সাজ্জাদ হোসেন, লেখক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

লুন্ঠতার আরেক নাম জুয়া

হাজারে কত নিবি? আজ বাজারদর কেমন? এই টিম দূর্বল, ছাড় খাবো কিংবা আজ দশটা লাগিয়েছি এমনিই সব সাংকেতিকপূর্ণ কথোপকথন চলে জুয়ারিদের মাঝে। আজ বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে জুয়ার প্রবণতা। শহরাঞ্চল থেকে গ্রামকেন্দ্রিক চলে গেছে এর দৌরাত্মের হার। বেছে নিচ্ছে অনেকেই এটাকে শখ হিসেবে কিংবা প্রধান পেশাজীবীকার প্রচ্ছায়ায়। কেউ কেউ একে টাকা লাগানো বলে থাকে। আবার অনেকেই একে "বাণিজ্যিক কর্মপ্রক্রিয়া" বলেও আখ্যায়িত করেন। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আছেন অনেক স্তরের মানুষ। বিশেষভাবে বর্তমান সমাজের প্রজ্বলিত তরুণদের মাঝেই এর প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বেশি। এছাড়াও রয়েছেন কর্মজীবী লোকদের মধ্যে শ্রমিক, দোকানদার, আবার বিভিন্ন মাত্রার ব্যবসায়ীমহলেও কম নয়।

বিশেষ করে ঘরোয়া যেসব লীগগুলো অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোয়। তাতেই জড়িত হয়ে পড়ছে তরুণরা ভাগ্যের চাকার উপর। আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোর খাতাতেও খুলে বসে বড় ধরনের হিসেব-নিকেশ। আইপিএল, বিপিএল, পিপিএল এর মতো আলাদা রকমের প্রিমিয়ার লীগগুলোকে ঘিরে ক্রমাগত অবিরাম চলে অসৎ অর্থের লোভে জুয়ার আসর। কখনো বা ওভার প্রতি, কখনো বল প্রতি, কখনো কখনো পাওয়ার প্লে তে কতটুকু রান সংখ্যা করবে, আবার অনেকে ম্যাচ প্রতিও বাজি ধরে।

কিন্তু সব থেকে বড় ঘাবড়ানোর ব্যাপারটা হলো, তরুণদের এসব বাজিমাতের অর্থের উৎসটার গোড়াপত্তনটা কোত্থেকে? কোথা থেকে আসছে কর্মখালি সেসব তরুণদের হাজারো নোটেরগোছা? সুশীল সমাজসেবকের এমন অদ্ভুত বিকট প্রশ্নের উদ্ভাসিত হয়েছে কিই না তা আমার জানা নেই। তবেঁ এটা যে বুদ্ধিভ্রষ্ট, নিরর্থক প্রসঙ্গ মনে করে এড়িয়ে চলেছে এতে আমার সন্দেহ খানিকটা অল্পই আছে। ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্যের এক বাসিন্দা বন্ধুর সঙ্গে জুয়া খেলতে নেমেছিলেন স্ত্রীকে বাজি রেখে। সেই জুয়া খেলতে গিয়ে হেরে যান তিনি। আর খেলার শর্ত হিসাবে স্ত্রীকে তুলে দেন জয়ী ব্যক্তির হাতে। সেই ব্যক্তি পরাজিতের স্ত্রীকে ধর্ষণও করেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। (সূত্রঃ দি বাংলাদেশ টুডে)। বাংলাদেশে এমন নজির থাকুক বা না থাকুক কিন্তু সমবর্তী অনুরুপ ঘৃণ্য এমন অনেক পদক্ষেপই নিচ্ছে সমাজের কতিপয় নবীনরা জুয়ার টাকার জোগানের জন্য।

এসএসসিবা এইচএসসি পাশ করে নিজ গ্রাম ছেড়ে শহরে পদার্পণ করে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে ঢের ছাত্ররা। শহুরের বিরুপ আবহাওয়ায় আসক্তিপূর্ণ বাড়তে থাকা ছেলেটি যখন অর্থালোভে পড়ে যায় জুয়া নামক এ নেশায়, তার পক্ষ্যে পরবর্তীতে এটাকে পরিত্যাগ করাটা অনেকটা সাপের মাথার মধ্যমণিটির মতোই ধারণ করে। নিজ রুমের ভাড়াটাও দিতেও দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে না তখন অত্যাধুনিক 'বেট' নামক কারবারে টাকা লাগাতে। বাবার পকেট থেকে চুরি, সেমিস্টার ফি, টিউশন ফি এর টাকা দিয়েও চলে ধুমধাড়াক্কা। আবার নিঃশেষ স্তরের জুয়ারিরা নিজ বাড়ির জিনিস বিক্রি করে তবেঁই ক্ষান্ত হয় এই অন্যরকম গেইম এ! তবে এসবের যে প্রতিফলিত অভিমুখ খুব একটা ভালো হয় তাও কিন্তু নয়। ক্ষতিগ্রস্তরা যখন ঋণের উত্তাল চাপের অভিমুখে পড়ে, তখন তাদের টনক নাড়া দেয়। প্রচ- মনস্তাত্ত্বিক পীড়ায় বেছে নেয় সমাধান হিসেবে একমাত্র আত্মহননের পথ। এছাড়াও অনেক যুবক আত্মগোপন করে স্বপরিবারের সদস্যদের কাছে, মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় নিজেই নিজেকে জিম্মি করে ।

জুয়ার কারবারের নিমিত্তে শুধু তরুণ নয়, আর্থিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে আতঙ্কিত হচ্ছে বহুল পরিবার। ভাগ্য বা অসৎ উপায় অবলম্বন নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আসতে পারলে হবে এ বাজি শব্দটির নিয়তির পরিবর্তন। এর জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে নানান মুখী অগ্রগমন। নিদৃষ্ট গোষ্ঠীগৃহের দ্বারাই সম্ভব, এ ধরনের গা ঢিলামি চিন্তা-উদ্বেগ থেকে বেরিয়ে এসে, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে যেতে হবে প্রতিবাদী ভাবনার উচ্চকণ্ঠে। সমাজের যেসব কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদেরও বাড়াতে হবে প্রতিকারের হাত।

এছাড়াও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠনগুলোয় ‘জুয়া’ বিরোধী লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে সমৃদ্ধকরণ করা যেতে পারে আরেকটি শাখার অথবা স্বতন্ত্র কোন সমিতির। ধর্মভীরুর বাধ তৈরি করতে পারেন বিজ্ঞ ধর্মবিদেরা। আস্থাশীল কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীদের। রাজনৈতিক দল বা সরকার শেকড় গড়ে উঠাতে পারে মুখরিত স্লোগান, প্ল্যাকার্ড কিংবা বাজি বিরোধী বিদ্রোহী ব্যানার। পক্ষান্তরে, এর অবরুদ্ধ তখনিই সম্ভব হবে না, যখন অভিভাবকেরা নির্ণয় করতে পারবে না একটি সচেতনকারী মস্তিষ্ক!

বিজয় হোউক বারংবার এ দেশের তরুণদের। বিতাড়িত হোউক সমাজ থেকে জুয়া নামক ধ্বংসের। বেঁচে থাকুক ধর্মভীরুতা। তাজা থাকুক "বিদ্রোহী কবিতার" উচ্চধ্বনিঃ

’‘''বল বীর-

বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি

ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া

খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর''!

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লুন্ঠতা,জুয়া
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close