অতিরিক্ত মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্লাস্টিক দূষণের কারণে বিশ্বের সাগর-মহাসাগর পড়েছে হুমকির মুখে, এতে মাছের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ‘ব্লু ইকোনমির’ মাধ্যমে সমুদ্র সংরক্ষণের তাগিদ এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

মেক্সিকোতে সাত থেকে নয় মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব সমুদ্র সম্মেলনে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরাও অংশ নিয়েছিলেন। সাগরকে ঘিরে কিভাবে অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করা যায়, প্রতিবছর সে আলোচনা গুরুত্ব পেলেও এবার সমুদ্র সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি সাগরকে বাঁচানোর বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। মূলত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সাগরকে রক্ষা করার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উঠে আসে আলোচনায়। এই পরিকল্পনাকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু ইকোনমি’ বা ‘নীল অর্থনীতি’।

বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার কস্তো বলেন, ব্লু ইকোনমি খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। যেসব মানুষের জীবিকা সাগর-নির্ভর, তাদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে এর মাধ্যমে।

বিশ্বের অন্তত ১০০ কোটি মানুষ সাগরের মাছের ওপর নির্ভরশীল। কিছু ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র রয়েছে, যাদের খাদ্যের প্রধান উৎস মাছ। বিশ্বের অন্যান্য জলাশয় থেকে যে পরিমাণ মাছ ধরা হয়, সাগর থেকে ধরা হয় তার চারগুণ। বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ক্যারিন ক্যাম্পার বলেন, ‘অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে সমুদ্রের জীববৈচিত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, অম্লতা বাড়ছে, যা প্রবালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবালপ্রাচীর মাছেদের অন্যতম আবাসস্থল। তাই মাছ তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে। মাছ কমে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ হলো প্লাস্টিক দূষণ। সাগরে প্লাস্টিকের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে, তা পরিষ্কার করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার।

সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ কমতে থাকায় অ্যাকোয়াকালচারকে বিকল্প হিসেবে ভাবছে অনেক দেশ। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ‘সি ফুড’ অ্যাকোয়াকালচারের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে পরিবেশ দূষণ আরো বাড়বে এবং জীববৈচিত্রের জন্য এটি আরো বেশি হুমকি তৈরি করবে। তাই ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে রক্ষা এবং সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জোরালো হয়ে এসেছে বিশ্ব সমুদ্র সম্মেলনে।

পিডিএসও/তাজ