নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জুন, ২০১৭

আষাঢ়ের শুরুতেই পানির নিচে ঢাকা

‘ভাই ছবি না তুলে নৌকা পাঠান’

বিরামহীন বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ চিত্র গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের। এ অবস্থায় অফিসে যেতে আসতে লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে, বৃষ্টিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক দেখে বোঝা উপায় নেই সেটা রাজপথ নাকি নৌপথ। এ সুযোগে ভ্যান চালকরা ‘পানি পার ২০ টাকা’ বলে পথচারীদের উদ্ধারে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে লোকজন ২০ থেকে ৪০ টাকা দিয়ে ভ্যান ও রিকশায় পানি পার হয়েছেন। এতে নিম্ন আয়ের লোকজন পড়েছেন বিপাকে।

পানির এই ছবি তুলতে গেলে এই প্রতিবেদককে কয়েকজন তরুণী বলেন, ‘ভাই, ছবি না তুলে কয়েকটা নৌকা পাঠান। তাহলে আমরা কম ভাড়ায় যেতে পারব।’ অন্যদিকে, ঈদ ঘিরে সবচেয়ে বেশি বিক্রির আশা থাকলেও এবার টানা বৃষ্টিতে ক্রেতারা দাঁড়াতে না পারায় হতাশার কথা বলছেন ফুটপাতের দোকানিরা।

রাজধানীর মিরপুর, কালশী, বেগম রোকেয়া সরণি, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর হয়ে বাংলামোটর থেকে বসুন্ধরা সিটির পুরো রাস্তায় পানি থৈ থৈ। পানির কারণে খানাখন্দে ভরা রাস্তা মাঝখানে ছোট হয়ে গেছে। এতে যানবাহন নষ্ট হয়ে তৈরি হয় যানজট। এসব সড়কে গাড়ির গতি ছিল না বললেই চলে। সকালে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হওয়ায় শঙ্কিত লোকজন। বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা রায়হান রশিদ বলেন, এত বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল যে অফিসে যেতে পারিনি। এরমধ্যে গাড়ি নিয়ে বের হতে ভয় করছে। তার ওপর ভারী বর্ষণ তো আছেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা সড়কে জলজটের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উন্নয়ন কাজের কারণে জলজটে ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া মিরপুর শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, কালশী, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন, শহীদনগর, মধুবাগ এলাকায় জলজটে নাকাল বাসিন্দারা। অলিতেগলিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকেই হাঁটুপানি দেখা গেছে।

রাতের বৃষ্টিতে তেমন সমস্যা না হলেও সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে পানি জমে গেছে। ফলে রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে এক সময় বিরক্ত হয়ে হাঁটা শুরু করেন তারা। কিন্তু পানির কারণে সেটাও পারছিলেন না। পাশেই ভ্যান চালকরা বলছেন, ‘পানি পার ২০ টাকা, পানি পার ২০ টাকা’। সরেজমিনে ঘুরে রোকেয়া সরণির মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত প্রধান সড়কে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ১০০-১৫০ হাত পর্যন্ত রাস্তায় কোমর সমান পানি জমে গেছে। এটুকু পথ পার করে দিকে ভ্যানচালকরা ২০ টাকা নিচ্ছেন। একসঙ্গে চার-পাঁচজনকে নিয়ে পানি পার করে দিচ্ছেন। এই রাস্তা পার করে দিতে রিকশাচালকরা চাইছেন ৪০ টাকা। এত ভাড়া কেন চাইছেন এ প্রশ্নের জবাবে এক ভ্যানচালক বলেন, ‘ভাই সামনে ঈদ। এ জন্য টাকা একটু বেশি নিচ্ছি।’

ভ্যানে করে পার হওয়া এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা তো নিরুপায়। কিছুই করার নেই। অফিসে তো যেতে হবে। তালতলা থেকে কাজীপাড়া রাস্তায় গাড়ি আটকে আছে। হেঁটে যাব বলে বাস থেকে নেমেছি। কিন্তু রাস্তায় নেমে দেখি পানি। বাধ্য হয়েই এভাবে পার হচ্ছি। ঈদ ঘিরে সবচেয়ে বেশি বিক্রির আশা থাকলেও এবার টানা বৃষ্টিতে ক্রেতারা দাঁড়াতে না পারায় হতাশার কথা বলছেন ফুটপাতের দোকানিরা। এবার রোজার শুরু থেকেই দুই-একদিনের বিরতি ছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিকিকিনি সেভাবে জমতে পারেনি। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে এক সপ্তাহের কেনাবেচায় ‘পুরো মাসের ক্ষতি’ কাটিয়ে ওঠার আশায় ছিলেন তারা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাদের সে আশার গুড়ে বালি।

মিরপুর, ফার্মগেট, পল্টন ও গুলিস্তানের ফুটপাতগুলো ঘুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা গেছে। একে তো বেচাকেনা কম, তার ওপর বৃষ্টির কারণে বার বার মালপত্র টানাটানি করে বিরক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ‘পুলিশের ঈদ বকশিসের দাবি’। এমনিতেই বেচাবিক্রি নাই, তার ওপর হেগো ঈদ বকশিস। এমনে কি ব্যবসা করা যায়?’ ক্ষোভ ঝাড়লেন এক হকার।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজধানী,বৃষ্টি,ভোগান্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist