টিপু সুলতান, ঢাবি শিক্ষার্থী

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভাবনা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি সামনে এগুতে পারে না। বলা হয়ে থাকে, যে জাতির কাছে শিক্ষা নেই, সেই জাতি সম্পদের দিক দিয়ে যতই ধনী হোক না কেন তারা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আবার অনেক জাতি রয়েছে যারা সম্পদের দিক থেকে অতটা ধনী না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষায় এগিয়ে থাকার বদৌলতে বিশ্ব দরবারে সর্বোচ্চ আসন দখল করে আছে। এতে বুঝা যায়, ধন-সম্পদের দিক দিয়ে একটি জাতি যেমনি হোক না কেন? ধনী কিংবা দরিদ্র, উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই সেই জাতিকে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

এবার আসা যাক আসল কথায়, শিক্ষাকে যেহেতু আমরা জাতির মেরুদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করছি তাহলে শিক্ষার্থীদেরকে আমরা তুলনা করতে পারি সেই মেরুদণ্ডের ধারক বা বাহক হিসেবে। এক্ষেত্রে জাতির মেরুদণ্ড বিনির্মাণে শিক্ষার্থীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে যারা মানুষের মাঝে এই শিক্ষাকে জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেন এই মহান কাজে ব্রতী শিক্ষকদেরকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। অর্থাৎ তারা মানুষকে যেভাবে গড়ে তুলবেন একটি জাতি সেভাবেই গড়ে উঠবে। জাতিকে তারা যা দিবেন, যতটুকু দিবেন, একটি জাতি তাই পাবে, ততটুকুই পাবে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, একটি জাতির উচ্চ সোপানে পৌঁছাতে যেমন শিক্ষার্থীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমনি শিক্ষকরাও অপরিহার্য। এখন এই যে, জাতির লক্ষ্য নির্ধারণে, বির্নিমাণে দুই দল (শিক্ষক-শিক্ষার্থী) গুরুত্বপূর্ণ কাণ্ডারি তাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক হচ্ছে পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্কগুলোর একটি। এই সম্পর্কে যেমন ভালোবাসা থাকে, আদর থাকে, অনুপ্রেরণা থাকে তেমনি এই সম্পর্কে রয়েছে শাসন-অনুরাগ। কোনো ছাত্র যখন প্রকৃত পথ থেকে বিচ্যূত হয়ে যায় তখন শিক্ষকই তাকে সেই পথে ফিরিয়ে আনবেন, নতুন পথের সন্ধান দেন। সম্মান, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, অনুরাগ সবকিছুই রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে। একজন শিক্ষক যেমন ছাত্রকে নিজ সন্তানের মতো ভেবে জীবন দর্শন শিক্ষা দেন, তেমনি ছাত্রও সেই শিক্ষা নত শিরে গ্রহণ করেন। একজন ছাত্র যেমন শিক্ষককে দেবতা তুল্য মনে করেন, সম্মান করেন তেমনি শিক্ষকও ছাত্রদেরকে অতি আপনজন ভাবেন, ছাত্রের জীবন গড়ায় অপরিহার্য ভূমিকা রাখেন।

ছাত্র-শিক্ষকের এই সম্পর্কের মধ্য দিয়েই শিক্ষক ছাত্রদেরকে প্রকৃত শিক্ষাদান করতে পারেন, ছাত্ররাও প্রকৃত শিক্ষা নিতে পারে। তখনই জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। সকলক্ষেত্রে বিজয় অর্জন করতে, সাফল্য পেতে পারে। যতদিন এই সম্পর্ক অটুট থাকবে ততদিন শিক্ষার যে মহৎ উদ্দেশ্য তা অর্জিত হবে, জাতি সামনে এগিয়ে যাবে। এর বাস্তব প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করি আমাদের দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে, সংকটজনক মুহূর্তে। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন পর্বে বিশেষ করে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-র মুক্তিযুদ্ধ ও '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের যে মেধা, ত্যাগ, দূরদৃষ্টি, গভীর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ আমরা লক্ষ্য করেছি তা বিশ্বসভায় আজও উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ ও উন্নত আদর্শিক চেতনার দ্যোতক হিসেবে সমাদৃত হয়ে আছে।

আমাদের দেশের ছাত্রদের যে নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শ আজও বিশ্বদরবারর সম্মানের জায়গা দখল করে আছে এসব গড়নে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রণোদনা ও সমর্থন ছিল শিক্ষকদের। শুধু তাই নয়, ছাত্র আন্দোলনের জোয়ার যখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মসনদকে কাঁপিয়ে তুলেছিল, ঠিক এমনই মুহূর্তে আন্দোলনরত ছাত্রদের কাতারে দাঁড়িয়ে ড. শামসুজ্জোহার বীরোচিত আত্মত্যাগ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের সূচনা করে। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ ও ২০০৭ সালেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষক সমাজের সক্রিয় সমর্থন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের গৌরবময় অধ্যায় হয়ে আছে।

সুতরাং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক যে কেবল জ্ঞানদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয় বরং এ সম্পর্ক আরো অনেক গভীরে, যেখানে শিক্ষাদানের পাশাপাশি রয়েছে জীবনবোধ, মূল্যবোধ, নৈতিকতাবোধ ও আদর্শের এক ঘনিষ্ঠ সংস্রব। তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘শিক্ষার মধ্যে এমন একটা সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়; যা কেবল ইন্ধন দেয় না অগ্নি দেয়।’ তাই শিক্ষাকার্যক্রম কীভাবে আরো ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব করা যায় সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে, তবেই জাতি শিক্ষার পূর্ণতা পাবে, উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিক্ষক-শিক্ষার্থী,ভাবনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close