ঢাবি প্রতিনিধি
বাজেট প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল
শিক্ষাখাতে ২৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে যে বাজেট সংসদে পেশ করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান ও বাজেটে শিক্ষাখাতে শতকরা ২৫ ভাগ বরাদ্দ রাখার দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। শনিবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা ‘শিক্ষায় বরাদ্দ : জাতির সাথে প্রতারণা’ শীর্ষক এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স এর সভাপতিত্ত্বে বক্তব্য রাখেন বাসদ ঢাকা মহানগর(উত্তর) এর দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামন লিপন, ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক সজল বাড়ৈ, সদস্য মুক্তা বাড়ৈ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আলমগীর হুসেন সুজন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মুজাহিদ অনিক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে, যা গত বছর ছিল ৪,০০,২৬৬ কোটি টাকা কিন্তু সংশোধিত বাজেট দাড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা খরচ কম হয়েছে। এই খরচ কম হলেও দেখা যাচ্ছে জনপ্রশাসন খাতে ১৬ হাজার কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৬৬০ কোটি টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। অথচ জনগুরুত্বের বিবেচনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রম মন্ত্রণালয়, জ্বালানী খাতে বরাদ্দ কমেছে ও খরচ ও বাজেটের তুলনায় কম খরচ হয়েছে। তারা বলেন,গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় শিক্ষা খাতে ৬০০৭ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এবছর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ (শিক্ষা, প্রযুক্তি, ধর্ম, বিজ্ঞান) সব মিলে ৬৭ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৪.৬%, গত বছর এই বরাদ্দ ছিল ৬৫ আজার ৪৪৩ কোটি টাকা যা ছিল মোট বাজেটের ১৬.৩৪%। শুধুমাত্র শিক্ষা খাতে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা) বরাদ্দ ৪৭ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা যা বাজেটের মাত্র ১০.৭৯%, গতবার এই বরাদ্দ ছিল ৪৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা যা ছিল বাজেটের ১১.২৮%। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা বলে প্রতিবারই জনগনকে ধোকা দিচ্ছে, এই তথ্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে বাজেটের আয়তন বাড়ছে কিন্তু বরাদ্দ সেই হারে বাড়ছে তো নাই বরং ক্রমাগত এই বরাদ্দ কমছে।
তারা বলেন,দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে, শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে এর ফলে সাধারণ মানুষ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নানাবিধ সংকটে ভুগছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির নামে ক্রমাগত বেতন-ফি বাড়িয়ে চলেছে। শিক্ষা-গবেষণায় বরাদ্দ শূণ্যের কোঠায়। এই সংকট নিরসনে শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দের দাবি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক। অথচ সরকার সেই পথে পা না দিয়ে অতীতের ন্যায় শিক্ষা সংকোচনের নীতিকে বাস্তবায়নের পথই বেছে নিয়েছে। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে তারা বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। সেখানে লেখা ছিলো : ‘ ক্রমাগত শিক্ষার বাজেট কমছে কেন? ’, ‘ প্রহসনের শিক্ষাবাজেট ছাত্রসমাজ মানে না ’, ‘ শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দ কর ’, ' শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি বিরোধী বাজেট মানি না ’,‘ বাজেটের আকার বাড়ে, উৎপাদনশীল খাতে কমে কেন? ’, ‘ গণবিরোধী এই বাজেট ছাত্রসমাজ মানে না ’ ইত্যাদি।
সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।
পিডিএসও/রানা