নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ মে, ২০১৭

দাবদাহে পুড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশ

গরম এখনই কমছে না

দাবদাহে পুড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশ। এ অস্বস্তিকর গরম থেকে আপাতত রেহাই নেই-এমনটাই জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। তপ্ত হয়ে উঠেছে রাস্তাঘাট। রোদে খাঁখাঁ করছে সড়ক জনপথ। বাইরে বের হলেই মনে হচ্ছে অগ্নিকুন্ড। গরম বাতাস শরীরে বিঁধছে আগুনের হলকার মতো। দিনের গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। দুঃসহ গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরও হাঁসফাঁস অবস্থা। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে। জ্যৈষ্ঠের এই গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে। কিন্তু গরম সহজে কমছে না। বৃষ্টি হলে হয়তো তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে। কিন্তু বৃষ্টিতে বিরতি পড়লে উষ্ণতার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যা বর্ষাকে নিয়ে আসবে, তা এখনো অনেক দূরে বঙ্গোপসাগরেই আটকে আছে। কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে যে গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলবে, সে রকম পরিস্থিতি এখন আবহাওয়ামন্ডলে নেই। সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণাবর্ত তো দূরের কথা, কোনো নিম্নচাপ অক্ষরেখা নেই। সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা সামান বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বহমান তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

গরমের মধ্যে চারদিকে বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ চলছে। সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল ছাড়া বৃষ্টিশূন্য হয়ে পড়েছে দেশ। গত রোববার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি সিলেট ও তেঁতুলিয়ায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরে ৩ ও ময়মনসিংহ জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৮ মিলিমিটার। অন্যান্য বিভাগীয় শহরে কোনো বৃষ্টি নেই।

রাজধানী ঢাকায় সবশেষ ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল ১৮ মে। এরপর থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে এই অঞ্চলে। তাপপ্রবাহের মাত্রা খুলনা ও যশোর অঞ্চলে আরো বেশি। গতকাল দেশের এই দুই জেলায় সবচেয়ে বেশি ছিল গরম। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, খুলনা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা, চাঁদপুর, খুলনা ও নোয়াখালীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েক দিন থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ২৫ অথবা ২৬ মের আগে অন্তত ঢাকায় জোরালো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে বর্ষা এখন আটকে থাকলেও ফের তার অগ্রগতি শুরু হবে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে চলেছে। এটির প্রভাবে কয়েক দিনের মধ্যে বর্ষা অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঢুকে পড়বে বলে তারা মনে করছেন। এতে দেশের মূল ভূখন্ডে বর্ষার ঢুকে পড়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বি^ত হবে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া দফতরের আশা, নির্ধারিত ১ জুনের আশপাশেই ভারতের কেরেলায় বর্ষা পৌঁছাবে। কেরেলায় ঠিক সময়ে বর্ষা এলেই তা নির্ধারিত সময় অর্থাৎ জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে, তবে তাও নির্ভর করছে মৌসুমি বায়ুর মতিগতির ওপর।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে তাতিয়ে উঠা রোদে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়; গরমে রাস্তায় যান ও মানুষের চলাচল কমে যায়। দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসার মোড়ে আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও আন্দরকিল্লা মোড়ে যেতে কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাননি বলে জানান ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। গরমের কারণে রিকশাচালকরাও একই দূরত্বে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন বলে জানান পথচারীরা।

গতকাল সকালে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগের দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি, শুক্রবার ৩৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের সপ্তাহে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি ও বুধবার ছিল ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সোমবার দুপুরে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬৫ শতাংশ। রোববার বিকেল ৩টায় ছিল ৬৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘আগামী দুই দিনে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। চলমান তাপপ্রবাহ চলতে পারে আরো এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন। জুনের প্রথম সপ্তাহের আগে তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

চট্টগ্রাম সিইপিজেড এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শফিকুর রহমান বলেন, গরমে প্রতিদিন মুরাদপুর থেকে ইপিজেড যাওয়া-আসা করতে করতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শহরে চলাচলকারী বাসগুলোর বেশির ভাগেই ফ্যান চলে না। ভ্যাপসা গরমে গাদাগাদি করে অফিসে যেতে হয়। অতিরিক্ত গরমের কারণে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিশুরাও। নগরীর বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, রাতে গরমের কারণে সাত মাস বয়সী ছেলে ঘুমাতে পারে না। বারবার ঘেমে যাওয়ায় ছেলের সর্দি-কাশি এবং ঘামাচি হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এখন শিশুদের মধ্যে হাম, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ গরমে হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, উপজেলাগুলোয় এবং শহরে ভ্যাপসা গরমের কারণে শিশুরা ঘামাচি, সর্দিজ্বরসহ ভাইরাস রোগ যেমন-হাম ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়াও হচ্ছে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ চলে যাচ্ছে। তাই সব বয়সী মানুষের উচিত ওরস্যালাইন খাওয়া। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করা। গরমে হোটেলের খাবার খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, শাকসবজি ও ফলমুল বেশি খেতে হবে। গোসলে দিনে একবারের বেশি সাবান ব্যবহার করলে চামড়ার সমস্যা হতে পারে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist