মাহবুবুর রশিদ

  ২৬ জুলাই, ২০১৮

যেখানে বাঘ আটকের মেলা বসে

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় স্থান সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া। প্রকৃতির লীলাভূমি মহান আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি পাহাড়, ছড়া, নদী, চা বাগান সবই আছে এখানে। সরকারি অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিলে লোভাছড়া হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। অপূর্ব শোভায় শোভিত কানাইঘাটের লোভাছড়ার অবস্থান সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত।

সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল-দরবস্ত রোড, জকিগঞ্জ শাহবাগ রোড অথবা গাজী বুরহান উদ্দিন সড়ক হয়েও কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। সীমান্তকে ঘিরে রেখেছে খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া পাহাড়। এর পাদদেশে অবস্থিত অসংখ্য টিলা, মণিপুরী টিলা, মিকিরপাড়া, লুহাজুড়িসহ অসংখ্য টিলার অবস্থান লোভাছড়া এলাকায়। আবার এসব টিলার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বা ছড়া পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। এর মধ্যে লোভা, নুনগাং, কালিজুড়ি, সুরই, সিংগাইর, নাপিতখাল অন্যতম।

নদী দিয়ে দিয়ে উজান বেয়ে পাহাড়মুখী উপরদিকে উঠলে এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবার চোখে ভাসবে। এসব আঁকাবাঁকা নদীর দু’পাশে শত শত জাতের গাছপালা আর বনজফুল-ফলে শোভিত টিলার বন-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নৌকায় চড়ে উঠলে এক অপরূপ মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয়।

কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নে অবস্থিত লোভাছড়া চা বাগান, লোভা পাথর কোয়ারি, বালুমহাল, বনায়ন প্রকল্প, রিজার্ভ ফিসারি ও লোভা নদী তীর ঘেঁষা এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উজ্জল সম্ভাবনা। এই প্রাচীন এলাকাটিতে রয়েছে উপভোগ করার মত বেশ কিছু দৃশ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে ঝর্ণা লেক। যা দেখলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই এলাকায় রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। আর তাতে শত শত শ্রমিক আপন মনে কচি কচি পাতা তুলে নেয়। লোভাছড়া চা বাগানে প্রচুর লিচু, আম, কাঠাল, সুপারি, তেজপাতা, পান, কামরাঙ্গা প্রভৃতি জন্মে।

১৯২৫ সালে ইংরেজদের নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ আছে। আছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি গাঁথা শহীদ মিনার। চা বাগানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়িয়া খরস্রোতা লোভা নদী। পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি লোভা এলাকায় পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌরভ-সম্ভার মানুষকে ভাবিয়ে তুলে। যা লেখার নয় দেখার। উপলব্ধি ও উপভোগ করার। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জোনাকী পোকার মতই ভারতের বিজলী বাতিগুলো জ্বলে উঠে। চাঁদনীরাতে নবরূপ যৌবনে ভরে উঠে লোভা নদী। সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লোভাছড়া এলাকা সম্পদেও সমৃদ্ধ। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পাথর কোয়ারি থেকে আহরিত হয়। প্রায় সারা বৎসরই পাথর, বালু আহরিত হয় এখান থেকে। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে অতীতে অসংখ্য বানর, শুকর, হাতি, বাঘ ইত্যাদি প্রাণী এখানকার লোকালয়ে নেমে আসত।

এখনো শরৎ হেমন্তকালে বাঘ নামে। মূলাগুল, বড়বন্দ, সুরইঘাট, কালিনগর, নিহালপুর ইত্যাদি পাহাড়ী এলাকার গ্রামগুলোতে বাঘ নামলে লোকজন সুকৌশলে বাঘের অবস্থানের বন, টিলা, ঘিরে জাল দিয়ে বাঘকে আটকে রাখে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার,হাজার লোক বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঘ দেখতে এসে ভীড় জমায়। আনন্দ করে মেলা বসায়। কোনও কোনও সময় ৭/৮ দিন এ মেলা চলে। স্থানীয় লোকজন এ আনন্দ মেলাকে বাঘ খেওড় বলে। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে যে দু’টি নদীর উৎপত্তি তার নাম লোভা ও সারী। লোভা নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ নীল রংয়ের। নদীটি খরস্রোতা। ৫/৭ ফুট নিচে অবস্থানরত মাছের চলাফেরা খালি চোখে পরিষ্কার দেখা যায়। নদীর মুখে ভারত সীমানা সংলগ্ন স্থানে বিরাট পাথর কোয়ারি আছে। হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নৌকা দিয়ে প্রতিদিন এ কোয়ারি থেকে পাথর আহরণ করে। সারা বছরই কম-বেশি পাথর আহরিত হয়। শত শত কার্গো, ট্রলার, ষ্টীমার, ট্রাকযোগে প্রতিনিয়ত এসব পাথর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে।

কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লোভাছড়া এলাকায় আজও যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়নি। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে সুরমা নদী দিয়ে নৌকায় লোভাছড়ায় লোকজন যাতায়াত করে। এতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে কানাইঘাট বাজার থেকে লোভাছড়ায় (রিজার্ভ করে) ২০০০-৩০০০টাকা খরচ পড়ে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লোভাছড়াকে পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ আছে। এখানের পাথর, টিলা, নদী ইত্যাদি প্রকৃতির সৃষ্ট অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকগণ বেড়াতে আসে।

যদি সত্যিই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান হিসেবে পরিণত করা যায় তাহলে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত অনেক পর্যটন কেন্দ্রের চেয়েও অধিকতর আকর্ষণীয় হবে- এ নৈসর্গিক দৃশ্যের ভ্রমণ স্থান কানাইঘাটের লোভাছড়া। লোভাছড়া এলাকার সম্ভাবনাময় র্পযটন এলাকাকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে লোভাছড়া ট্যুরিষ্ট ক্লাব নামে একটি সংগঠন। এখানকার যে কোনও তথ্য আদান-প্রদান এবং সীমান্ত এলাকার সৌর্ন্দযমণ্ডিত দর্শনীয় স্থানের পরিচয় তুলে ধরার জন্য এ সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। লোভাছড়া এলাকায় আপনার ভ্রমণকে আনন্দ উপভোগ করার জন্য প্রয়োজনে এ সংগঠনটির সাহায্য নিতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন, ০১৭২৭-৬৬৭৭২০ অথবা ০১৭৩১-৯৮৩৫৩৮ নাম্বারে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঘ,আটক,মেলা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist