তুহিন খান নেহাল

  ২১ জুন, ২০২০

বাবার প্রতি তারকাদের শ্রদ্ধা

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার উদযাপন করা হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। যথারীতি আজ সেই দিন। আর ১০ জন মানুষের মতো সংস্কৃতি অঙ্গনের তারাকারাও তাদের বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। আর সেসব কথাই প্রতিদিনের সংবাদ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

ববিতা শুধুমাত্র বাবা দিবস এলেই যে আব্বাকে মনে পড়ে- আমার কাছে কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। আমার জীবনজুড়ে জড়িয়ে আছেন আমার আব্বা। সবাই বলেন, আমি না কী আমার আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু আদৌ কী আমি আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠতে পেরেছি, এটা আমার নিজের কাছে নিজেরই প্রশ্ন। আমার বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আমার আব্বা এ এস এম নিজাম উদ্দিন আতাউব ইন্তেকাল করেন। যে কারণে মানসিকভাবে সেই সময় অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। বাবাকে ঘিরে প্রত্যেক সন্তানেরই অনেক স্মৃতি থাকে। আব্বা সবসময় আমাদের ছয় ভাইবোনকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলতেন। আমার জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। এই যে আমি এত পরিপাটি থাকি, গুছিয়ে থাকার চেষ্টা করি, এটা আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। আব্বা যখন অফিস থেকে আসতেন তখন আমরা সবাই আব্বাকে পান বানিয়ে খাওয়াতাম। আব্বা তখন বেশ আয়েশ করে পান খেতেন। আব্বার পা টিপে দিতে দিতে তখন সব আবদার করতাম। আব্বা আমাদের সেই আবদার রাখতেন। আবার আব্বা অনেক সিনেমা দেখতেন। সিনেমা দেখে দেখে আমাদের মজার মজার গল্প বলতেন এবং সে সব গল্পে আব্বা আমাদের অভিনয় করতে বলতেন। সেখান থেকেই কিন্তু অভিনয়ে আমার অনুপ্রেরণা আসা। পরবর্তী সময়ে যখন আমি সিনেমার নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করি, তখনো আব্বা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিতেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অভিনয়ের আগে আব্বাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান করতেন ইংরেজিতে। শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আব্বার চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আমার ইংরেজি শেখার খুব শখ ছিল বিধায় আব্বা আমাকে ছোটবেলাতে একটি ডিকশনারি কিনে দিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি। বাগেরহাটে থাকি সবাই। সবাই আমাকে রেখে মামার বাড়ি যাবে বেড়াতে। আমি বুদ্ধি করলাম কীভাবে আব্বাকে রাজি করানো যায়। আব্বা সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফেরার সময় আমিই হারিকেন নিয়ে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গেলাম। আমাকে দেখে আব্বা ভীষণ খুশি, কারণ তখন বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। আব্বা তখন খুশি হয়ে বলেন, কী চাও মা? আমি বললাম আমাকেও সঙ্গে নিয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে যেতে হবে। আব্বা রাজি হলেন। আব্বা আমার জীবনের আদর্শ। তাই আমার ইচ্ছা আমার মৃত্যুর পর যেন বনানী কবরস্থানে আব্বার কবরেই যেন আমাকে দাফন করা হয়।

পপি যেহেতু কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে আমি। তাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুতে পরিবারের কারো তেমন কোনো সমর্থন ছিল না। আমার বাবা শুরু থেকেই সিনেমাতে অভিনয়ের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু তারপরও যখন কাজ শুরু করেছি, একের পর এক ভালো ভালো গল্পের সিনেমাতে কাজ করতে থাকি। তখন আব্বু আমাকে সমর্থন দেওয়া শুরু করেন। যে কারণে পরবর্তী সময়ে আব্বুর অনুপ্রেরণাতেই আমি সিনেমাতে নিজেকে আরো নিবেদিত করে কাজ শুরু করি। আমার অনেক সিনেমার শুটিংয়ে আব্বু সঙ্গে গেছেন এবং ধৈর্য ধরে আমার পাশে থেকেছেন। এটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু বাবা আমার জন্যই কষ্ট করেছেন। আব্বু চুপচাপ স্বভাবের একজন মানুষ। প্রয়োজনের বাইরে তিনি কথা বলতে অভ্যস্ত নন। যথেষ্ট বিনয়ী একজন মানুষ। আব্বুর এই স্বভাবটাই আমি পেয়েছি। আমি প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতে পছন্দ করি না। সবাইকে বয়সানুযায়ী শ্রদ্ধা রেখে কথা বলি, স্নেহ করি। আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন আব্বু সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন।

তারিন আমার দেখা প্রথম নায়ক, আমার কাছে সেরা, বাবা তোমার হৃদয়টা যে আদর দিয়ে ঘেরা, সারা জীবন দিয়েই গেছ, আরো কত দেবে, সামান্য এই ভালোবাসা, বলো বাবা নেবে? বেশ কয়েক বছর আগে বাবাকে নিয়ে আমার গাওয়া গান এটি। গানটি লিখেছিলেন জুলফিকার রাসেল, সংগীত পরিচালনা করেছিলেন ইবরার টিপু। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানিয়েই গানটি গেয়েছিলাম আমি। আমার বাবা একজন সৎ মানুষ, তার এই সততাকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে আমি পথ চলার চেষ্টা করি। বাবা পিডাবিøউডির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কিন্তু বাবা এতটাই সৎ ছিলেন যে ঢাকা শহরে তার একটি বাড়ি নেই। বাবা সারা জীবন মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে গেছেন। বাবা আমাদের সব বোনদের একটি কথাই বলতেন, ‘সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে যাবে, বিনিময়ে চাইবে না কিছুই, সে মনে রাখবে-তাও আশা করবে না। যদি ভালো কাজ করো তার প্রতিদান নিশ্চয়ই পাবে।’ বাবাই আমাদের স্বর্গ, এমন বাবার সন্তান হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত। মহান আল্লাহর কাছে একটাই চাই, বাবা আমাদের মাঝে সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন।

ঈশিতা আমার বাবা রশিদ আহমেদ খান একজন স্থপতি। আমার বাবাই এই পুরো পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ যিনি আমাকে সারা জীবন ভালোবেসে গেছেন শুধু একটিমাত্র কারণেই, আর তা হলো আমি তার মেয়ে। আমার আব্বাকে খুশি করতে স্কুলে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হয়নি। নতুনকুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হতে হয়নি। নাটকে ভালো অভিনয় করতে হয়নি। কিন্তু তারপরও তিনি আমাকে সারা জীবন শুধু ভালোই বেসে গেছেন। আমার আব্বা আমার নিয়ম ভাঙার সঙ্গী। আমারই কোনো অন্যায় আবদারের প্রশ্রয়দাতা আমার আব্বা। আবার আমার আনন্দেরও কারণ আব্বা। তিনি একজন সর্বশ্রেষ্ঠ বাবা। আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া অনেক বড় নিয়ামত আমার বাবা।

আঁখি আলমগীর আব্বুর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছি কিংবা পারিনি সেটা সত্যিকার অর্থে আব্বু ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা সত্যি আমার আব্বু একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তার মতো হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। এটা সত্যি পৃথিবীর কোনো সন্তানই বাবা-মায়ের সম্পূর্ণ আদর্শে তাদের পছন্দমতো নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না। কারণ প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছেই তার সন্তান ভীষণ আদরের ভালোবাসার হলেও সেই সন্তান কিন্তু একজন স্বতন্ত্র মানুষ। আমরা সব ভাইবোনই আসলে আব্বুর সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে মানসিকভাবে এবং মনের দিক দিয়ে সম্পৃক্ত। নানা বিপদে আপদে আমাদের কাছে সাহসিকতার আরেক নাম আমাদের আব্বু। এই যে আমি এত বড় হয়েছি, নিজে স্বাবলম্বী হয়েছি কিন্তু আব্বুর কাছে জবাবদিহির জায়গাটা কিন্তু এখনো রয়ে গেছে। তার মেয়ে হিসেবে আমি সত্যিই ভীষণ গর্বিত। করোনা দুর্যোগের এমন সময়ে আমার আব্বু-আম্মুর জন্য একটাই কামনা, আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। তাদের যেন আল্লাহ দীর্ঘায়ু দেন। অনেকেই বলেন, আমি কেন আর অভিনয় করি না। তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই, আবার যদি আমি অভিনয় করি তবে অবশ্যই আব্বুর সঙ্গেই একই ফ্রেমে অভিনয় করব, নতুবা নয়।

জায়েদ খান আমার কাছে প্রতিটা দিনই বাবা দিবস। বাবা শুধু একটি শব্দই নয়, নিজের সব অস্বস্তি, বেদনা, ব্যর্থতা সব কিছু চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যম। কিন্তু এটা সত্যি সব চেষ্টা প্রয়াস যেখানে ব্যর্থ হয় সেখানে পাওয়ার আশা কেবল একটা শব্দই জানান দেয়, সেটি হচ্ছে বাবা। ছোটবেলা থেকেই সবসময় বাবাকে পাশে পেয়েছি। প্রতিটি দিনই বাবা আমাদের ভালো রাখার চেষ্টা করেছে। বাবার কাছ থেকেই সব ভালো গুণ পেয়েছি আমি। গরিবদের প্রতি তার মায়া-মমতা ছিল অনেক। যেটা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়। আমার বাবার মতো পৃথিবীর সব বাবাকে আজকের দিনে শ্রদ্ধা জানাই।

বিদ্যা সিনহা মিম যেহেতু আমার বাবা শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন; তাই বিভিন্ন সময়ে যখন বাবার কর্মক্ষেত্রে আমি গিয়েছি, নিজ চোখে দেখেছি বাবাকে সবাই কত সম্মান করেন, ভালোবাসেন। আবার সেই বাবাই যখন আমার সঙ্গে এখন কোথাও যান তখন তিনি নিজ চোখে উপভোগ করেন সেই বাবারই মেয়েকে দর্শক কতটা ভালোবাসছেন, শ্রদ্ধা করছেন। বাবার বুক তখন আনন্দে ভরে যায়। বাবা আমাকে ছোটবেলায় টুকটুকি বলে ডাকতেন। আবার একটু বড় হওয়ার পর বাবা আমাকে বাবু বলে ডাকা শুরু করেন। এখনো আমাকে বাবা বাবু বলেই ডাকেন। এই বড় বেলাতে এসেও বাবার বাবু ডাকার মধ্যে ছোট্টবেলার সেই আদুরের ডাকটাই পাই আমি। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার পর আমি প্রথম হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নির্দেশনায় রিয়াজ ভাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করে ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। পুরো টাকাটাই তখন বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। অবশ্য তারও আগে আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেলাম বৃত্তির টাকাও বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কী বাবা আমার জীবনের পুরোটাতে এমনভাবে মিশে আছেন বাবা ছাড়া পৃথিবীতে আমি একটি দিনও কল্পনাও করতে পারি না। আমার বাবা-মায়ের আগেই যেন ঈশ^র আমাকে এই পৃথিবী থেকে নিয়ে যান।

অপূর্ব আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবার আদর্শে বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। বাবার আদর্শের সবচেয়ে যে বিষয়টি আমি আমার নিজের মধ্যে লালন করি তা হলো, বাবা সবসময়ই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একই সুঁতোয় গেঁথে থাকতে ভালোবাসতেন। একসঙ্গে থাকার মধ্যে সবসময়ই তার মধ্যে ভীষণ ভালোলাগা কাজ করতো। সবার সঙ্গে সবার সবসময় দেখা হয়, কথা হয় এটাই বাবাকে ভীষণ আনন্দ দিতো। আমিও ঠিক তাই পছন্দ করি। পারিবারিক যে বন্ধন সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাবার আদর্শকে আমার নিজের মধ্যে লালন করে বাবার মতো করেই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসি আমি। আমি যেমন বাবার স্নেহ মায়া মমতায় বেড়ে উঠেছি, তাই আমিও চাই আমার মায়া মমতা স্নেহতে আমার সন্তান আয়াশ বেড়ে উঠার পাশাপাশি আমার বাবা মানে আয়াশ তার দাদার স্নেহ মায়া মমতাতেও বেড়ে উঠুক। দাদা-দাদির কাছ থেকেও সে যেন কিছু শিখতে পারে সেটাও চাই আমি।

মেহজাবিন চৌধুরী বিশ্বে বর্তমান যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতিতে আসলে বাবার কাছে একটিই চাওয়া তিনি যেন নিজের যত্নটা নিজেই যেন নেন। সবরকমের হতাশা থেকে যেন দূরে থাকেন। বিশ্বে এই মুহূর্তে যত সমস্যা তা নিয়ে যেন খুব বেশি দুশ্চিন্তা না করেন। আমি মনে করি, নিজ থেকে ভালো থাকার চেষ্টাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক সন্তানের চোখেই বাবা সুপার হিরো, আমার চোখেও আমার বাবা একজন সুপার হিরো। কারণ এমন কিছু নেই যা বাবা আমাদের জন্য করেননি। সবচেয়ে বড় কথা আমার বাবা তার প্রত্যেক সন্তানের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমার বাবা সবসময়ই এটা বলেন, আমরা যে কাজই করি না কেন সেটাতে যেন আমরা শীর্ষে যেতে পারি। পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন। তবে ভালো ফলটা চেয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে বাবা এবং মায়ের কাছে একটিই চাওয়া বেশি তা হলো তারা দুজনই যেন নিজেদের যত্ন নেন, ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন।

দিলশাদ নাহার কণা ছোটবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে সম্পর্কটা আমাদের দূরত্বের নয় বন্ধুত্বের। আব্বুর সঙ্গে সবকিছুই শেয়ার করতাম। মগবাজার গার্লস স্কুলে পড়ার সময় আমি আর আমার বড় বোন একই রিকশায় আব্বুর সঙ্গে যেতাম। আমি আব্বুর কোলে বসতাম, আর আপু পাশে। আমি আরেকটু বড় হওয়ার পর আমি উপরে বসতাম। এক সময় একসঙ্গে আর স্কুলে যাওয়া হয়ে উঠত না। এই বড় বেলায় এসে ছোটবেলার সেই আব্বু, আমি আর আপুর একই রিকশায় করে স্কুলে যাওয়ার দিনগুলো খুব মিস করি। আমার কণা নামটি আমার খালুর রাখা। স্বাভাবিক ভাবেই একজন সন্তান বিশেষত মেয়েরা তার মায়ের অনেক গুণাবলিই পেয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার বাবার সততা এবং ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে পেয়েছি। আমি আমার পেশায়, আমার কাজে যথেষ্ট সৎ থাকার চেষ্টা করি এবং আমি আমার বাবার মতোই ক্ষমাশীল। জীবন নিয়ে আমার খুব বেশি উচ্চাকাক্সক্ষা নেই। এখন যা আছি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আমার আম্মু আমার সঙ্গে দেশের বাইরে অনেক দেশে ঘুরেছেন। কিন্তু আব্বু বিমানে উঠতে চান না বিধায় তাকে নিয়ে আমার কোথাও ঘুরতে যাবার সুযোগ হয়নি। তাই আমার খুব ইচ্ছা, একদিন জোর করে হলেও আব্বুকে বিমানে উঠাব, দেশের বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাব।

সম্রাট কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক ছিলেন আমার বাবা। এই প্রাপ্তি আমাকে গর্বিত করে। পর্দার অনেক বড় নায়ক তিনি, দুর্দান্ত অভিনেতা। পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি দর্শকদের মোহিত করেছেন অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে। তবে আমার কাছে পর্দার হিরোর চেয়ে রিয়েল লাইফের হিরো রাজ্জাক বেশি প্রিয়। কারণ আমি তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। নায়করাজের ছোট ছেলে আমি। কিন্তু আমার বাবা জীবনে যে সংগ্রাম করেছেন, কষ্ট করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আমাদের পুরো পরিবারকে যতেœর সঙ্গে ভালোবাসার সঙ্গে একই সুতায় বেঁধে রেখেছেন, তা আমাদের কাছে বড় একটা শিক্ষণীয় বিষয়। আমার বাবার মতো কেয়ারিং বাবা আমি খুব একটা দেখিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও বাবা আমাদের প্রচুর সময় দিয়েছেন। কাজের অজুহাতে, ব্যস্ততা দেখিয়ে পরিবারকে বঞ্চিত করেননি। সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।

লুইপা

আমার প্রতি আমার বাবা কিংবা মায়ের ভালোবাসার গভীর অনুভ‚তি, ভালোবাসাটা আরো অনেক বেশি করে অনুধাবন করার চেষ্টা করছি আমার গর্ভে যখন পায়রা আসে এবং পরবর্তী সময়ে আমার জীবনজুড়ে যখন পায়রার বিচরণ শুরু হয়। একজন সন্তান তার বাবা মায়ের কাছে কতটা আদরের, কতটা স্নেহের, কতটা আরাধনার, কতটা স্বপ্নের সেটা আসলে এখন অনেক বেশি উপলদ্ধি করি। আমি আমার বাবার আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার শতভাগ চেষ্টা করেও তার আদর্শের অংশ বিশেষ হতে পেরেছি কী না জানি না। তবে আব্বার আদর্শকে বুকে লালন করে আমি সংগীতাঙ্গনের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই নিজেকে।

আব্বার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের কাছে তার বিশ^স্ততা, মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা। আমিও মানুষের কাছে বিশ^স্ত হতে চাই, চাই মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। অনেকেই পৃথিবীতে স্বর্গ খুঁজেন। পুরো পৃথিবীর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জায়গাগুলো ঘুরে বেড়ান পরম সুখ প্রাপ্তির আশায়। কিন্তু আমার কাছে আমার বাবা আমার মাই স্বর্গের সুখ।

দিঠি আনোয়ার ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমার আব্বু দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত একজন মানুষ। আব্বুর এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। আমার আব্বু গাজী মাজহারুল আনোয়ার এটাই আমার অনেক অনেক গর্বের বিষয়। আমি তার সন্তান হিসেবে অনেক স্থানেই সম্মানিত হই। আব্বুর সুনাম শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আছে। আমি জীবনে চলার পথে আব্বুর কর্মক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি বেশি ফলো করার চেষ্টা করি। তিনি তার বাবা-মাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন, সেবা করতেন। একজন সন্তান হিসেবে তিনি যেমন শ্রেষ্ঠ, একজন স্বামী হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ, একজন বাবা হিসেবেও তিনি পৃথিবীর অন্যকরম শ্রেষ্ঠ বাবা। আবার দাদা, নানা হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ। আমার জীবনের সবকিছুই আব্বু জানেন। আব্বুর সঙ্গেই শেয়ার করে শান্তি পাই। সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাবা,তারকা,শ্রদ্ধা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close