পার্থ মুখোপাধ্যায়

  ২০ জুন, ২০২০

কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে গডফাদার, বিস্ফোরক শ্রীলেখা

টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটে স্বজনপোষণ এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে শ্রীলেখা মিত্র যে অভিযোগ করেছেন তা নিয়ে মুখ খুলেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। যদিও এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননা বলে জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মুখ খুলেছেন প্রযোজক অশোক ধানুকাও। শুধুমাত্র প্রসেনজিৎ-এর সঙ্গে জুটি বেঁধেই কাজের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, ২০০১ -১০১৫ সাল পর্যন্ত প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির আর কোনও ছবি হয়নি। তারপরেও তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ছবি করে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন।এদিকে অন্নদাতা ছবি নিয়ে শ্রীলেখা মিত্র যে অভিযোগ করেছেন, সে প্রসঙ্গে প্রযোজক অশোক ধানুকা বলেছেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে প্রথম ফোন করেছিলেন অন্নদাতা ছবির জন্য। তবে ঋতুপর্ণা সেসময় আমেরিকাতে ছিলেন, তাই শ্রীলেখা মিত্রকে নিয়েছিলেন। তবে সেসময় যাঁদের দেখতে মানুষ চাইত, তাঁদেরকেই সাধারণত সিনেমায় কাস্ট করা হত। আর শ্রীলেখা অন্নদাতা'র আগে কোনও ছবিতে নায়িকা হননি। তাই শ্রীলেখার উপর ভরসা করতে পারেন নি। আসলে সে সময় প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটির ছবি চলত, তাই ওই জুটিকে নেওয়া হত। প্রসেনজিৎ কোনওদিনই একে নিতে হবে, ওকে নিতে হবে বলে ঠিক করে দেননি।

ইন্ডাস্ট্রিতে গডফাদার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গডফাদার হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি কোনও কিছুর বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেবেন। শ্রীলেখা মিত্র-র সেই অর্থে কোনও গডফাদার ছিল না। সেসময় মূলত, প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, তাপস পাল এরাই মূলত ইন্ডাস্ট্রি চালাতেন। তার মধ্যে প্রসেনজিৎ নম্বর ওয়ান, তিনি ইন্ডাস্ট্রি। সেসময় শ্রীলেখা মিত্রকে প্রথমেই নায়িকার চরিত্র দেওয়া হয়নি।পার্শ্ব চরিত্রই করতে হয়েছে,যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। কারণ, শ্রীলেখা মিত্র বলেছেন তখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে প্রসেনজিৎ-এর প্রেম। কারণ, মূলত বুম্বাদাই ইন্ডাস্ট্রি চালাতেন। ঋতুপর্ণা দেরি করে আসতেন, তারপরও তাঁকেই নায়িকার চরিত্রে নেওয়া হত। সেকারণেই শ্রীলেখা মিত্র টেলিভিশনেই বেশি কাজ করতে শুরু করেন। মজা করে বলেছেন ,আজ অবধি, কোনও হিরো, পরিচালক, প্রযোজক কেউই তাঁর প্রেমিক হয়নি। তাহলে কে কাজ দেবে, তার উপর তিনি ট্যারা কথা বলেন, সুন্দরি হওয়ার সুযোগও নেন না।শ্রীলেখা আরও বলেছেন, সাগর বন্যা বলে একটা ছবির শ্যুটিংয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েন। সেই ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন। সেসময় শ্রীলেখা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁর মায়েরও দুর্ঘটনা হয় একইসঙ্গে।পরিচালক দেখতে এসেছিলেন।অভিযোগ করেছেন ,প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দেখতে আসার সময় পাননি কারণ, তিনি তো ওই পর্যায়ে পড়েনই না। সে সময় শ্রীলেখার অশোক ধানুকার একটা ছবিতে কাজ করার কথা ছিল,কিন্তু হয় নি। পরে অন্নদাতা বলে একটা ছবিতে সই করান অশোক ধানুকা। পরে তিনি নাকি শ্রীলেখাকে ফোন করে জানান, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে কাজ করবেন না, বলেছিলেন। যুক্তি ছিল শ্রীলেখাকে দেখতে কেউ সিনেমাহলে যাবেন না। খুব খারাপ লেগেছিল, এরপরে শ্রীলেখা স্টুডিওতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে এড়িয়ে গিয়ে ফিরদৌসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরে অবশ্য জানেন ছবিটা করছেন,কারণ, তখন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার মধ্যে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেকারণেই ঢুকতে পেরেছিলেন। পরে ছবিটা হিট করেছিল।এরপর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়’র সঙ্গে আর ছবি করেননি শ্রীলেখা মিত্র।

শ্রীলেখা মিত্রও ডিপ্রেশনের রোগী। কিন্তু তিনি হারতে চাননি,বেঁছে আছেন। এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্রী নন। কিন্তু ডিপ্রেশন একটা ভয়ানক ব্যাধি,এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সুশান্ত সিং রাজপুতের অকাল মৃত্যুর পর ডিপ্রেশন নিয়ে মুখ খুলেছেন অনেকেই। স্বজনপোষন নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। উঠে এসেছে বেশ কিছু তাবড় ব্যক্তিত্বের নাম। অনেকেই সাহস পেয়ে মুখ খুলছেন। তবে অন্দরের চিত্রটা সর্বত্রই এক। সেই কথাই শ্রীলেখা তুলে ধরেছেন তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।সুশান্ত সিং রাজপুতের মতই তাঁর কোনও গডফাদার ছিল না এই ইন্ডাস্ট্রিতে।ফলে কাজ পেতে এবং কাজ টিকিয়ে রাখতে শ্রীলেখাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।তাঁর কথায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে সবসময়ই পাওয়ার গেম চলে।সেই সঙ্গে রয়েছে ক্ষমতার আস্ফালন।অবশ্য সেই ক্ষমতা কে কীভাবে ব্যবহার করবে তা নিতান্তই ব্যক্তিগত। শ্রীলেখা বলেছেন, ১৯৯৭-৯৮ যখন তিনি অভিনয় করতে আসেন তখন জুটি হিসেবে হিট প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা।কোনওদিনই মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন না। সবদিনই নায়িকার বোন, দিদি হয়েই থাকতে হল।এমনকী জুটিও তৈরি করতে পারলেন না শ্রীলেখা। বিশ্বাস করেন সব কিছু টিআরপির নিরিখে হয় না। শুধুমাত্র কাজের বিনিময়ে শ্রীলেখা মিত্র কোনও দিন কারোর সঙ্গে প্রেম করেনি, করবেন না। শ্রীলেখা অনুরোধ করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সাদা পোশাকে কেউ যেন শোক দেখাতে না আসেন। কারণ মৃত্যু শ্রীলেখা মিত্র তাঁর কাছের লোকদের সঙ্গেই সেলিব্রেট করতে চান। ভেবেছিলেন এই সোশ্যাল মিডিয়া, এই তঞ্চকতার জগত থেকে অনেক দূরে থাকবেন।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রসেনজিৎ,চিরঞ্জিত,ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত,শ্রীলেখা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close