ২য় পছন্দের প্রতিষ্ঠান বিনোদপুর হাই স্কুলে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। নিয়ম অনুযায়ী টুম্পা রানীর প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান শিবগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলে যিনি সুপারিশ পেয়েছেন, মেরিট লিস্টে তিনি অবশ্যই টুম্পা রানির আগে থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, শিবগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে যিনি সুপারিশ পেয়েছেন মেরিট লিস্টে তিনি টুম্পা রানির চেয়ে অনেক অনেক পিছিয়ে। শিবগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে সুপারিশ পেয়েছেন সুবোদ কুমার শীল। তিনি ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সহকারী শিক্ষক হিন্দু ধর্ম শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার রোল নম্বর ৩১৫০৫৯৬০। জাতীয় মেধা তালিকায় তার মেরিট ১৯৭৪ এবং সিরিয়াল ২২২২। মেরিটের দিক থেকে তার চেয়ে অনেক এগিয়ে থেকেও নিজের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান পাননি টুম্পা রানি। অথচ টুম্পা রানির প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন তার চেয়ে মেরিট লিস্টে অনেক পিছিয়ে থাকা সুবোদ। কম্পিউটারাইজ্ড ফলাফলে এ ধরণের ঘটনা কিভাবে সম্ভব? এটি নিয়ে নিবন্ধনধারীরা বিস্মিত। আরেকটি পদ্ধতিগত সমস্যা হলো আবেদন প্রক্রিয়ায় চয়েজ পদ্ধতি এবং নারী কোটা উল্লেখ না থাকা। চয়েজ পদ্ধতি না থাকায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদা আবেদন করার পাশপাশি আলাদা আলাদাভাবে টেলিটক সিমের মাধ্যমে ১৮৫ টাকা করে পাঠাতে হয়। মোঃ রেজাউল করিম তিনি ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারী। মোট ৪৫৩ টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে তিনি চাকুরীর দেখা পাননি। তার প্রশ্ন জেগেছে পদ্ধতিগত সমস্যা নিয়ে।

তিনি বলেন, ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে তার বিষয়ে অধিকাংশ প্রার্থীকে টিকানো হয়েছে নারী কোটায়। অথচ, অনলাইনে আবেদনের সময় উল্লেখ থাকেনা যে কোনটি নারী কোটার পদ। কিন্তু অনলাইনে আবেদনের সময় যদি কোন কোন পদগুলো নারী কোটার তা জানা যেত তাহলে হয়ত এই প্রার্থীকে কম্পিউটার দোকানের ইন্টারনেট খরচসহ ৪৫৩ টি আবেদন করে ১ লক্ষ টাকা খোঁয়াতে হতনা।

১৩ তম নিবন্ধন সনদধারী উম্মে ফারজানা- রোল নং ৩১৪২৯৭৬০, তিনি নারী কোটায় বগুড়া সদরের আরিফা আলী শেফালী দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। অনলাইনে আবেদনের সময় এই প্রতিষ্ঠানকে এমপিও হিসেবে দেখানো হলেও তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানটি নন এমপিও। আবার আরেকটি সমস্যা রেজাল্ট প্রকাশ পরবর্তী সময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে যে, যেসকল প্রার্থী মাদ্রাসায় কৃষিতে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে তাদেরকে যোগদান করতে হলে নাকি বিএড সনদ লাগবে। অথচ, এটি নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল না। তাছাড়া গত ২০১৬ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক যেসব প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল তা তাদের ওয়েবসাইটে বিগত আড়াই বছর যাবৎ দৃশ্যমান ছিল। অথচ, গত ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত সমন্বিত ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু, তাদের ভাষ্যমতে, এ ফলাফল সর্বদা ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান থাকার কথা ছিল।

মাদার অব এডুকেশন খ্যাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিবন্ধনধারীদের দাবী কম্পিউটারাইড্ পদ্ধতিতে ফলাফলে মানুষের হস্তক্ষেপকে সমূলে বিনাশ করুন এবং পদ্ধতিগত সমস্যার সমাধানে জোড় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এনটিআরসিএ,নিয়োগ,যাচ্ছেতাই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close