তহিদুল ইসলাম, জাবি শিক্ষার্থী

  ১৩ আগস্ট, ২০১৮

জাহাঙ্গীরনগরই যেন এক ‘বিশ্ব’!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি খ্যাত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সৌন্দর্য্যরে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। এজন্যই তো প্রতিদিন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভিড় জমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার শিক্ষার্থীদের দাবি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সুন্দরতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কেউ কেউ তো একধাপ এগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় বলেও দাবি করেন। তবে শুধু শিক্ষার্থী কিংবা আশেপাশের মানুষ কেন- এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ প্রাণীকুলও। আর তাইতো শীতের মৌসুম শুরু হতেই সাইবেরিয়াসহ দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমে অতিথি পাখির। তবে শুধু সৌন্দর্য্য নয়, আরো কিছু কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোচিত। এই যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়ে থাকে। বছর জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে নানান আয়োজন। শীতের মৌসুমে আয়োজিত হয় জমকালো কনসার্ট। যা উপভোগ করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখানে এসে থাকেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বেশ কিছু স্থানের বিচিত্র সব নাম রয়েছে যা নিয়েও কম আলোচনা হয় না। এসব নাম দপ্তরে লিপিবদ্ধ নয়। তবে স্থানের সাথে নামের যৌক্তিকতাও কিন্তু বেশ। কিছু বুঝতে পারছেন না তো? চলুন আজ সেসব বিচিত্র নাম নিয়েই হোক আলোচনা-

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডঃ নাম শুনে ভাবছেন জাহাঙ্গীরনগর নিয়ে আলোচনায় সুইজারল্যান্ডকে টানছি কেন? আপনাকে আর একটু অবাক করে দিয়ে বলতে হয়- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আছে এক টুকরো সুইজারল্যান্ড। শিক্ষার্থীরা হয়তো সুইজারল্যান্ডের সাথে স্থানটির মিল খুঁজে পেয়েছেন। তা না হলে এত এত নাম থাকতে সুইজারল্যান্ড নাম রাখবেন কেন। কে বা কারা নাম দিয়েছে তা জানা যায় না। তবে যে বা যারা দিক, নামের স্বার্থকতা রেখেই আপনাকে মুগ্ধ করতে প্রস্তুত সুইজারল্যান্ড। এই জায়গাটার অবস্থান মওলানা ভাসানী হলের দক্ষিণ পাশে। সড়ক ছেড়ে এই জায়গায় প্রবেশ করলে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। সবুজ ঘাসের চাঁদরে ঢাকা উঁচু-নিচুঁ ভূখণ্ডটি দেখতে অনেকটা সুইজারল্যান্ডের গো-চারণ ভূমির মতো। এর তিন দিকে লেক। লেকের পাশে গাছের সারি স্থানটিকে একেক ঋতুতে দেয় একেক রূপ।

মনপুরা দ্বীপ

ময়না দ্বীপঃ মানিক বন্দোপাধ্যয়ের বিখ্যাত উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝিতে হোসেন মিয়ার ময়না দ্বীপের কথা মনে আছে? চারিদিকে শুনসান নিরবতা। জন মানবের চিহ্ন নেই। যেখানে বসতি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন হোসেন মিয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এরকম জনবসতিহীন কোনও দ্বীপের সন্ধান পেয়েছেন? সম্ভবত পেয়েছেন। তা না হলে বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন লেকের অপর পাড়ের গাছপালা বেষ্টিত দ্বীপের মতো স্থানটিকে তারা ময়না দ্বীপ বলবেন কেন। কে বা কারা নাম টি দিয়েছেন তা জানা যায় না। তবে এটা ধারণা করা যায়, যখন নামটির সূচনা হয়েছিল তখন স্থানটিতে কোনও বসতি ছিল না।

