জাহিদ হাসান, ঢাবি শিক্ষার্থী

  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

শিক্ষক নিবন্ধন : ১ আবেদনে নিম্নে ৫ প্রতিষ্ঠানে চয়েজের ব্যবস্থা করা হোক

কী দিনই-না এসেছে! এখন নাকি উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ শ্রমশক্তি জরিপ এ কথাই বলছে। বোঝাই যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষিত তরুণদের এখন বড্ড অকাল যাচ্ছে। পড়ালেখা শেষে তারা কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু কাজ মিলছে না। বসে থাকতে হচ্ছে। এমনকি নিজেদের সামান্যতম প্রয়োজন মেটাবার জন্যও হাত পাততে হচ্ছে পরিবারের কাছে। কিন্তু এখন কি আর সে বয়স আছে পরিবারের কাছে হাত পাতবার? তাহলে কী করার? সরকারি চাকুরীতে যোগদান? আরে বাবা সেটা তো অনেক আগেই হয়েছে সোনার হরিণ। এ চাকরি বাগাতে হলে লাগে কারিকারি টাকা আর মামা,খালু। ঠিক আছে তাহলে প্রাইভেট জবে ঢোকা যাক! না এ পথও তো কম বন্ধুর নয়?

প্লেন বিএ/এমএতে হবেনা লাগবে এমবিএ ডিগ্রি। সে কি করে সম্ভব? যেখানে নিজের হাত খরচ চালাতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! সেখানে আবার লক্ষ টাকার এমবিএ সার্টিফিকেট? ঠিক আছে তাহলে নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাক। কিন্তু এখানকার অবস্থাও বেশ একটা সুখকর নয়, প্রতিটি পোষ্টে আবেদন করতে লাগে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ সহকারি শিক্ষক এবং লেকচারার পদে আবেদন করতে একজন শিক্ষার্থীকে গুনতে হয় ৭০০ টাকা। এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালে ১ম নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়, যা ২০১৬ সালে এসে ১৩ তম পর্যন্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৮৬ জন। প্রতি পরীক্ষার্থীকে আবেদন বাবদ জমা দিতে হয় ৩৫০ টাকা তাহলে মোট টাকা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩ শত ২৯ কোটি ৫ লক্ষ ৫ হাজার ১ শত টাকা। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা কত জনকে নিয়োগ দিতে পেরেছে তা কারোরই অজানা নেই। এ তো গেল কেবল আবেদনের ব্যাপার।

লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সার্টিফিকেট পেয়ে চাকরি পাওয়ার জন্য নন গর্ভনমেন্ট টির্চাস রেজিস্ট্রেশন এন্ড সার্টিফিকেশন অথরিটি (এনটিআরসিএ) আবার যে উদ্ভট নিয়ম চালু রেখেছে তা যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। এই পদ্ধতির নাম হলো ই-রিকুইজিশন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত নিবন্ধনধারীদেরকে আবার চাকরির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে প্রতিষ্ঠান জয়েজ দিতে হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য একজন চাকরি প্রার্থীকে টেলিটক সিমের মাধ্যমে জমা দিতে হয় ১৮০ টাকা। এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে বলা হয় একজন প্রার্থী যত খুশি তত প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। গত ০৬/০৬/২০১৬ তারিখে এনটিআরসিএ চাহিত ই-রিকুইজিশনে দেখা গেছে একজন চাকরি প্রার্থী সর্বমোট ৪০টি প্রতিষ্ঠানে (১৮০ গুণিতক ৪০=৭২০০ টাকা) চয়েস বাবদ খরচ করেও চাকরির নাগাল পাইনি। এনটিআরসিএর এহেন নীতি কী শিক্ষিত বেকারদের রক্ত চোষার শামিল নয়? শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে এনটিআরসিএর অনলাইন সফটওয়্যারগত ত্রুটির কারণে দেখা গেছে একই প্রার্থী বহু প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য মনোনীত হলেও বহু প্রার্থী অনেক চয়েস দিয়েও চাকরির জন্য মনোনীত হতে পারেনি। আগত ই-রিকুইজিশনে এ সমস্যা সমাধানে এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আগে একজন চাকরিপ্রার্থী একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে মেধা অনুযায়ী একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হতেন। এতে অনেক চাকরিপ্রার্থী কোথাও নিয়োগের সুপারিশ না পেয়ে বেকার থাকতেন। কিন্তু নতুন প্রক্রিয়ায় একজন চাকরিপ্রার্থী একাধিক আবেদন করলেও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে।

এনটিআরসিএর এমন ঘোষণাকে নিবন্ধনধারীরা সাধুবাদ জানালেও উদ্ভট ই-রিকুইজিশন পদ্ধতি নিয়ে তাদের রয়েছে ঘোর আপত্তি। সার্টিফিকেট অর্জন করে চাকরি পাবার অপেক্ষায় বসে থাকা ১-১৩ তম সকল নিবন্ধনধারীদের প্রাণের দাবি প্রতিষ্ঠান চয়েজে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা হোক। ১ আবেদনে নিম্নে ৫ প্রতিষ্ঠানে চয়েজের ব্যবস্থা করা হোক। তাদের এ দাবিকে অযৌক্তিক মনে করার কিছু নেই। এ দাবির যৌক্তিকতা ইতিমধ্যে দেখিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসএসসি পাশ করার পর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে চলমান রয়েছে এই চয়েজ পদ্ধতি। যাতে একজন প্রার্থী টেলিটক সীমের মাধ্যমে ১৫০ টাকায় সর্বোচ্চ ১০ টি কলেজে ভর্তির জন্য চয়েজ দিতে পারেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিণির্মানে অগ্রনী ভুমিকা পালনকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সকল নিবন্ধধারীদের পক্ষ থেকে কড়জোড়ে আবেদন নিবন্ধধারীদের এই প্রতিষ্ঠান জয়েজের ক্ষেত্রেও আপনি ১ আবেদনে নি¤েœ ৫ প্রতিষ্ঠানে চয়েজের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিন। তাহলে অন্তত হয়রানীর পাশাপাশি আর্থিক সংকটের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবে এ শিক্ষিত বেকার যুব সমাজ।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিক্ষক নিবন্ধন,আবেদন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close