চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২০ অক্টোবর, ২০১৮

মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আইয়ুব বাচ্চু

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। শনিবার বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে আইয়ুব বাচ্চুর শেষ জানাজা অনুষ্ঠি হয়। ওই মাঠসহ আশপাশের সড়কে ছিল মানুষ আর মানুষ। জানাজা শেষে বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাইশমহল্লা কবরস্থানে। সেখানে মায়ের পাশে সমাহিত হন তিনি।

জাতি-ধর্ম-দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশার মানুষ আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে হাজির হন। বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে মরদেহবাহী গাড়িটি জমিয়াতুল ফালাহতে পৌঁছায়। এর আগে বেলা ১২টার দিকে গাড়িটি পূর্ব মাদারবাড়িতে বাচ্চুর নানার বাড়িতে নেয়া হয়; সেখানে ভিড় করেন বন্ধু, স্বজন ও ভক্তরা।

শেষ জানাজায় ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ আবুতালেব মো. আলাউদ্দিন।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রমুখ। জানাজায় আইয়ুব বাচ্চুর বাবা মোহাম্মদ ইছহাকও অংশ নেন।

জানাজার আগে জমিয়াতুল ফালাহ মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান আইয়ুব বাচ্চুর অনুজ প্রতিম সোলস ব্যান্ডের জনপ্রিয় গায়ক পার্থ বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমাকে হাতে ধরে গিটার শিখিয়েছেন বাচ্চুভাই, ওয়ান টু ওয়ান যেটা বলে। জীবনে যাকিছু শিখেছি বা যাকিছু ইতে পেরেছি তার সবই বাচ্চুভাইয়ের কাছ থেকেই। এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে যাবেন, এটা কল্পনারও বাইরে। এই সময়টায় না গেলেই কি হতোনা? খুব তাড়াতাড়িই চলে গেলেন বাচ্চুভাই।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, বাচ্চুর জনপ্রিয়তা কত উঁচু পর্যায়ে ছিল তার জানাজায় মানুষের ঢলই সেটি প্রমাণ করেছে। তিনি শুধু জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে ছিলেননা। প্রগতিশীলতার যোদ্ধাও ছিলেন। মৌলবাদীদের সকল বাধা উপেক্ষা করে ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কনসার্ট করেছিলেন। তখন আমি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ডিসি ছিলাম।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সারাবিশ্বে বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যার কারণে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন চট্টলার এই গর্বিত সন্তান।

এর আগে শনিবার সকালে আকাশপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে আসা ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসেন স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ ২৫ স্বজন।

বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়িতে আইয়ুব বাচ্চুর নানার বাড়িতে মরদেহ আনা হয়। সেখানে আইয়ুব বাচ্চুকে এক নজর দেখতে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। প্রিয় শিল্পীকে দেখতে তাদেরকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ সদস্যদের।

এ সময় উপস্থিত আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তার যেন বেহেশত নসিব হয়। আর তাকে নিয়ে কারও মনে কোনো ক্ষোভ থাকলে মাফ করে দেবেন।

আহনাফ আরও বলেন, আমার বাবা হয়তো আপনাদের জন্য সর্বোচ্চটা দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছেন। তিনি অনেক করেছেন। আপনাদের কাছে শেষ কথা, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

শনিবার মাদারবাড়িতে বাচ্চুকে এক নজর দেখতে আসেন সোলসের প্রাক্তন সদস্য ও বাচ্চুর বন্ধু সুব্রত বড়ুয়া রনি। তিনি বলেন, তিন দশকে দেশের সংগীতাঙ্গনকে দুহাত ভরে দিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। সমৃদ্ধ করেছেন ব্যান্ড জগতকে। তবে তার ভাগ্যে জোটেনি কোনও জাতীয় পুরস্কার। এই কিংবদন্তিকে মরণোত্তর পুরস্কারে ভূষিত করা হোক। যাতে কিছুটা হলেও দায় শোধ হয়।

বাচ্চুর নানার বাড়িতে গিয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান। তার নামে চট্টগ্রামে যা-যা করা দরকার সব উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নেবে। আইয়ুব বাচ্চুর নামে চট্টগ্রামের মুসলিম হলের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নামকরণ করা হবে।

মেয়র বলেন, বাচ্চু সহজ সরল মানুষ ছিলেন। দেশ ও দেশের মানুষকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। গানের বাইরেও তিনি উজাড় করে দান করতেন। আজকের দুনিয়ায় এটি বিরল। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নাগরিক শোক সভারও আয়োজন করা হবে বলেও জানান মেয়র নাছির।

এর আগে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে ফাইরুজ সাফরাকে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি বলেছেন, কিছু বলার মতো অবস্থা আমার নেই। প্লিজ, আমাদের একটু সহযোগিতা করুন। আমরা অবশ্যই কথা বলব।

বৃহস্পতিবার সকালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আইয়ুব বাচ্চু মারা যান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চিরনিদ্রায়,শায়িত,আইয়ুব বাচ্চু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close