রাকিবুল হাসান, বাকৃবি প্রতিনিধি

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাকৃবি গবেষকদের দাবি

‘ইলিশ জীবন রহস্য উম্মোচনের গবেষণা ক্রেডিট হাইজ্যাক করার অপচেষ্টা’

গবেষণা দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অধ্যাপক ড. মো. সামসুল আলম বলেছেন, ইলিশ জীবন রহস্য উম্মোচনের গবেষণা ক্রেডিটকে হাইজ্যাক করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ইলিশ জীবন রহস্য উম্মোচনের গবেষণার কাজটি তারাই প্রথম করেছেন।

সম্প্রতি এটি নিয়ে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠলেও এর দাবিদার কেবল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করেছি আমরা। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলি প্রস্তুত হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে’ (এনসিবিআই) জমা করা হয় এবং ওই জিনোম ডাটাবেজ থেকে স্বীকৃতিও পান তারা।

ড. সামসুল আলম বলেন, ইন্ট্যারন্যাশনাল ডাটাবেজে কেবল বাকৃবির নামটিই রয়েছে এবং তাদের তথ্যগুলোই কেবল খুঁজে পাওয়া যায়। অন্য কেউ কাজটি করলে তাদের তথ্য থাকতো। এছাড়াও ইলিশের জিনোম বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এবং ১৮ জানুয়ারি আমেরিকার সানডিয়াগোতে ২ টি আর্ন্তজাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করা হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকেয়েন্সিং এবং ডি নোভো এসেম্বলী সম্পন্ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেন তিনি।

এসময় গবেষকরা বলেন, আমরা আবিষ্কারটি ১০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করার জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করছি। যখনই আমরা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকেয়েন্সিং এবং ডি নোভো এসেম্বলী সম্পন্ন শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করলাম এবং ওই গবেষক দলকে অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রও পাঠানে হয়েছে তখনই একটিমাত্র জাতীয় দৈনিকে তড়িঘড়ি করে তাদের ক্রেডিট দিয়ে একটা প্রতিবেদন ছাপানো হলো। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একই বিষয়ে অনেকে একই সময়ে গবেষণা করতেই পারে। আমাদের গবেষণাটি অনেক আগে সম্পন্ন করেছি এবং বিভিন্ন স্থানে তার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটা সুপার কম্পিউটারও ব্যবহার করেছি যার প্রমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে গেলেই পাওয়া যাবে।

সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাঃ গোলাম কাদের খানের সঞ্চালনায় এবং বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সামসুল আলম ও সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জীবন রহস্য উম্মোচনের মাধ্যমে ইলিশ গবেষণার একটি প্রশস্ত দরজা খুলে গেলে। তবে এটি জানতে ও বুঝতে আমাদের আরো সময় লাগবে। এথেকে সুফল পেতে আরো ধারাবাহিক গবেষণা প্রয়োজন। ইলিশ রক্ষায় অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে যেমন অভাশ্রয়ম প্রতিষ্ঠা, নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষনা ইত্যাদি। এটা সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে হচ্ছে কিনা, ইলিশ সাগর থেকে নদীতে কেন আসে, আবার প্রজননের পর আদৌ সাগরে ফিরে যায় কিনা এমন অনেক তথ্যই আমরা আবিষ্কৃত জিনোম সিকোয়েন্স থেকে জানতে পারবো, যা ইলিশের টেকসই আহরণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

পিডিএসও/এআই

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাকৃবি,ইলিশ,জীবন রহস্য,গবেষণা,ক্রেডিট,হাইজ্যাক,অপচেষ্টা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close