টারজান পয়েন্ট টারজান পয়েন্টঃ ‘টারজান অফ দ্য এইপস’ উপন্যাসের আলোচিত চরিত্র টারজানের কথা মনে আছে? পূর্ব আফ্রিকার ঘন জঙ্গলে জন্মের পর বন্য প্রাণিরা যাকে বড় করে তোলে। কাল্পনিক এই চরিত্রটির কথা হয়তো আপনাদের কারো অজানা নয়। অনেকেই টারজানকে নিয়ে নির্মিত অনেক সিনেমাও দেখে থাকবেন। চলুন না কাল্পনিক এই চরিত্রটি নিয়ে আমরাও একটু কল্পনায় হারাই। ধরুন, টারজান জাহাঙ্গীরনগরে আসলেন। এসে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের পূর্ব পাশের একটি দোকানে গিয়ে ক্যাম্পাসের কাঁচা আম দিয়ে তৈরি শরবত খেয়ে আবার পূর্ব আফ্রিকায় ফিরে গেলেন! তারপর শিক্ষার্থীরা টারজানের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে স্থানটির নাম দিলেন ‘টারজান পয়েন্ট’। কী? অদ্ভূত লাগছে তাই না? আসলে বাস্তবে এমনটা না ঘটলেও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের পূর্ব পাশে ঘন জঙ্গল আচ্ছাদিত একটি স্থানকে ‘টারজান পয়েন্ট’ নামকরণ করা হয়েছে। কেন এমন নামকরণ করা হয়েছে তা অবশ্য আমাদের জানা নেই। তবে স্থানটির দুই পাশ ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত। কে জানে এমন ঘন জঙ্গলের কারণে হয়তো টারজানকে কল্পনা করে শিক্ষার্থীরা এটাকে টারজান পয়েন্ট নাম দিয়েছেন।

মুরগি চত্বর মুরগি চত্বরঃ ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’ এই ধাঁধার সমাধান বিজ্ঞজনেরা আজো দিতে পারেনি। এই ধাঁধার মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস আর বাস আগে নাকি ক্যাম্পাস আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ৫ বছর কাটিয়ে দেন, তবু ধাঁধার উত্তর মেলাতে পারেন না। তাদের এই ‘কনফিউজড’ মুখের দিকে তাকালে কি মুরগির অস্তিত্ব খুঁজে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীরা? সে প্রশ্নের উত্তর হয়তো তারাই ভালো দিতে পারবেন। আমরা বরং সে প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে পাঠকদেরকে জায়গাটির অবস্থান জানিয়ে দিই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের পশ্চিম দিকের একটি জায়গার নাম মুরগি চত্বর। যেখান থেকে ঢাকাগামী শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ছেড়ে যায়। বাকিটা আপনারাই বুঝে নিন।

রাঙ্গামাটিঃ রাঙ্গামাটি নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজ বৃক্ষের সাথে সাদা মেঘের মিতালী। যেখানে পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জল ধারা। এমন দৃশ্য যেকোন প্রকৃতি প্রেমীকে আকৃষ্ট করবে। তবে এমন উঁচু নিচুঁ পাহাড় না থাকলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে এক খণ্ড রাঙ্গামাটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক বরাবর উত্তর দিকে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ পেরোলেই চোখে পড়বে সামান্য উঁচুতে অবস্থিত লাল মাটির ভূখণ্ড। ক্যাম্পাসবাসীরা এটাকেই রাঙ্গামাটি নামে ডেকে থাকেন।

লন্ডন ব্রিজ

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে লন্ডন ব্রিজ, মনপুরা দ্বীপ, বৃন্দাবন, লাভ ল্যান্ড প্রভৃতি স্থানের বিচিত্র সব নাম রয়েছে। তবে এসব নামের কোন দাপ্তরিক ভিত্তি নেই। আর কে বা কারা, কখন এসব স্থানের নামকরণ করেছেন সে সম্পর্কেও তেমন কোন তথ্য জানা যায় না।

ছবি তুলেছেন: তহিদুল ইসলাম ও রুদ্র আজাদ

পিডিএসও/রিহাব

প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন এই বিভাগে। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। প্রকাশ করুন নিজের প্রতিভা। হতে পারেন লেখক অথবা মুক্ত সাংবাদিক। বিচিত্র, জীবন -যেমন, ভ্রমণ, ফ্যাশন, শিল্প-সাহিত্য, সমসাময়িক বিষয় কিংবা ক্যাম্পাস বিষয়ক যেকোনো লেখা সর্বোচ্চ ১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে আপনার নিজের ছবি এবং যে বিষয় নিয়ে লেখা তার ছবি (যদি থাকে)সহ মেইল করুন। [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাহাঙ্গীরনগর,বিশ্ব
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close