বুড়ি ধরিত্রীর বয়স কম নয়। খোঁজ করে প্রতিদিনের দিনের অনেক ঘটনা মনে করা যাবে। এর কোনোটা মনকে একেবারে মিইয়ে দিবে, কোনোটা উজ্জীবিত করার মতো। ঠিক আজকের দিনেরই (১০ নভেম্বর ’১৮) দুটি ঘটনার কথা স্মরণ করা যায়।

১. সকালে নির্বাচনের জন্য দলী মনোনয়নপত্র কেনার শোডাউনে দুইগ্রুপের সংঘর্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামীলীগের দুইজন নিহত; আর ২. সন্ধ্যায় ঢাকা লিট ফেস্টের ঘটনা। এই দ্বিতীয় প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে জানিয়ে রাখি, ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গায় থেকে, আজ আমার জন্মদিন; আর জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে, শহীদ নূর হোসেন দিবস আজ। স্মরণে থাক নূর হোসেনের নামের পাশ থেকে কেন যেন আড়ালে পড়ে যাওয়া আরেক শহীদের নাম—সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটো।

নূর হোসেন ‘স্বাধীন দেশে’ স্বৈরাচারের প্রতিরোধে জীবন দিয়েছেন। এখন আমরা মনে করি—আমরা গণতান্ত্রিক সময়ে বাস করছি। তাহলে এই দিনে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ পালনের মানে কি? মানে হলো, এ দেশেও স্বৈরাচার ছিল, তাই তার বিভিষীকা স্মরণে রাখা এবং স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারে, তাই তাকে প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকা। গণতান্ত্রিক সময়ে এটা পালন করা মানে, গণতন্ত্রের ভেতরও যে স্বৈরাচারের বীজ থাকে তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেয়া, প্রতিরোধ জারি রাখা। যেহেতু বলা হচ্ছে সময়টা গণতান্ত্রিক, তাই রাষ্ট্রে সুবিধা নিয়ে দেশে একটা বড় আয়োজন করতে গেলে তাকে ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ ব্যানার টাঙাতেই হয়। কিন্তু ওই ব্যানার টাঙানই সার। ওটা সবার জন্য উন্মুক্ত না। যেমন আজকের ঢাকা লিট ফেস্টে ‘কতিপয়’ তরুণদের প্রবেশ করতে না দেয়া। এটাই আজকের দ্বিতীয় ঘটনা।

(জাতির অন্যতম বিদ্যাপীঠ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি মোর থেকে (জাতীয় পাখি) দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির ভীড় ঠেলে (জাতির মনন ‘কেন্দ্র’) বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা লিট ফেস্টে যাওয়া চারটিখানি কথা নয়। কয়েকজন যুবক লুঙ্গি পড়ে ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ লিট ফেস্টে প্রবেশ করতে চাইলে ‘গণতান্ত্রিক’ পুলিশ তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি। কোনো কারণও দেখাতে পারেনি তারা। কেউ কেউ তাদের লুঙ্গির দেখে হেসেছে। একজন নিগৃহীতই তো জানে, নিপিড়কের প্রতিটি ইঙ্গিত-হাসির মানে।

