জাবি প্রতিনিধি
জাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
শিক্ষক রাজনীতির বলি হচ্ছে ৩৫০ শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে শিক্ষকদের ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম। বিভাগীয় সভাপতি ও শিক্ষকদের একটি প্রভাবশালী গ্রুপের দ্বন্দ্বে জিম্মি হয়ে ছাত্রজীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিভাগের প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী।
ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলেও বিগত এক সপ্তাহ ধরে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি ক্লাস ছাড়া কোন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এমনকি ঝুলে রয়েছে বিভাগের ৪২ ব্যাচের স্নাতকোত্তরের চুড়ান্ত পরীক্ষা। বন্ধ রয়েছে বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস-পরীক্ষাও।
জানা যায়, অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসান এ বছরের ২৬ জুলাই আদালতের নির্দেশনায় বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে অন্তত একটি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা। কিন্তু সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পরে অধ্যাপক মনজুরুল এখনো কোন সভা ডাকেননি। আর এই অভিযোগে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া থেকে বিরত রয়েছেন বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক।
তবে সভাপতির বক্তব্য, আমার দায়িত্ব বুঝে নিতে একটু সময় লাগছে। তাই যৌক্তিক সময়ে আমি এ সভা আহবান করবো। কিন্তু বিভাগের শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অনড় অবস্থানের রয়েছেন। ফলে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন বিভাগে গিয়ে ক্লাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি শিক্ষকদের প্রভাবে তারা মুখও খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
বিভাগীয় শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যাপক মনজুরুল হাসানকে বিভাগ থেকে দীর্ঘদিন সরিয়ে রাখার পর তিনিই আবার হাইকোর্টের নির্দেশে সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন। তাই তিনি বিভাগীয় শিক্ষকদের ওপর প্রতিশোধ পরায়ণ আচরণ শুরু করে একাডেমি সভা ডাকছেন না। বিভাগের শিক্ষকদের নতুনভাবে কোর্স বন্টন করাও সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া ২০১৮-১৯ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও ঝুলে আছে।
এদিকে সোমবার বিভাগের ২০ শিক্ষক একাডেমিক কমিটির সাধারণ সভা ডাকার জন্য লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসান বলেন, ‘যারা সারা বছর ক্লাস-পরীক্ষা নেয় না, তারাই ক্লাস নিচ্ছেনা। বিভাগের ৭ জন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারও ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাস-পরীক্ষা নিবে না বলে তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষকরা) আমাকে লিখিতভাবে জানায়নি। তারা অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছে। তারা ঘোষণা দিক যে, তারা ক্লাস নিবে না। তা তো করছে না। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যদি শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা না নেয় তবে সেটা হবে অমানবিক।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমিতো বলিনি একাডেমিক সভা ডাকবো না। আমি বিভাগের সব কিছু বুঝে যৌক্তিক সময়ে একাডেমিক সভা আহবান করবো। সেটা ১৫ দিন পরেও হতে পারে, এক মাস পরেও হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন- শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার না হয়।’
পিডিএসও/এআই