ওহী আলম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

  ০৭ অক্টোবর, ২০১৮

৫ বছরেও নামকরণ হয়নি নোবিপ্রবি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের

‘অপরাজেয় বাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘সাবাস বাংলাদেশ’, ‘দুর্বার বাংলা’, ‘বিজয় ৭১’, ‘চেতনা ৭১’ এই ভাস্কর্যগুলোর সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম আর বীর বাঙালির মুক্তির চেতনা। উদ্দীপনামূলক নামের এই ভাস্কর্যগুলো যেন স্বাধীন বাংলার এক টুকরো প্রতিচ্ছবি।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থান পাওয়া ভাস্কর্যগুলো যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যগুলো তরুণ-তরুণীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশকে জানার এবং চেনার ইচ্ছে তৈরি করছে।

উপকূলীয় অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (নোবিপ্রবি) রয়েছে এমনই একটি ভাস্কর্য।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন নাম পায়নি ভাস্কর্যটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে স্থাপিত এই ভাস্কর্যে নাম ঠিক করা নিয়ে যেন মাথা ঘামানোর সময়ই নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সাইদুল হক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় উপাচার্য নাম ঠিক করার প্রজ্ঞাপন দিলেও সেটি আর কাজে পরিণত হয়নি।

উদ্বোধনের সময় সাময়িকভাবে ভাস্কর্যটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্বাধীনতা ভাস্কর্য’। সেই অস্থায়ী নামের ওপর এখনো দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি।

ভাস্কর্যটির নাম ঠিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন মহল দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হচ্ছে হবে বলে কথা দিলেও কোন এক আজানা কারণে তা আর আলোর মুখ দেখছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এ ভাস্কর্যটির নামকরণের দাবি জানিয়েছি। বছরখানেক আগে আমাদের বুঝ দেবার জন্য লোকদেখানো নাম চাওয়া হয়। কিন্তু সে নাম বা নামকরণ কোন কিছুরই হদিশ নেই।’

সদ্য স্নাতক শেষ করা এক গ্র্যাজুয়েট আফসোস করে বলেন, ‘খুব ইচ্ছে ছিলো ভাস্কর্যটিকে একবার তার নাম ধরে ডাকবো, কিন্তু তা আর হলো না।’

নোবিপ্রবি’র এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানান, ‘মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি জিনিসেরই একটি পরিচয় থাকে, যা দিয়ে নির্দিষ্ট করে তাকে চেনা যায়। পরিচয় সংকটে হারিয়ে যায় ঐতিহ্য। একটি ক্ষুদ্র মাইটস, তারও পরিচয় লাগে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেও একটি মাইটস আছে। কিন্তু খুবই দুঃখজনকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ভাস্কর্য দীর্ঘ সময় ধরে নামহীন ভাবে পড়ে আছে। তার ওপর এই ভাস্কর্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে তৈরি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় প্রশাসন আশা করি এর দ্রুত নামকরণ করে এর ঐতিহ্যকে সম্মান দেখাবে। এই ভাস্কর্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্র্যান্ডিং করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মোমিনুল হকের সাথে ভাস্কর্যটির নাম ঠিক করা নিয়ে আলাপ হলে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের গোলচত্বরটির যেহেতু নামকরণ করেছেন, সেহেতু এটিও বাদ যাবে না।’

তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভাস্কর্যটির নাম চাওয়া হয়েছিল, আমি নিজে ব্যাক্তিগতভাবে দুটি নাম জমা দিয়েছিলাম। তবে আমার মতামত হচ্ছে ভাস্কর্যটির একটি নাম থাকা উচিৎ।’

পিডিএসও/এআই

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নামকরণ,নোবিপ্রবি,মুক্তিযুদ্ধ,ভাস্কর্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close