তুহিন খান নিহাল

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

সোনালি দিনের নায়িকারা

একসময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকারা এখন শুধুই স্মৃতি। যারা অভিনয়, রূপ আর গুনের ঝলকানিতে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন স্বপ্নকন্যা হিসেবে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অনেকে হারিয়ে গেছেন। ঢাকাই সিনেমার সোনালি দিনের কয়েকজন নায়িকাকে নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।

কবরী

বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত কবরী। চলচ্চিত্রে আসেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে। ছবিতে অভিষেকের পরই সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন কবরী। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই। চলচ্চিত্রে আসার আগে চট্টগ্রামের এই মিষ্টি মেয়ের নাম ছিল মিনা পাল। বাংলা ছবির সোনালি সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই নায়িকা প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বৌ’ ছবিতে ‘নবীতুন’ চরিত্রে অভিনয় করে অর্জন করেছিলেন সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

শাবানা

বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের মুকুটহীন স¤্রাজ্ঞী শাবানা। কিংবদন্তি এ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর প্রথম চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। শাবানার প্রকৃত নাম রতœা। চিত্র পরিচালক এহতেশাম ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে তার শাবানা নাম দেন। তার পূর্ণ নাম আফরোজা সুলতানা। শাবানার পৈতৃকবাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার ৩৬ বছর কর্মজীবনে ২৯৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ষাট থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী। সাবলীল অভিনয়ের জন্য অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। শাবানা প্রথম জীবনে উর্দু ছবিই বেশি করতেন। তার প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস এস প্রডাকশন। ২০০০ সালে শাবানা হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। তিনি অভিনয়ের জন্য নয়বার ও প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।

ববিতা

ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ফরিদা আখতার পপি নামের এক কিশোরীর। চলচ্চিত্রে যার নাম রাখা হয় ‘ববিতা’। ষাটের দশকের শেষ দিকে (১৯৬৮) পরিচালক জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ ছবির মাধ্যমে ববিতার চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জহির রায়হান ছবিটি শেষ করতে পারেননি। এরপর নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত (১৯৬৯) ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে ফারুকের বিপরীতে অভিনয় করেন। যা ছিল নায়ক ফারুকের প্রথম অভিনীত ছবি। এ ছবিটিও শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। এরপর ববিতা জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান। সেই সূত্রে ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সংসার’। নুরুল হক বাচ্চুর ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেই ছবিতেই সুবর্ণা নাম বদলে ‘ববিতা’ নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করেন। এর পর থেকেই অতি সাধারণ কিশোরী পপি হয়ে উঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ‘ববিতা’। তিনি সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। ববিতা ২৫০-এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক এবং ২০০৩ ও ২০১৩ সালে দুবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।

সুচরিতা

টিনএজ ইমেজ নিয়ে রুপালি পর্দায় হাজির হয়েছিলেন মিষ্টি মেয়ে সুচরিতা। যদিও তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন, তখন তার নাম ছিল বেবী হেলেন। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘বাবলু’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও ১৯৭২ সালে পরিচালক আজিজুর রহমানের ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশী’ ছবিটি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। অভিনয়ে প্রথমদিকে তিনি খুব একটা সফল না হলেও পরে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং প্রথম শ্রেণির নায়িকা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে জায়গা করে নেন। ক্যারিয়ারের এক জনপ্রিয় মুহূর্তে তিনি বিয়ে করেন চিত্রনায়ক জসিমকে। তবে এই সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তিনি বেশ কিছু বিকল্পধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার লাভ করেন।

রোজিনা

রোজিনা চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ ছবির মাধ্যমে। এর আগে তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পণ্য ‘মায়া বড়ি’র বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে সবার নজরে আসেন। পরে তিনি এফ কবীর পরিচালিত ‘রাজমহল’ ছবির মাধ্যমে একক নায়িকা হিসেবে কাজের সুযোগ পান। এ ছবিটি সফল হয় এবং তিনি বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। রোজিনার বেশির ভাগ ছবিই পোশাকি। সু-অভিনয় ও গ্ল্যামার দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮০ সালে রোজিনা ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ‘জীবন ধারা’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।

চম্পা

চিত্রনায়িকা সুচন্দা ও ববিতার ছোট বোন চম্পা। প্রথমে মডেলিংয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন চম্পা। তারপর টিভি নাটকে অভিনয় করেন এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘তিনকন্যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চম্পার চলচ্চিত্রে আগমন। অভিনয় দক্ষতা ও ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য তাকে চলচ্চিত্রে সাফল্য এনে দেয়। সামাজিক ও অ্যাকশন উভয় প্রকার সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি সত্যজিত রায়ের ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের ‘টার্গেট’ সিনেমা এবং বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘লাল দরজা’ সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পান। এভাবে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। চম্পার মূল বৈশিষ্ট্য গ্ল্যামার, ফ্যাশনসচেতনতা এবং পোশাকে বৈচিত্র্য। গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্র ছিল তার সবচেয়ে বড় মাপের কাজ। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে ১০০-এর বেশি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। কাজের অনুকূল পরিবেশ আর বৈচিত্র্যময় চরিত্র না পাওয়ায় তিনি সিনেমায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। প্রায়ই তিনি দেশের বাইরে থাকেন। যে কারণে কাজ করা হয়ে উঠছে না।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সোনালি দিন,নায়িকা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist