ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৪ মার্চ, ২০১৮

জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবি

গণজাগরণ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে বিকালে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। একই সময়ে তাঁর উপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

গণজাগরণের মঞ্চের অন্যতম উপদেষ্টা মুহম্মদ জাফর ইকবালের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগ হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ঘুরে শাহবাগে পৌঁছে শেষ হয়।

মিছিল শেষে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে মানববন্ধন এবং বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় সারাদেশের জেলা এবং উপজেলায় একযোগে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে।

সমাবেশে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দেখতে চাই, জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টার বিচার হয়েছে। আর যদি না হয়, তাহলে আরো অনেক অনেক হত্যাচেষ্টা ও হত্যাকান্ড আমাদের দেখতে হবে। আমাদের দাবি, এখান থেকে শুরু হোক- আর কোন হত্যাকান্ড ঘটবে না এবং যে হত্যাকা- হয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনা বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আজকে জাফর ইকবালের উপর আঘাত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপরেও আঘাত, আপনাদের সবার উপরে আঘাত। এর দায় রাষ্ট্র কোনোভাবে এড়াতে পারে না। রাষ্ট্র মুক্তিবুদ্ধির চেতনার মানুষের কাছে দায়ী থাকবে এই হত্যাকান্ডের বিচার না হলে।

ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমাদের ভাবনায় ছিল না, প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম অভিভাবক জাফর ইকবাল আক্রান্ত হবেন, তার জন্য আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। কারণ জাফর ইকবালই বরং আমরা যখন আক্রান্ত হয়েছি তখন পাশে দাঁড়িয়েছেন, কথা বলেছেন। যখন কেউ কথা বলেনি, তখনও কিন্তু বাংলাদেশে একজন সোচ্চার মানুষ কথা বলেছেন।তিনি আরো বলেন, এই জঙ্গি ফয়জুরের পেছনে কারা অর্থ দিচ্ছে, কারা পরিকল্পনাকারী মূল হোতা, তাদের খুঁজে বের করে তাদের পরিচয় আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। সরকারকে বলতে চাই, একদিকে জঙ্গিদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবেন, আরেকদিকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন- তা হয় না। এদেশে স্পষ্টত দুইটা পক্ষ। একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, অন্যটি বিপক্ষের। বিপক্ষ শক্তি কোন ধরনের রাখডাক না করে ঘোষণা দিয়ে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

সমাবেশে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বাংলাদেশ থিয়েটার পরিষদের সাংঠনিক সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল সেই অপশক্তি যখন এদেশে বিচরণ করছে তখন এ ধরণের ঘটনা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই তারা মাঠে নেমেছে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য। এই অপশক্তির দীর্ঘদিন বিচরণের ফল হচ্ছে জঙ্গিবাদ।

তিনি বলেন,এই হামলাকারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কারা এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদের খুজে বের করতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর। তাই বলে আমাদের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। এদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যথেষ্ট নয়। তার জন্য সকলকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। এর সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটাতে হবে। আমাদের সন্তানদের মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে তাদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটবে, তারা বিপথগামী হবে।

সভাপতির বক্তব্যে কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, চিকিৎসকরা জাফর ইকবালকে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করলেও আমরা শঙ্কামুক্ত নই। এখন নিজেরা নিজেদের প্রহরী হতে হবে। সদা সজাগ থেকে মাঠে নেমে আন্দোলন করতে হবে। এ আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এর জন্য আমাদের সকলকে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো হত্যাকান্ডের দৃশ্যমান বিচার হয়নি। আমাদের এ বিচারহীনতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। তবে সেটা শুধু ফেসবুকে নয়, মাঠে নেমে। আমরা যদি মাঠে নেমে সরাসরি আন্দোলন না করি তাহলে শুধু ফেসবুকে প্রতিবাদ করে কিছুই হবে না।

হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য দাড়িয়ে থাকা পুলিশের নীরব ভূমিকা আমাদের হতবাক করে।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গণজাগরণ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist