reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

তিনি চলে গেলেন সব মায়া ছেড়ে

কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক বারী সিদ্দিকী

আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, শুয়াচান পাখির মত জনপ্রিয় বাংলা লোকগানের শিল্পী বারী সিদ্দিকী চলে গেলেন সব মায়া ছেড়ে। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এই শিল্পীর মৃত্যু হয়।

তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন, তিনি আর নেই।’ কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, বাঁশিবাদক বারী সিদ্দিকী হৃদরোগ ছাড়াও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

গত ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বারী সিদ্দিকীকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্ত্বাবধায়নে সাতদিন আইসিইইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও তার অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি।

মূলত লোকগান ও আধ্যাত্মিক ধারার গানের জন্য পরিচিত এই শিল্পী গত শতকের শেষ দিকে সারাদেশের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে তার দরদী কণ্ঠের বেশ কিছু আবেগমাখা গান দারুণ জনপ্রিয়।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায় আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। শৈশবে পরিবারেই তার গান শেখার হাতেখড়ি। কিশোর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন বারী। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পান। একটি কনসার্টে বারি সিদ্দিকীর গান শুনে তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন ওস্তাদ আমিনুর রহমান। পরে ছয় বছর ধরে চলে সেই প্রশিক্ষণ।

সত্তরের দশকে নেত্রকোণা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। একসময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন।

ঢাকার বিভিন্ন স্টুডিওতে বাঁশি বাজিয়ে বেড়ানোর মধ্যেই ১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার বাসায় এক অনুষ্ঠানে বাঁশি শোনাতে যান বারী সিদ্দিকী। সেই অনুষ্ঠানে বারীর বাঁশির চেয়ে তার কণ্ঠে গাওয়া রশিদ উদ্দিন বাউল আর উকিল মুন্সির গানই বেশি পছন্দ হয় হুমায়ূনের। পরে লেখক হুমায়ূনের আগ্রহেই বারীর কণ্ঠে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়,’ ‘পুবালি বাতাসে’ গানগুলো রেকর্ড করা হয়।

টেলিভিশনে ‘রঙের বাড়ই’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানটি প্রচার করা হলে বারী সিদ্দিকী পৌঁছে যান সারাদেশের শ্রোতাদের হৃদয়ে। ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন বারী সিদ্দিকী। ‘শুয়া চান পাখি’ গানটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

ওই বছরই জেনেভায় বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে যোগ দেন বারী সিদ্দিকী। পরে রূপকথার গল্প, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ, ও আমার দেশের মাটিসহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকে গেয়েছেন এই শিল্পী। তার কণ্ঠের গান নিয়ে ডজনখানেক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বারী সিদ্দিকী,শিল্পী,গান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist