জাহিদ হাসান, ঢাবি শিক্ষার্থী

  ১৪ আগস্ট, ২০১৮

ঢাকা এখন যেন এক অন্য নগরী

সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা একযোগে এ দুর্ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে তারা শেষ পর্যন্ত রাজপথে নেমে আসার পাশপাশি সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরে। তাদের এ দাবিকে সাধারণ মানুুষের পাশাপাশি সরকারের অনেক মন্ত্রী ও নেতারাও যৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে আপামর জনসাধারণের কাছে আরো বেশি যৌক্তিক করে তুলতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। জনগণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ কর্মকাণ্ডটিকেও সর্বোতভাবে স্বাগত জানায়।

ছাত্রদের তদারকিতে গত কয়েকদিনে সড়ক পরিবহনের যে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে, তা দেশের মানুষের জানা তো দুরে থাক কল্পনা করাও কঠিন ছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থী কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার পর দেখা গেছে, অসংখ্য বেসরকারি যানবাহনের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহনেরও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরোনোর মত অবস্থা। শিক্ষার্থীদের এ অভিযানের পরই যানবাহনের মালিক ও চালকদের মধ্যে বৈধ কাগজপত্র তৈরির সচেতনতা সৃষ্টি হল আকাশসম। তারই ধারাবাহিকতায় বিআরটিএ অফিসে বাড়তে থাকল ভিড়। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ লক্ষণ বলা যায়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জাগ্রত করেছে চালক-মালিক পক্ষের ঘুণেধরা বিবেককে। যার দরুণ বেড়েছে তাদের আত্মসচেতনতা ও দায়িত্ববোধ। এতদিন প্রশাসন থেকে শুরু করে এমপি মন্ত্রীদের শত চেষ্টাও নাড়াতে পারেনি তাদের ঘুনেধরা বিবেককে। অবশেষে তাদের বিবেকের বন্ধ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলন। গত সপ্তাহজুড়ে লাইসেন্সবিহীন চালক ও গাড়ি সড়কে নয়, শিক্ষার্থীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন ও চালকের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য মালিক ও চালকরা এখন ভিড় করছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ)। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ভিড় বেড়েছে। আর গত দু-তিন দিনে প্রতিদিন লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বৈধ ডকুমেন্ট তৈরির আবেদন পড়েছে কয়েক শ' গুণ বেশি।

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এটিকে একটি বিরাট সাফল্য বলে উল্লেখ করেছে। এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে, ভ্রাম্যমাণ আদালত, ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা সত্ত্বেও সড়কে শৃঙ্খলা না আসার পেছনে চালকগনের ইচ্ছার ঘাটতিও রয়েছে অনেকাংশে। কারণ, যিনি গাড়ি চালান দায়িত্বটা তার নিজের। তিনি নিজে শৃঙ্খলা না রাখলে আইন দিয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা দুরূহ। তবে যে যাই বলুক, আমরা আশা করব শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দেশের সু-নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের যে দায়বোধ জাগ্রত হয়েছে, তা কোনোভাবেই যেন লুপ্ত না হয়। তাছাড়া, যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন ও চালকের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য মালিক ও চালকরা যেভাবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) এখন ভিড় করছেন এ ভিড়ের ভিড়ে যেন বিবেক না হারায় বিআরটিএর কর্মকর্তা, প্রশাসন বা মন্ত্রী এমপিদের। কোনও পক্ষই যেন সামান্য উৎকোচ বা দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স না তুলে দেয়। এবং ফিটনেসবিহীন গাড়িকেও যেন কোনও প্রভাবশালী মন্ত্রীর ফোনে পূর্ণাঙ্গ ফিট না বানায়। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলকে নিজেদের দায়িত্বের প্রতি সচেতন হতে অনুরোধ করছি। আর বর্তমানে রাজধানীর সড়কে যে ফিটনেসবিহীন গাড়ীর অনুপস্থিতি এবং অযোগ্য চালকের খড়া চলছে এ যেন স্বপ্নের এক অন্য নগরী অবলোকন করছে রাজধানীবাসী। রাজধানীসহ সারাদেশে চলমান থাকুক এই অবস্থা। তাহলে সব বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করে আমরা একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। এতে করে রাজপথ যেমন শঙ্কামুক্ত হবে, তেমনি মানুষের জীবনযাত্রাও হবে নির্বিঘ্ন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা,অন্য নগরী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close