হাসান ইমন

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

মশায় অতিষ্ঠ জনজীবন

*সারাদেশে প্রকোপ বাড়ছে *রাজধানীতে লোক দেখানো কার্যক্রম *ফের চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর আশঙ্কা

রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে মশার দৌরাত্ম্য। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার উপদ্রব। সেটা চলছে দিন-রাতে সমানতালে। তবে রাজধানীতেই মশার উপদ্রব বেশি। দিন-রাতে কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়েও যেন নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে রাজধানীবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগ চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী চিকিৎসা দিতে গত বছর ১৩ আগস্ট আথ্রাইটিস ক্লিনিক চালু করে। এ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিনহাজ রহিম চৌধুরী বলেন, ‘শহরবাসী কিন্তু বিপদমুক্ত নয়। আবার মশা বাড়ছে। এখনই প্রতিরোধ করা দরকার, তা না হলে পুনরায় বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। মশা থেকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি মানুষ জিকা ভাইরাসেও আক্রান্ত হতে পারে।’

এদিকে, হঠাৎ করেই মশার এমন দৌরাত্ম্য বাড়লেও নজর নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর অভিযোগ, দুই সিটি করপোরেশন লোক দেখানো কর্মসূচি হাতে নিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাসে এক দিনেও দেখা মেলে না মশক নিধন কর্মীদের। মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। তবে দুই সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, মশার উপদ্রব কমাতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। মশা মারতেই দুই সিটি করপোরেশন বছরে ৪৫ কোটি টাকা খরচ করলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না নগরবাসী।

জানা গেছে, ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুরসহ দেশের সব জেলায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়ে মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করছে বাসিন্দারা। তবু বাসাবাড়ি, কর্মস্থল, চলতি পথ কোথাও মশার কামড় থেকে নিস্তার মিলছে না। মশারির ভেতরে বসেই পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা। মশারির ভেতরেও শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না শিশুরা।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মাহবুব আলম বলেন, নাখালপাড়া এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে পাঁচ মাসেও একবার দেখা যায় না। কমিশনারের অফিসে অভিযোগ করলেও কোনো ফল হয় না।

খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত দুই সপ্তাহে মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে, তার বাসায় মশার কয়েল, স্প্রে, মশা মারার ব্যাট—কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের মশক নিধনের কর্মসূচি সম্পর্কে একই কথা বলেন তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। তখন চিকুনগুনিয়া ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ চোখে পড়ে। এবারও রাজধানীতে মশার প্রকোপ বাড়ায় আতঙ্কিত নগরবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কচুরিপানা পরিষ্কার ও মশার ওষুধ কেনার জন্য প্রতি বছর দুই সিটি করপোরেশনকে ৫০-৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু দুই সংস্থা নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে। বাদবাকি টাকার হদিস নেই। সঠিকভাবে ডোবা, জলাধার পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মানহীন মশার ওষুধ কেনা হচ্ছে, যে ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মশক নিবারণী দফতর মিলিয়ে রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন প্রায় এক হাজার মশক শ্রমিক। নিয়ম অনুযায়ী এসব শ্রমিক সকালে লার্ভা নিধনে ড্রেনে বা পানি জমে এমন জায়গায় ওষুধ ছিটানোর কথা। আর বিকেলে উড়ন্ত মশা মারতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোর কথা। প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল এ কার্যক্রম করার কথা থাকলেও কালেভদ্রে চোখে পড়ে মশক নিধন কর্মীদের চেহারা।

তবে মন্ত্রিপাড়াসহ কিছু ভিআইপি এলাকা এবং কিছু ভিআইপি লোকের বাসার আশপাশের পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন-কার্যক্রম সঠিক নিয়মে পরিচালিত হয়। কিন্তু পুরান ঢাকার হাজারীবাগ, লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর এবং বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরদের কাছে অভিযোগ গেলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না দুই সিটি করপোরেশন।

এদিকে গত আগস্টে মশার প্রকোপ কমাতে ৪৫০ কিলোমিটার নর্দমায় গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সাত মাস পার হলেও গাপ্পি মাছের কোনো প্রকল্প হাতে নেয়নি সংস্থাটি। প্রকল্প ঘোষণাতে সীমাবদ্ধ।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘এমন আবহাওয়ায় মশার উপদ্রব কিছুটা বেড়ে যায়। আমরা ইতিমধ্যে হটলাইন চালু করেছি। কাল (আজ) থেকে কোনো নগরবাসী মশা থেকে মুক্তি পেতে (০১৯৩২-৬৬৫৫৪৪) এই নম্বরে ফোন করলে করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা এসে ওষুধ ছিটিয়ে দেবেন।’ তিনি জানান, ১২ ফেব্রæয়ারি শুরু হওয়া মশক নিধন ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে।

শুধু মশার ওষুধ দিয়েই মশা নির্মূল সম্ভব নয়। এজন্য যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা ড্রেন, ঝিল ও ডোবা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বলেন, মশক নিধনের রুটিন-কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কাল বুধবার (আজ) মেয়র সাঈদ খোকন মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীদের রক্ষাকল্পে মশক নিধনের লক্ষ্যে দুই সপ্তাহব্যাপী স্পেশাল ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করবেন। আশা করি, অল্প সময়ের ব্যবধানে মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজধানী,ভাইরাস,মশা,সচেতনতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist