সাদিয়া জামান সেতু
পাখিটা আমার মতো ক্লান্ত
মনে পড়ে সেই শৈশবের দিনগুলো। শৈশব বলতেই ফেলে আসা রঙিন-মলিন নানা স্মৃতি। দিনগুলো কি আর ফিরে আসবে? শৈশবের আমি আর আজ আমি অনেক ফারাক। শৈশবের কথা মনে হলেই মনে হয়—কেন যে বড় হলাম; কেন কুমির কুমির খেলা, গোল্লাছুট খেলার বয়সটা চলে গেল।
শিশুকাল থেকে শুরু করে বসতে শেখা, হাঁটতে শেখা, হাতেখড়ি সবই যেন স্মৃতির মলাট। সেই মলাটে ধীরে ধীরে ধুলো জমে যায়, আবার একদিন একা কাকডাকা ভোরে বা মধ্যদুপুরে হঠাৎ হঠাৎ করেই মলাটের ধুলো সরিয়ে ঝেড়ে এক একটা স্মৃতির পাতা উল্টানো হয়।
আচ্ছা, কাগজের নৌকার কথা মনে পড়ে তোমার? আমি প্রথম যেদিন নৌকা বানানো শিখি—বাড়ির পাশের পুকুর, বাথরুমের বালতি সব নৌকা দিয়ে রঙিন করে ফেলেছিলাম। আর বৃষ্টি মানেই তো কাগজের নৌকা। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টিতে ভেজা, নৌকা ভাসানো ছিল সবচেয়ে মজার। আহা! কত সুখের দিনগুলো ছিল আমার।
ছোটবেলায় চাওয়া ছিল, কবে বড় হবো। কিন্তু এখন হাজার চাইলেও ছোট হতে পারবো না। বড় হতে হতে আজ আমি ক্লান্ত। হঠাৎ মাঝে মাঝে চেনা ক্লান্ত পাখির ডাক শুনলে, বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে
ছোটবেলায় সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম তেলাপোকাকে। অতটা ভয় ভূতকেও পেতাম না। আর ভয় পেতাম বজ্রপাতের শব্দ। ঝড়ের মধ্যে যখন আকাশে বজ্রপাতের প্রচণ্ড শব্দে মায়ের বুকে মাথা গুজে থাকতাম। মনে হতো, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
স্কুলের প্রথম দিনটা মনে পড়লে আজো হাসি পায়। আমি তো ভয়ে কেঁদে অস্থির, না জানি সেখানে কি হবে। স্যাররা নাকি বড় বড় বেত নিয়ে ঘুরেন, কিন্তু সেই স্কুলই এত প্রিয় আর মজার হয়ে উঠবে ভাবিনি। কোথায় যেন শুনেছি, স্কুল যে পালায়নি তার শৈশবটাই বৃথা। কিন্তু আমার স্কুল পালানোর কোনো রেকর্ড নেই। স্কুলের দিনগুলো কত মধুর ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, ঝগড়া, মারামারি এসব করতে করতে যখন একঘেয়েমি লাগতো তখন অপেক্ষা করতাম—কখন গ্রীষ্ম ছুটি হবে, শীতের ছুটি হবে। শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুরের রস আর চুলার পাশে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার স্বাদ কি আর ফিরে পাবো?
ছোটবেলায় চাওয়া ছিল, কবে বড় হবো। কিন্তু এখন হাজার চাইলেও ছোট হতে পারবো না। বড় হতে হতে আজ আমি ক্লান্ত। হঠাৎ মাঝে মাঝে চেনা ক্লান্ত পাখির ডাক শুনলে, বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। মনে হয়, পাখিটা যেন আমার মতোই ক্লান্ত। বড্ড বেশি ক্লান্ত।
পিডিএসও/মীর হেলাল