প্রতীক ইজাজ

  ২৭ আগস্ট, ২০১৮

‘বিচ্ছিন্ন হতে ভালো লাগে না আমার’

ঢাকা ছাড়তে যেমন কষ্ট হয়; তেমনি ঢাকায় ফিরতেও কষ্ট হয়। ঈদ কিংবা পূজাপার্বণ সবগুলো উৎসবেই ভিন্ন অনুভূতি হয় আমার। বাড়ি আমাকে টানে। আমার গ্রাম আমাকে টানে। আমি টানি ওদের। পরিবারের স্বজনরা যখন সজল চোখ নিয়ে বিদায় জানায়, আমি পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে যাই। চোখ মুখ কথা বলে না। কেবল বুকের ভেতরটায় ঝড় বয়ে যায়।

এই যেমন এবার। মিথুন এসেছে আমেরিকা থেকে। দেখা করবে পুরনোদের সঙ্গে। পুরনো মানে আমরা যারা একদিন এক ধরণের অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু করেছিলাম আবৃত্তিচর্চা। বসার জায়গা ছিল না। সমর্থন ছিল না। কিন্তু আমরা সংঘবদ্ধ ছিলাম। সংহতি ছিল। ভালোবাসা আবেগ ছিল। প্রায় ২০ বছর পর সেই আমরা আবার একত্রিত হলাম। বুঝলাম, আবেগ যদি গভীর হয়, ভালোবাসায় মায়ায় টানে যদি আগুন থাকে, সংহতি বাড়ে। সংবদ্ধতা বাড়ে। আমরা বুকের ভেতর পাহাড়সম ভালোবাসা নিয়ে এবার উদযাপন করলাম এক অভিভুত ঈদ উৎসব।

সম্পর্কের এসব সমীকরণকে আমি ‘মায়া’ বলি। এই মায়া আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। এখনো ভোগাচ্ছে। হয়তো ভুগতে হবে অন্তহীন, যতদিন বেঁচে আছি। মায়া আমাকে ছাড়ে না। আমিও না। মায়ার পিছু পিছুই তো এতদূর, এত পরবাস, এত অচেনাকে চেনা করে তোলা।

বাসস্টপে চলতে শুরু করা গাড়ির জানলা গলে আমার চোখ কেবলই স্বজনকে খোঁজে। এই আকুতি, আকুলি-বিকুলি সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। এখনো। বাস চলে। আমি চলি না। বাস শব্দ করে। আমি নৈঃশব্দে ভাসি। যতদূর চোখ, দেখা যায়, আমি তাকিয়ে থাকি বাসস্টপে আসা ছোট ভাইটার জন্য। সহযাত্রীদের চোখ আমাকে খোঁজে। আমি খুঁজি বন্ধন, ভালোবাসা, টান।

আহা! মায়া। চোখে জল ঝরা মায়া। বুকের ভেতর শো শো শব্দে বয়ে যাওয়া মায়া। আমার লক্ষ্মীমন্ত মায়া। তুমি ভালো থেকো। জল-কান্না, হাসি-আনন্দ, শোক-তাপ, তোমাকে দিলাম। তুমি আমাকে বেঁধে রেখো মায়ায় মায়ায়, স্বজনে স্বজনে, অভাব অনটনে একসঙ্গে, এক সিথানে। বিচ্ছিন্ন হতে আমার ভালো লাগে না।

লেখক : সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদ উদযাপন,সম্পর্ক,প্রতীক ইজাজ,স্বজন,মায়া
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close