শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম অন্তপ্রাণ আইয়ুব বাচ্চু
সখিনা ম্যানশনে শোক
বাংলা ব্যান্ডসংগীত ইতিহাসের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম চট্টগ্রামেই। ৩৫ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমালেও তার মন পড়ে থাকত চট্টগ্রামে। জন্মস্থানের প্রতি ছিল তার অফুরান ভালোবাসা। বন্দর নগর থেকে যেন আরো ‘আইয়ুব বাচ্চু’ তৈরি হয় সে জন্য উদ্যোগও নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় উইন্ড অব চেইঞ্জ রেস্টুরেন্টের রুফটপে শুরু করেছিলেন ‘এবি লাউঞ্জ’।
তিনি ঢাকায় থাকলেও তার মন পড়ে থাকত চট্টগ্রামে। তার এক সময়ের বাসস্থান সখিনা ম্যানশনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গত আগস্ট মাস থেকেই সপ্তাহের প্রতি শনিবার রাতে এবি লাউঞ্জে চট্টগ্রামের তরুণ ব্যান্ডশিল্পীদের বসত আসর। প্রতিটি আসরেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে যেখানেই থাকতেন, অনলাইনে যুক্ত থাকতেন আইয়ুব বাচ্চু। এবি লাউঞ্জ উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন।
এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কাছে পেয়ে সেদিন আইয়ুব বাচ্চু জানালেন একটি অনুরোধ! গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামের নবীন ব্যান্ডদলগুলোর অনুষ্ঠান করা-সংক্রান্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়লে যাতে তাদের হেল্প করি—এই অনুরোধটুকু করলেন বাচ্চু ভাই। আমি ক্ষুদ্র মানুষ, তা-ও তাকে কথা দিলাম, আমার পক্ষ থেকে এ ধরনের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য থাকবে না। এ কথা বলাতেই তিনি অনেক খুশি হলেন। বারবার ধন্যবাদ জানালেন।
‘সত্যি বলতে কী, যার গান শুনে বড় হয়েছি, তার এত উচ্ছ্বাস দেখে আমিও ধন্য হয়েছিলাম সেদিন। বাচ্চু ভাই আসলেই খুব অমায়িক মানুষ ছিলেন। মুহূর্তেই মানুষকে আপন করার অনন্য প্রতিভা ছিল তার মধ্যে। চট্টগ্রামের ব্যান্ডশিল্পীদের অনেক স্নেহ, সহযোগিতা তিনি করতেন।’
ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সান্নিধ্য পাওয়া জনপ্রিয় ব্যান্ড দল তিরন্দাজের ভোকাল শান শাহেদ বলেন, আইয়ুব বাচ্চু ভাই আমাদের বলতেন, যেন কোনো সমস্যায় আসিফ মহিউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমাদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন আছে বলেও জানাতেন। সংগীত নিয়ে আমরা যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, সে জন্য তিনি কাজ করতে বলতেন। তিনি সত্যিকার অর্থে আমাদের অভিভাবক ছিলেন।
এবি লাউঞ্জের অন্যতম উদ্যোক্তা উইন্ড অব চেইঞ্জ রেস্টুরেন্টের চেয়ারম্যান সামি আহাম্মেদ বলেন, চট্টগ্রামের তরুণ ব্যান্ডশিল্পীদের জন্য কিছু করে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই এবি লাউঞ্জ। তার এভাবে অকালে চলে যাওয়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি।
চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার এলাকার তিনতলা বাড়িটিতেই জন্মেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এই বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিরিঙ্গিবাজারের হাজী নুরুজ্জামান আবাসিক এলাকার ‘হাজী বিল্ডিং’ ও ‘সখিনা ম্যানশন’-এ আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের একটি অংশ কেটেছিল। চট্টগ্রাম নগরের তিন ভবনে এখন শোকের ছায়া।
পিডিএসও/তাজ