রাত পোহানোর অপেক্ষায় ডাকসু নির্বাচন
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাত পোহালেই সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।
সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার ১৭৩ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
ঐতিহাসিক এই নির্বাচন ঘিরে ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ঢাবি ক্যাম্পাস, যেন জাতীয় নির্বাচনের আবহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের।
এছাড়া সড়কের উপরে ও আশেপাশে ব্যানার-ফেস্টুন সাটানো ও টানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে সব দলের প্রার্থীর কম-বেশি ব্যানার-ফেস্টুন থাকলেও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের আধিক্য স্পষ্ট।
ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে।
দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে হতে যাওয়া এ নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে বিশেষ আগ্রহ বিরাজ করছে।
মধুর ক্যান্টিন, টিএসসিসহ প্রতিটি চা স্টলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী আলাপ। এসব আলাপের সারাংশ, কোন প্রার্থী কেমন ফলাফল করবে। আর ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত হবে কিনা? তবে, সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ৭ প্রতিবন্ধী প্রার্থী ৭৩১ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৫টি পদের বিপরীতে ২২৯ জন লড়ছেন। ভিপি পদে ১১ জন, জিএস পদে ১৪ জন এবং এজিএস পদের প্রতিদ্বন্দ্বী ১৩ জন।
অন্য প্রার্থীদের মতো প্রতিবন্ধীও ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এর মধ্যে ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তারা হলেন, বামজোটের সদস্য পদে আমজাদ হোসেন, ছাত্রলীগের যোশীয় সাংমা চিবল, স্বতন্ত্র রুবেল মিয়া ও সাহিত্য সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীন আলম।
আবাসিক হলে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। এরা হলেন, সূর্যসেন হলে জিএস পদে শওকত হোসেন, সূর্যসেন হলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে রবিউল ইসলাম রুবেল ও মুহসীন হলে সমাজসেবা সম্পাদক আবুল হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘নিরাপত্তা, ব্যালট, প্রার্থিতা, হল ম্যানেজমেন্ট, বুথ ও কেন্দ্র সব নির্ধারিত। আমাদের প্রস্তুতি শেষ। এখন অপেক্ষা করছি ভোটের।’
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী, হাউস টিউটর, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল বডি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল টিম, মোবাইল পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। সঙ্গে আর্চওয়ে, ক্যামেরা ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। এগুলোর মাধ্যমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তবে, প্রয়োজন ছাড়া কোনো পুলিশ থাকবে না।’
১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ডাকসুতে আর কখনও জয় পায়নি। ১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান।
১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভণ্ডল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান।
১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৯৬ বছরে ডাকসুর ইতিহাসে পরপর দুটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২।
১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ।
১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। এরপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি।
পিডিএসও/রি.মা