তাহলে বলি, যদি দেশেটা ‘গণতান্ত্রিক’ই হয়, যদি লিট ফেস্ট ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ই হয়, তাহলে স্রেফ লুঙ্গি পরিধান করার ‘দায়ে’ তাদের প্রবেশ করতে না দেয়ার মানে কী? কথায় কথায় যদি জাতির পিতা দেখান হয়, এবং তাকে যদি বাঙালি জাতির পিতা হিসেবেই দাবি করা হয়, তাহলে বাঙালি সংস্কৃতিতে অনুমোদন করে এমন পোশককে বাইরে রাখার মানে কী? উত্তরটা আয়োজকরা দিতে পারেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ফেস্টে কোনো ড্রেস কোডই ছিল না। তারপরও এই আচরণ। কারণ এদেশের রাজনীতিতে পোশাকের ব্যবহার ও পোশাকের রাজনীতি দুই-ই ছিল। এমনকি রাজনীতিটাই তো পোশাকি ব্যাপার হয়ে গেছে। সেজন্য পোশাকের কারণে কেউ কেউ আক্রান্ত বা কারো কারো প্রবেশ রহিত হলে তা নিয়ে কথার ফুলঝুড়ি দেখা যায়, কিন্তু লুঙ্গি নিয়ে নয়। কেননা আমরা ব্যক্তির কথাই বলি, নীতির কথা বলি না। গত কয়েক বছরে দুইবার ওই লিট ফেস্টে যাওয়ার পর অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে, আমাদের মগজে কি করে যেন গেঁথে গেছে, আয়োজকরা আমাদের খাদের কিনারায় পড়া সাহিত্যকে উদ্ধার করছেন, বিশ্বে উপস্থিত করা বিশ্বাল ঠিকাদারি নিয়েছেন। তাই সুযোগ পেলেই একদল মানুষ উন্মত্তের মতো খালি বলছেন— অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না, দিতে হবে, আরো আরো দিতে হবে। কিন্তু এখানে বিশ্বমানেই ইউরোপ, আমেরিকা; এর বাইরে যেন দুনিয়া নেই। এমন কি নিজের দেশে বাংলা ভিন্ন অন্যভাষার সাহিত্যেরও খবর তাদের নেই। যেমন আফ্রিকার মতো বৃহৃদায়নের মহাদেশ মাত্র একটা দেশ মন হয় কারো কাছে। কী বোকা চিন্তা! ও দিকে ইউরোপিয়রা কিন্তু ভাল করেই জানে, আমাদের দেশে কি লেখা হয়, কি হয় না। যেখানে ঔপনিবেশিক শাসকদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য ঘাঁটা ছাড়া আমরা নতুন কোনো দর্শনই তৈরি করতে পারি নি, সেখানে কি হওয়া সম্ভব তা তারা ভাল করেই জানে। তাই আমাদের সাহিত্য নিয়ে তাদের কোনো উৎসাহ নেই। তারপরও বোধগম্য ভাষায় ইউরোপিয়দের কাছে উপস্থিত করলে আরো হাসাহাসি করবে—দেখো, দেখো, এখনো আমাদের বাঁধান ছাঁচে ঘোরপাক খাচ্ছে, আর আমাদের কাছে এসেছে দেখাতে, হা হা হা।

ইউরোপিয়রা প্রত্যক্ষ উপনিবেশের যুগে লুটপাটের পর উদাম ফেলে যাওয়ার সময় দেশে বাসিয়ে গিয়ে ছিল অনুগত শাসকদের। এখন ‘মুক্তবাজার’ ও ‘চিন্তার উপনিবেশের’ যুগ। কালে কালে সেদিনের ফেলে দেশগুলো এখন পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত ও লোভনীয় বাজারে। বস্তু পণ্যের মতো সাহিত্যও একটা পণ্য নিঃসন্দেহে। ফলে এই বাজার পুরনো প্রভুদের দরকার। যাতে করে বাজার ও চিন্তা—দুই-ই আয়ত্বে থাকে, এজন্য অনুগত শাসকের বাইরে তাদের চিন্তার প্রতিনিধি খুঁজে। পেয়েও যায়; যারা ঔপনিবেশিক প্রভুদের অনুকরণকেই উন্নতি ভাবে, তাদের আঙুল হেলন কে আশির্বাদ ভাবে, বিগলিত হয়। তাই প্রাক্তন প্রভুদের কোনো এক ইংরেজি পত্রিকায় একটা লেখা সংকলিত হলে হেসে কুটি কুটি হয়, একেবারে গড়িয়ে পড়ে।

ট্রয় নগরী আক্রমণের জন্য রাতের আধাঁরে সমুদ্রপাড়ে মশাল জ্বেলে নগরীর কয়েকজনই যেমন আক্রমণকারীদের সংকেত পাঠিয়েছিল, তেমনই সংকেত পাঠান হয় চিন্তা উপনিবেশিত দেশ থেকে, আনুগত্ব বোঝাতে গিয়ে। এতে খুশি হয়ে ও অনুগতদের সন্তুষ্ট করার জন্য এদেশের নিম্নমানের সাহিত্যকেও কখনো কখনো পুরস্কৃত করেন প্রভুরা। সেই খুশিতে প্রভু তোষণের দিন পালন করা হয়। ফ্রাঞ্চ ফেনন কথিত ‘ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্ক’-এর মতো, উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশে বছরের একটা দিন ‘কালো’রা প্রভুদের ‘সাদা’ মুখোশ পরে নিজেরা ‘সাদা’ হওয়ার চেষ্টা করে। এই ‘সাদা’ কিন্তু রং নয়, এটা হচ্ছে সেই বিখ্যাত বর্ণবাদী তত্ত্ব, ‘আপনি সাদা—কারণ আপনি ধনি; আপনি ধনি—তাই আপনি সাদা।’

এবার মিলিয়ে দেখুন তো, টিএসটি মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত গাড়ির ভীড় আর লুঙ্গি পড়ার অযুহাতে বাংলা একাডেমির ভেতর লিট ফেস্টে ঢুকতে না দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? গণতান্ত্রিক দেশ কি করে স্বৈরাচারের বীজবাহী অনুষ্ঠানকে সুরক্ষা দেয়। এই অনুষ্ঠানে ফিন্যান্স করার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভাব হয় না। তারও কারণ আছে। সেটা বরং আরো গুরুতর।

ধনীপাড়ার সবচেয়ে ‘দুর্ধর্ষ’ ঘটনা থেকেই এটা পড়া যায়। বছর তিনেক আগে হলি আর্টিজান-এ হামলার ঘটনাই স্মরণ করা যাক। ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী আইএসআইয়ের মদদ পুষ্ট কয়েকজন যুবকের সশস্ত্র হামলায় ২০ জন নিহত হয়। আক্রমণকারীরা প্রায় সবাই ধনী ও ক্ষমতাশালী পরিবারেরই সদস্য। এটা আসলে প্রকাশ ঘটিয়েছি ধর্ণাঢ্যপাড়ায় চিন্তার দেউলিয়াপনা। যখন সন্তানের পেছনে বিপুল অর্থ খরচ করে, ব্যয় বহুল প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে, দেশীয় আইনের উর্ধ্বে জীবন যাপনের পরও তাদের ভেতর চিন্তার, জ্ঞানের, আদর্শের কোনো কিছুই তৈরি হয়নি। কিন্তু মানুষ তো চিন্তাজাত প্রাণী। ফলে তাদের ভেতর যে ফাঁপা দিক তৈরি হয়ে ছিল ধর্মীয় উদ্রতা দিয়ে তার পূর্ণ করতে চেয়েছে। হলি আর্টিজান তারই বহিঃপ্রকাশ। তাই অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় তেমন কাউকে দেখা না গেলেও, ঠিকই তাদের দেখা যায় সন্তানকে হাত ধরে এনে ঢাকা লিট ফেস্টে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। বিস্তর টাকা দিয়ে উচ্চাঙ্গ সংগীত, ফোক ফেস্ট আয়োজন করা। যদিও ওই সব আরো রাজনীতি, অর্থনীতি আছে।

রাজনীতি আছে আপাত নধর শুনালেও এইসব সাহিত্য উৎসবের মধ্যে। যার একটা বড় প্রকাশ ওইসব যুবকদের লিট ফেস্টে ঢুকতে না দেওয়ার মধ্যেই আছে। আর আছে সাহিত্যে নিজেদের এলিটনেস বজায় রাখা। এটা নিয়ে তর্ক বহু হয়েছে। বিদেশী নামে আয়োজন বিতর্কের ফলে দেশি নামে আসতে হয়েছে। স্বগোত্রীয় অনেককে দিয়ে পত্রিকায় কলাম লিখিয়ে তা সহনশীল করতে হয়েছে। বলা হয়েছে, মাছের আশায় আমরা ঘরের ভেতরে পুকুর খুঁড়তে দেয়া উচিত। বোঝান হয়েছে, চিন্তায় বন্দী হও, পঙ্গু হও তাতে কি, প্রভুকে তো দেখলে, তাদের দেশে গেলে। কিন্তু ওই প্রভুর পয়গাম বোঝার জন্য প্রভুর দেশে যেতে হয় না।

প্রভুর অনুগতরা এ দেশেও আরেক ‘প্রভুর দুনিয়া’ তৈরি করেন। সেখানে তারা অধপতিত সাহিত্যের মধ্য থেকে নিজেদের অনুগত সাহিত্যিক তৈরি করেন। সেই যে বিদেশীরা যেমন, তাদের প্রতিনিধিদের নিজেদের প্রচার মাধ্যমে ঠাঁই দেন, তেমন তার অনুগতরাও নিজেদের প্রচার মাধ্যমে ব্যাক-আপ দিয়ে, পুরস্কার দিয়ে কাউকে কাউকে ‘জাতে’ তুলেন। তারপর তাদের তৈরির করেন নিজেদের ভাষ্যকার হিসেবে। আমরা মনে করি, ওই আয়োজন বুঝি নিরীহ, ভাষ্যকার মনে হয় আমাদেরই মতো সাধারণ। কিন্তু তা তো নয়, সেটা আয়োজন নিয়ে লেখা-তোষণের মধ্যেই প্রকাশ পায়। দেশীয় সাহিত্যকে বিশ্বে তুলের ধরার প্রকল্প এক অনির্দিষ্ট সুতায় ঝুলে থাকে, মাঝখান থেকে সাহিত্যের প্রতি মানুষের আবেগ-দরদটাকে কাজে লাগিয়ে গুটিকয়েক ধর্ণাঢ্যের সন্তানের সাহিত্যখ্যাতি জাহিরের পায়তারা ছাড়া তা কিছুই হয় না। ফলে ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ অনুষ্ঠানের ‘সবার’ প্রবেশাধিকার থাকে না। কারণ আমরা তো দৈনিকই দেখছি, পোশাকটা যে সবার এক না।

সুবিধা পাওয়ার আশায় ইউরোপ-আমেরিকার প্রভুরা যেমন অনুগতদের প্রশংসা করেন, তেমনি আমাদের দেশীয় প্রভুরা ঠিকই অনুগতদের প্রশংসা করে। ফলে তারা কেউ-ই আর খাদের কিনার থেকে উঠতে চায় না। শুধু একটাই চায়, প্রভুর মুখের ভাষা। ইউরোপের অনুগতরা যেমন নিজেদের লেখার ভাষা পুরোপুরি ইংরেজি করে নিয়েছে, তেমনি অনুগতদের অনুগতরা দেদার হাই তুলছেন আমাদের লেখা প্রচুর ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে। তাতে একটা পোশাকি আবরণ তৈরি হয় বটে, কিন্তু কাক তাড়ুয়া আর মানুষের শরীরের পড়ান পোশাক কখনোই এক হয়নি। কিন্তু কেউ-ই নিজেদের লেখা, চিন্তা উন্নত করার চেষ্টা করেন না। ফলে যারা লিট ফেস্টে আসেন, তাদের মুখের সব কথাই ইংরেজিতে হয় বটে, কিন্তু তারা ভাষার রাজনীতি, ভাষা উপনিবেশ বুঝেন না। এর ব্যতিক্রম ও স্বতন্ত্র প্রায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি চিন্তাকে উন্নত করতে পেরেছিলেন বলেই প্রবন্ধ লিখেন—চাকমা ভাষার উপন্যাস চাই। কে না জানে, মানুষ যত বেশি ভাষা জানবে, পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ, সংস্কৃতি ও চিন্তার আদান-প্রদানের সুযোগ তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ভাষা শেখার বিকল্প নাই। দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনাকে নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে নিয়ে, বোধগম্য করে নিয়ে তারা নিজস্ব চিন্তার প্রঙ্গণ বড় করছে। অথচ আমরা কেবলই অনুকরণ করে চলছি, যেন প্রভুরা কি তৈরি করেছে!

