হাসান ইমন
শীতে ঢাকায় মশার দাপট!
নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সিটি করপোরেশন : ওষুধ না ছিটানোর অভিযোগ
শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় ঢাকায় বেড়েছে দাপট। বাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহনেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মশা। শুধু রাতে নয়, দিনেও চলছে মশার আক্রমণ। কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট চালিয়েও রেহাই পাচ্ছে না নগরবাসী। বছর বছর মশা মারতে বাজেটের আকার বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাশয় রয়েছে প্রায় এক হাজার বিঘা। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে রয়েছে ৪৮৭ বিঘা। এসব জলাশয়ে কচুরিপনা ও আবর্জনা জমে আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে শীত মৌসুম এলে জলাশয়ের বদ্ধপানি দুর্গন্ধময় হয়ে মশার প্রধান প্রজননস্থলে পরিণত হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডিএনসিসি এলাকায় ২ হাজার ১৫৩ বিঘা জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে আগেই ১২০০ বিঘা পরিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ৯৫৩ বিঘা জলাশয়ের মধ্যে ৭০ শতাংশ পরিষ্কার করা হয়েছে। বাকিগুলো পরিষ্কারের কাজ চলছে। এদিকে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এগুলো খরচও করা হয়। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আলাপকালে নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় গত ছয় মাসে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ কোথায় কিভাবে ছিটানো হয় আমরা জানি না।
মিরপুর রূপনগরের বাসিন্দা ইয়াসিন বলেন, আমার বাড়ির কাছে রূপনগর খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে মশার উৎপাত দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ডে সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা ৫-৬ জন করে কর্মী কাজ করছেন। তবে কোনো কোনো এলাকায় কয়েক মাসেও তাদের দেখা পাননি ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাশয় ও নগরীর অলিগলি অপরিচ্ছন্ন রেখে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধন সম্ভব নয়।
রাজধানীর মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন গত পাঁচ বছরে ১৩১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত পাঁচ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করেছে ৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মশা নিয়ন্ত্রণে মোট ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। গত বছর (২০১৬-১৭) ব্যয় হয় ১৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গত পাঁচ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে মোট ব্যয় করেছে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মশা নিয়ন্ত্রণে ২০ কোটি টাকা বাজেট রেখেছে। গত বছর (২০১৬-১৭) ব্যয় হয় ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর আগের বছর (২০১৫-১৬) ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
মশা নিধনে সরকারেরই যে শুধু কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে তা নয়, মশার কয়েল ও এরোসল ক্রয়ে নগরবাসীর ব্যয়ও কোটি কোটি টাকা। এভাবে শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ের পরও কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বরং কয়েক বছরে অ্যাডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে ডেঙ্গুর পাশাপাশি নতুন করে ভাইরাসজনিত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অ্যাডিস মশা থেকেই এ রোগ ছড়ায়। কোনো কোনো পরিবারের সবাই একসঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম বিপাকে পড়েন। এ রোগে আক্রান্তদের প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে হাড়ের গিরায় প্রচন্ড ব্যথা হয়। ব্যথার কারণে হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্তরা তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত ভুগেছেন। চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কলসেন্টার চালু করে নিজস্ব ডাক্তার দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পরে তাদের ফিজিওথেরাপিও দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জাকির হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, শীত হচ্ছে শুষ্ক মৌসুম। এই সময় বৃষ্টি না হওয়ায় মশার উপদ্রব বাড়ে। তবে গত বছরের মতো যেন ভয়াবহ আকার ধারণ না করতে পারে সে জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি। মশক নিধনের জন্য আমরা ইতোমধ্যে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি। আশা করি, এর মাধ্যমে মশাকে আরো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবে।
"পিডিএসও/তাজ