নিজস্ব প্রতিবেদক
বিটিভি-বেতারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
অনুষ্ঠান নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রচার ও পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে সরকারি প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনেছেন শিল্পীরা। শিল্পীদের অভিযোগ, বিটিভিতে একই ধরনের এবং একই সময়কালের অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন বাজেট বরাদ্দ করা হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের লোককে। বিটিভির তালিকাভুক্ত নয়-এমন শিল্পীদের অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন করা হয়।
প্রকৃত ও যোগ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আজ্ঞাবহ ও অনভিজ্ঞ উপস্থাপক দিয়ে হরহামেশাই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা চলে। মান বিবেচনা না করে অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচারে পছন্দের লোকদের পরিচালিত অনুষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শিল্পীদের সম্মানী প্রায় দেড়গুণ বাড়ালেও সেখানে দুর্নীতিপ্রস্ত কর্মকর্তাদের কূটকৌশলের কারণে শিল্পীরা প্রতারিত হচ্ছেন। বিটিভি ও বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতার শিল্পী সংস্থা গতকাল রোববার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব অভিযোগ করে।
সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, খামখেয়ালিপনা ও স্বজনপ্রীতির কারণে শিল্পীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। শিল্পীদের কাছ থেকে ১১ ধরনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে সেগুলো নিষ্পত্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন মন্ত্রী ইনু। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিওকে জীবন্ত ও সক্রিয় রাখেন আপনারা (শিল্পীরা)। এগুলো আপনাদের নেতৃত্বেই চলে, আমরা কেবল পরিচালনা করে থাকি। আমিও মনে করি সমস্যা কিছু আছে, আপনারা যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতার শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আজম বাশার বলেন, ‘আপনার অধীনস্থ কতিপয় কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, স্বজনপ্রীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে শিল্পীরা তাদের ন্যায্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবস্থা খুবই শোচনীয়।’
শিল্পীদের অভিযোগ, আগে অনুষ্ঠানের পুরো সময়ের জন্য সম্মানী নির্ধারণ করা হলেও এখন অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র পর্দায় শিল্পীর উপস্থিতি সময়ের জন্য সম্মানী নির্ধারণ করা হয়। ফলে সম্মানী বাড়লেও শিল্পীরা আগের থেকে কম পাচ্ছেন। নীতিমালা মেনে নাট্যকাররা স্ক্রিপ্ট জমা দিলেও প্রযোজক বা কর্মকর্তারা তা যাচাই-বাছাই না করেই ঘুরেফিরে পছন্দের কয়েকজন নাট্যকারের স্ক্রিপ্ট দিয়ে নাটক তৈরি করেন। এখন নীতিমালা লঙ্ঘন করে বেশি পর্বের নাটক প্রচার করা হয়। বিটিভি ও রেডিওতে গীতিকারদের রয়্যালটি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী সুরকারও সমানভাবে রয়্যালটি পাওয়ার যোগ্য। রয়্যালটির হার নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। নাটকের স্ক্রিপ্ট ও আরো কিছু সৃষ্টিকর্ম পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে রয়্যালটি দেওয়ার বিধান থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। শিল্পীদের সম্মানী অনেক কম। আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
বেসরকারি টিভি ও এফএম রেডিও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করে, তাতে দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতিফলন বলতে গেলে দেখা যায় না। বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ শ্রেণিভুক্ত নাট্যশিল্পীদের অবমূল্যায়ন করে সবাইকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বেতারে একজন বিশেষ গ্রেডের শিল্পী আধ ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান গ্রন্থনা, গবেষণা এবং উপস্থাপনা করে এক হাজার ২০০ টাকা সম্মানী পান, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সভায় গায়ক এসডি রুবেল বলেন, ‘এমএফ রেডিওতে যাতে জাতীয় সংস্কৃতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়; সেই ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা শিল্পীদের অভাব-অভিযোগ শুনে সেগুলো সমাধান করতে হবে।’ শিল্পীরা যখন আর ‘পারফর্ম’ করতে পারেন না, তখন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এককালীন অর্থসহায়তার দাবি জানান বাউলশিল্পী আলম দেওয়ান।
নাট্যব্যক্তিত্ব এসএম মহসিন তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে শিল্পীদের অভাব-অভিযোগ ও দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে সেগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতার শিল্পী সংস্থার সভাপতি ইনামুল হক বলেন, আগে বিটিভির স্টুডিওতে নাটক ধারণ করা হতো, এখন বাইরের স্টুডিওতে করা হয়, এতে অপচয় হচ্ছে। অন্যরা নাটক বানিয়ে দেওয়ার পর পরে প্রযোজকের নাম বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সবার বক্তব্য শুনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব দাবি আপনারা উপস্থাপন করেছেন, তা স্বব্যাখ্যাত। বিটিভি নিজের নীতিমালা নিজেই ভঙ্গ করছে বলে আপনারা বলছেন। এসবের সমাধান বের করা কোনো কঠিন কাজ নয়। শিল্পীদের রয়্যালটি নিয়ে আইন ঠিক করা দরকার মন্তব্য করে ইনু বলেন, কলারটিউন দিচ্ছেন, কিন্তু শিল্পীরা রয়্যালটি পান না; তারা প্রতারিত হচ্ছেন।
পিডিএসও/তাজ