হাসান ইমন

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জলসবুজে ঢাকা প্রকল্প : নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

১৪ মাসে অগ্রগতি ৫ শতাংশ I ৩১টির মধ্যে ১৫টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন I চলতি বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠ নতুন করে সংস্কারের কাজ চলছে। নাগরিকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নারী-শিশু এবং বৃদ্ধদের বিশেষ সুবিধার্থে অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করে এসব পার্ক ও খেলার মাঠ গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫টি পার্ক ও মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন।

এদিকে এসব কাজের অগ্রগতি খুবই সামান্য। ১৪ মাসে কাজের বাস্তবায়ন হয়েছে গড়ে মাত্র ৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাটির হাতে রয়েছে মাত্র চার মাস। এই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছে, নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হলেও উন্নয়নের বড় একটি অংশ দেখা যাবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জলসবুজে ঢাকা নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৭০ ভাগ অর্থ দেবে সরকার আর ৩০ ভাগ অর্থ ব্যয় করবে সিটি করপোরেশন।

জানা গেছে, গড়ে প্রতিটি পার্ক সাজাতে ব্যয় হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা। তবে আয়তন বুঝে কম-বেশি ব্যয় করা হতে পারে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের জুলাই মাস অর্থাৎ এক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। নাগরিক সুবিধার্থে এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এদিকে ১৪ মাসে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের মধ্যে মাত্র ১৫টির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে শুরু করলেও পার্ক ও মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর হয় ধীরগতিতে। কাজের উদ্বোধনের ১৩টির মধ্যে গত বছরের ৮ আগস্ট রসুলবাগ শিশুপার্ক ও আবদুল আলীম খেলার মাঠের কাজের উদ্বোধন করেন। এছাড়া ৫ নভেম্বর দেলোয়ার হোসেন, আমলিগোলা, শহীদ নগর মিনি স্টেডিয়াম, বালুয়াঘাট খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। ১৮ অক্টোবর গোলাপবাগ মাঠ, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ওসমানী উদ্যান ও সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি নবাবগঞ্জ পার্ক, আজিমপুর, জগন্নাথ সাহা, বকশীবাজার, বশির উদ্দিন, হাজারীবাগ ও গজমহল পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তিনি।

এই ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের মধ্যে রসুলবাগ শিশুপার্কের কাজ শেষ হয়েছে ১২ শতাংশ। এছাড়া শহীদ আবদুল আলীম মাঠের ৮, সিক্কাটুলি পার্কের ৫০, বংশাল ত্রিকোকৃত ৫, সিরাজউদ্দোলা ৫, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ২, গুলিস্তান পার্ক ২০ ও কলাবাগান খেলার মাঠের কাজ শেষ হয়েছে ৬ শতাংশ। এই ৯টি ছাড়া বাকি ২২টির মধ্যে ১৮টির কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ৪টির কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। সব মিলিয়ে জলসবুজের ঢাকা প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৫ শতাংশের মতো হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, জল সবুজে ঢাকা প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। এই প্রকল্পের সময় আরো বাড়ানো হবে। তবে নির্ধারিত মেয়াদের আগে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের বড় একটি অংশ দৃশ্যমান হবে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে পরিবেশবান্ধব, সবুজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে আমার সীমানায় থাকা ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠকে ব্যবহার উপযোগী করতে উদ্যোগ নিয়েছি। ‘জলসবুজে ঢাকা’ নামে আমরা সবুজ আর জলের মিশ্রণে উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক স্মার্টসিটি ঢাকা গড়তে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংস্থাটি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের কাজ করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব পার্ক ও মাঠের সরকারি জমি দখল করে তারা বেশকিছু স্থায়ী স্থাপনাও তৈরি করেছে। যা পুরোপুরি দখলমুক্ত করে সীমানা নির্ধারণের কাজ করছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজায়ন বাড়াতে পার্কগুলোতে অধিক পরিমাণ দেশি-বিদেশি গাছ রোপণ করা হবে। পার্ক ও মাঠের ভেতরে থাকবে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম। মাঠের কোনো স্থানে পানি জমলে তা সঙ্গে সঙ্গেই নিষ্কাশনের জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। এছাড়া প্রতিটি পার্কেই জমি থাকা সাপেক্ষে ছোট আকৃতির একটি করে আধুনিক টয়লেট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া নাগরিকদের সুবিধার্থে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।

সকাল সন্ধ্যায় হাঁটার জন্য সীমানার চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ব্যায়াম ও খেলাধুলার পরে হালকা নাশতার জন্য পার্ক ও খেলার মাঠের পাশে থাকবে ছোট ফুড কোর্ট বা অস্থায়ী দোকান। অবৈধ দখল রোধে এসব পার্কে বা মাঠের জমিতে কোনো ধরনের স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবে না ডিএসসিসি। মাঠে পর্যাপ্ত ঘাস লাগানো ও সীমানা নির্দিষ্টকরণ থাকবে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য পার্কের ভেতর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি পার্ক ও খেলার মাঠে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতের দখল রোধে সীমানা নির্ধারণ করে পার্ক ও খেলার মাঠের চারপাশে দেয়াল তৈরি করা হবে। এসব স্থাপনাকে সংরক্ষিত রাখার জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক গেট লাগানো থাকবে। এসব গেট দিয়েই সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই গেট খোলা থাকবে। তবে প্রাতঃভ্রমণের জন্য ভোরে আবার গেট খুলে দেয়া হবে। মাঠের অভ্যন্তরে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তায় ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় সহযোগিতা করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া হবে।

তবে পরিচালন ব্যয় বহন ও পার্কের সৌন্দর্য রক্ষায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যেন শ্রীহীন হয়ে না পড়ে এজন্য নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় অর্থ সংস্থান ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য ৭০ জন স্থাপত্যবিদ স্থানীয় নাগরিকদের উৎসাহ দিতে কাজ করছেন।

"পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন,জলসবুজে ঢাকা প্রকল্প,মেয়র সাঈদ খোকন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist