জবি প্রতিনিধি

  ১৩ জুন, ২০১৭

পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে

প্রধানমন্ত্রীকে জবি শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ৭ম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগের শামসুল ইসলাম লিখনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে মোহাম্মদপুর থানার এস আই শফিকের বিরুদ্ধে। মামলার পর থেকেই নিয়মিত মানসিক কষ্টের পাশাপাশি তাকে নানাভাবে হয়রানি করছে এসআই শফিক। শফিকের অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন লিখন। শামসুল ইসলাম লিখনের প্রধানমন্ত্রী বরাবর সেই খোলা চিঠি হুবুহু তোলে ধরা হলো।

মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী,

প্রচ- হতাশা ও দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে লিখছি। আমি জানি, আপনি ছাড়া মমতা নিয়ে কেউ আমার সমস্যার কথা শুনতে আসবে না। আপনি জাতির পিতার কন্যা, ষোল কোটি মানুষের রক্ষক। তাই আপনার নিকট আমার অধিকার বা আশা যাই বলি না কেন, বাকি সবার চেয়ে বেশি।

বিদ্যানন্দিনী প্রাণ প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা,

আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগের একজন হতভাগা ছাত্র। যার আজকে এমবিএ শেষ করে চাকুরী করার কথা। যার পিতা অনেক আগেই গত হয়েছেন। যার পরিবার খুবই অসহায়। আজ যেখানে আমার কোন অফিসে চাকুরী করার কথা , সেখানে আমি মামলার হাজিরা দিয়ে বেড়াই। আমি জানি, আপনি আমার ব্যথা বুঝবেন। আপনিও আমার মত পিতৃহারা। আপনার কষ্টের পাশে আমার কষ্ট কিছুই না। তারপরেও অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে লিখছি। আমি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মীও।

মমতাময়ী মা,

গত ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে আমার জীবনে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। যা আমি কোন দিন স্বপ্নেও ভাবিনি । গত বছর ডিসেম্বরের ১১ তারিখ আমার এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় প্রতিদিনের মত আমি বাসায় বসে পড়ছিলাম। সেদিনও মোহাম্মদপুর থানার এস আই শফিক আমাদের বাসায় আসে। উনি মাঝে মধ্যেই আসতেন। আমার মা ও বোনের সাথে দুর্ব্যহার করতেন। আমার বড় ভাইয়ের সাথে তার ব্যবসায়িক পার্টনারের দ্বন্দ্ব থাকায় , সেই পার্টনার আমার ভাইকে শায়েস্তা করার জন্য এস আই শফিকের আশ্রয় নেয় ।সেদিনও বাসায় ঢুকে আম্মা ও বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। আমার বড় ভাই কোথায় জানতে চায়। আমি পড়া বাদ দিয়ে তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাকে আমি প্রতিদিন আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে বলেন আমার বড় ভাইকে খুঁজতে এসেছেন। “থানায় নিয়ে যাব তোর বড় ভাইকে।” আমি জবাবে বলি, কোন ওয়ারেন্ট আছে ? এই সামান্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাটায় আমার জীবনে দূর্ভোগের সূচনা। শফিক সাহেব বলেন ,‘‘পুলিশের কোন ওয়ারেন্ট লাগে না । আয় , তোরে ওয়ারেন্ট দেখাই ।” এহেন ব্যবহারে আমি হকচকিত হয়ে যাই। তিনি আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে, আমি জগন্নাথের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেই । শফিক সাহেব বলেন ,‘‘তোদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথরে আমি পায়ের তলায় রাখি।” এমন দুর্ব্যহারে আমি ভয় পেয়ে যাই। মোহাম্মদপুর থানায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বড় ভাই কর্মরত। তাদের পরিচয় দিলে তিনি আমাকে ক্ষমতা দেখাচ্ছি বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন। আমার অসুস্থ মা এসে হাতজোড় করতে থাকলে তাকে তিনবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এস আই শফিক। আমি কোন উপায় না দেখে, নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দেই। এই পরিচয়টা আমার জন্য একেবারে কাল হয়ে গেছে। জবাবে শফিক সাহেব নিজেকে মন্ত্রী মীর্জা আজমের ভাতিজীর জামাই পরিচয় দিয়ে আমাকে গেটের বাহিরে বের করে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। আমাকে মানুষের সামনেই চোর ডাকাতের মত খাম্বার সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেদম মারধর করে। রাস্তার লোকজন এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে আমি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। আমাকে রাস্তা থেকে ধরে এনে দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে এসে বেদম প্রহার করানো হয়। তারপর কি হয়েছিল জানি না। যখন জ্ঞান ফিরে, তখন নিজেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিজেকে আবিষ্কার করি। সেখান থেকে মোহাম্মদপুর থানায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় গভীর রাত পর্যন্ত কারো সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়া হয় নি। থানার সেলে আমার হাত-পা, চোখ বেঁধে কয়েক দফা নির্যাতন করা হয়। আমি বারবার পরীক্ষার কথা বলে অনুনয় –বিনয় করলে তারা আমার হাতে প্রচ- মারধর করে। আমার মনে হচ্ছিল, ৭১ সালের কোন পাকিস্তানি নির্যাতন ক্যাম্পে আমি বন্দী আছি। পরদিন আমাকে কোর্টে তোলা হয় । আমার বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধোরের অভিযোগে মিথ্যা মামলা করে এবং দশ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয় । মাননীয় বিচারক আমার শারীরিক অবস্থা দেখে রিমান্ড মঞ্জুর না করে জামিন দেন। আমি দুই দিন প্রায় বিনা চিকিৎসায় কারগারে থাকার পর বের হয়ে আসি । তারপর থেকে হাজিরা দিতে দিতে আজ আমি বড্ড ক্লান্ত । রাতে ঘুমের মধ্যেও দুঃস্বপ্ন দেখি । হাড়ের মধ্যে তীব্র ব্যথা অনুভব করি । আমার শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে না পারায় ইয়ার ড্রপ হয়ে যায়।

মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী,

আমি শুনেছি আমার নামে চার্জশীট বের হয়েছে । আমরা খুবই অসহায় পরিবার। আমার পিতা সাবেক নৌ বাহিনির কর্মকর্তা ছিলেন । যিনি দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ডিউটি করেছেন। তার সন্তান হিসেবে আজ আমি পুলিশের চোখে অপরাধী । বাবা না থাকার কি যে কষ্ট , আপনার চেয়ে কে ভালো বলতে পারবে ? মিথ্যা সাক্ষীও হয়ত জোগাড় হয়েছে । হয়ত মিথ্যা সাক্ষীর উপড় ভিত্তি করে আমার রায় হবে । আমি সারা জীবনের জন্য পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামী হব । সমাজের চোখে আমি দাগী আসামীর তকমা পাব । কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমি আইন বিরোধি কোন কর্মকান্ড করিনি । আল্লাহ’র উপড় বিশ্বাস রেখেই বলতেছি, আমি নির্দোষ। এই চাপ সামলানোর ক্ষমতা আমার নাই। আমি তো কোন অপরাধই করিনি। যারা অন্যায় করল , তারাই আমার সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করবে । এ কেমন কপাল আমার !

বঙ্গকন্যা প্রিয় দেশরতœ,

মাঝেমধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করি। মনে হয় , মৃত্যুই আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারে। প্রতিদিন আমার মায়ের চোখের জল সহ্য হয় না । আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটটা এখন আমার কাছে বড় বোঝা। আমি যে মামলার আসামী !

মমতাময়ী জননী , আপনার অনেক ব্যস্ততা । কিন্তু আপনিই আমাদের অভিবাবক। তাই আপনার নিকট আমার এই খোলা চিঠি, আপনি আমাকে বাঁচান।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পুলিশের নির্যাতন,প্রধানমন্ত্রী,খোলা চিঠি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist