নিজস্ব প্রতিবেদক
ধুলায় ধূসর নগরী
বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আর খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে নাকাল হয়েছিল নগরবাসী। সেই নাকাল হওয়ার অবস্থা এখন নেই। তবে ভোগান্তি ঠিকই আছে। এখন ভোগাচ্ছে ধুলা। রাস্তার ধারে অপেক্ষমাণ যাত্রী ও পথচারীরা চোখমুখ বন্ধ করে নাক ধরে থাকছেন। এর কারণ রাজধানীর সর্বত্রই এখন ধুলা-বালুতে একাকার। রাস্তায় বেরোলেই ধুলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী এলাকায়ও ধুলার ভোগান্তিতে দেখা মিলল পথচারীদের নাক ধরে চলাচলের দৃশ্য। অনেকেই আবার মাস্ক পরে চলাফেরা করছেন। এ দৃশ্য এখন পুরো রাজধানীতেই চোখে পড়ছে। বর্ষায় রাজধানীবাসী ভুগেছেন কাদাপানি ও জলাবদ্ধতায়। আর এখন শুকনো মৌসুমে ভুগছেন ধুলার দুর্ভোগে। বর্তমানে রাজধানীবাসীর ধুলার সঙ্গে নিত্য বসবাস। ধুলায় ধূসর ঢাকায় ঝুঁকি বাড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশদূষণের।
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাতের কাজ, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশন নালা, মেট্রোরেল, ইউলুপ নির্মাণ, তিতাস গ্যাসের লাইন স্থাপন, ডেসকো ও ডিপিডিসি ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার, বিটিসিএল টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ভূগর্ভস্থ ইন্টারনেট কেবল লাইন বসাতে রাজধানীজুড়ে সড়ক কাটা হচ্ছে।সেখানকার ধুলার পাশাপাশি শুকনো মৌসুম হওয়ায় ধুলার প্রকোপ আরো বেড়েছে।
বনশ্রীর বাসিন্দা লুৎফর রহমান রামপুরা ব্রিজে দাঁড়িয়ে মাস্ক কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ডাস্ট অ্যালার্জি। এটা হয়েছে ধুলা-বালির কারণে। প্রতিদিনই ধুলা-বালির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যে কারণে ডাক্তার আমাকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের এই রাস্তায় যে পরিমাণ ধুলা এতে চলাচল করাই কঠিন।’
রাজধানীবাসীর ধুলার দুর্ভোগ দূর করতে প্রতিদিনই পানি ছিটানো হচ্ছে বলে দাবি করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবু ধুলা কমছে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী সব রাস্তায় পানি ছিটাতে পারছে না সংস্থা দুটি। খিলগাঁও, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শ্যামলী, গাবতলী, মগবাজার, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, কারওয়ানবাজার, কাকরাইল, সায়েদাবাদ, বিমানবন্দর, উত্তরা এলাকায় সড়কের যাত্রী ও আশপাশের বাসিন্দারা ধুলার জ্বালায় বেশি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
ধুলা-বালু নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো হচ্ছে দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম বলেন, শুকনো মৌসুমে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ধুলা-বালু নিরসনে ডিএনসিসির ৫ অঞ্চলে দিনে দুবার করে ৯টি বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পানি ছিটানো হচ্ছে। তবে সব সড়কে এই বড় গাড়ি ঢুকতে পারে না তাই অনেক জায়গায় পানি ছিটানো সম্ভব হয় না।
কেবল ধুলার কারণেই শহরে এখন মাস্ক পরে চলাচল করছেন অনেকেই। এমনই একজন ডা. সাদিয়া আরেফিন। বাড্ডা এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। আলাপকালে তিনি বলেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ ধুলা-বালু বেড়েছে সে কারণে মাস্ক পরে চলাফেরা করা ছাড়া উপায় নেই। ধুলা-বালুর কারণে প্রচ- পরিমাণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ধুলা-বালুর কারণে ব্রঙ্কাইটিজ, সর্দি, কাশি, জ্বর, চোখের ব্যথা, মাথাব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দিল্লির পরই ঢাকার অবস্থান।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীতে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুলার দূষণ। এ কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী।
পিডিএসও/তাজ