রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিটে নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগের সাত শিক্ষক। শিক্ষকদের অভিযোগ, ‘ওই চার্জশিটে আমাদের না জানিয়ে এবং কথা না বলেই আমাদের নামে মিথ্যা ও ভুলতথ্য জবানবন্দি আকারে উল্লেখ করা হয়েছে।’বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে, সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আকতার জাহানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলার যে চার্জশিট মতিহার থানার তদন্ত কর্মকর্তা ব্রজগোপাল কর্মকার খুব সম্প্রতি জমা দিয়েছেন, তা সঙ্গত কারণেই আমাদের বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দকে ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত করেছে। কারণ, এই চার্জশিটে আমাদের সাত শিক্ষককের নামে ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দাখিল করা হয়েছে, তা সত্য নয়। নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য সহযোগে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। বস্তুত আমরা কেউ কখনও জবানবন্দি দেই নাই, পুলিশ বিভিন্ন সময় আমাদের কারো কারো সাথে কথা বলেছেন, করো সাথে একেবারেই কথা বলেননি। অথচ, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সাত শিক্ষকের নামে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি চার্জশিটে দায়ের করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘আমরা পুলিশের কাছে বলিনি বা দাবি করিনি, এমন অনেক মনগড়া তথ্য দিয়ে এই জবানবন্দি সাজানো হয়েছে। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দিকে নজর না দিয়ে বরং আমাদেও সহকর্মীবৃন্দকে অস্মানিত ও হেয় করেছেন।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্রজ গোপাল কর্মকার বলেন, ‘এক বছর তদন্ত করে তাদের সঙ্গে কথা বলেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমি একা কথা বলিনি, আমার সঙ্গে সিনিয়র অনেক অফিসার কথা বলেছেন ও তদন্ত করেছেন।’

এদিকে মামলার চার্জশিট নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বেলা সাড়ে ১১টায় বিভাগের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে বিভাগের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছি। এর আগে অনেকবার আমরা রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু এক বছর পর যে চার্জশিট দেওয়া হলো, তাতে কল্পকাহিনী উল্লেখ করা হলো। মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হলো। আমরা মনে করছি, সুষ্ঠু তদন্ত আমরা পাইনি।’ এরপর মানববন্ধন শেষে বেলা সাড়ে ১২টার রবীন্দ্র ভবনের ১২৩ নম্বর কক্ষে শিক্ষক আকতার জাহানের মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন থেকে অচেতন অবস্থায় শিক্ষক আকতার জাহানকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন তার কক্ষ থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর মতিহার থানায় ‘আত্মহত্যা’র প্ররোচণার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন তার ছোট ভাই কামরুল হাসান। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ আগস্ট একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান রাজাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্রজ গোপাল কর্মকার।

পিডিএসও/রানা