আমরা কেবলই ইংরেজি অক্ষরে নিজেদের লেখা দেখতে চাই, যেন আমরাই বা কী তৈরি করে ফেলেছি! চিন্তার কোনো উন্নতি নেই। লেখাগুলো পিছিয়ে পরা মানুষের অভিযোগ গাঁথা, আবেগের আতিশয্য আর নিজের কুপমণ্ডুকতার পিঠ চাপড়ে চর্বিত চর্বণ আর ক্লিশে সাহিত্য জন্মদিনে চলেছি। কোনো বদল নেই। তারই বলগাভরা প্রশংসা, এ-ওর প্রশংসা, পিঠ চাপড়ানি। আমরা সবাই জানি, বিশ্বে চিন্তা-দর্শনের বিবেচনায় যেসব সাহিত্য সমাদৃত হচ্ছে, প্রতিনিধিত্বশীল মনে করা হচ্ছে, তার তুলনায় বাংলা সাহিত্য কিচ্ছু হচ্ছে না। তবুও এঁদো পুকুর আটকে রেখে ব্যাঙের চাষাবাস। সমুদ্রের সংযোগ নেই। বাংলা সাহিত্য এই পর্যায় আসতে গিয়ে কত আবর্জনা-ময়লা গায়ে মেখেছে। এ সময় সমালোচনাহীন প্রতিটি কথাই অসসতা। তারপরও কোনো সমালোচনা নেই।

এই ধরনে ফেস্ট তো খুবই দরকার। দরকার নিজেদের মুক্তির পথ সন্ধানের জন্য, চিন্তার বৈচিত্র্য ও অগ্রগতি বোঝার জন্য। অথচ ফেস্টগুলো হচ্ছে ইংরেজিতে লেখা সাহিত্যের হিসিমনি তৈরির জন্য, গুটিকয়েকের প্রতাপ দেখানোর জায়গা। সেখানেই এই ফেস্টগুলোর ঝাড়িঝুড়ি ফাঁস হয়ে যায়। অথচ লিট ফেস্টে যেসব ছেলেদের বাইরে রেখে দেয়া হয়েছে, তাদের নিজস্ব চিন্তা করা ক্ষমতা আছে, তাই তারা ‘সবার’ বিষয়টি পরখ করে দেখতে গিয়েছে। গেটের ভেতর যারা প্রভুদের গাঁথা গেয়ে যাচ্ছে, এমনকি আয়োজকদের অনেককেই ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য শেখানোর মতো যোগ্যতা ওই ছেলেদের আছে। কিন্তু এই ছেলেদের স্বীকৃতি দেয়ার মতো বড়তা তো তাদের নেই। ‘বাকস্বাধীনতার শঙ্কা নিয়েই শুরু’ হওয়া ঢাকা লিট ফেস্টের অষ্টম আসর ‘বাকস্বাধীনতা’ হননের মধ্য দিয়েই শেষ হয়।

যখন দেখি ওই সব ছেলেরা ঘোষিত ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’কে পরখ যায়, ওরা আমাদের ‘গণতন্ত্রের’ ভেতর লুকিয়া থাকা ‘স্বৈরাচারের বীজ’কে দেখার তাগিদ তৈরি করে। ওরা যখন প্রশ্ন তুলে “লুঙ্গি কি নিষিদ্ধ পরিধেয় এই দেশে?” তখন তো ওদের পাশে না দাঁড়ানোর কোনো কারণ থাকে না। ওদের একজনের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টস থেকে মালুম পাই, ‘আরেক ফাল্গুনে’ ওরা দ্বিগুণ হবে।

বিমর্ষ হওয়ার মতো খবরের মধ্যে ওদের তৎপরতা আশা জাগানিয়া। ওদের জন্য আমার এই জন্মদিন উৎসর্গ করছি।

সূত্র : ছবি ও লেখা ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

পিডিএসও/অপূর্ব