শাকিল আহমেদ, ঠাকুরগাঁও
দুই আঙুলে লিখে এসএসসি পরীক্ষা
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই হাতের আঙুল দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে একরামুল হক। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সে। ছেলেটির বাঁ হাত নেই, আছে ডান হাত, তাও আবার অর্ধেক। সেই অর্ধেক হাতের অংশের মধ্যে রয়েছে দুটি আঙুল। এতসব প্রতিকূলতা থাকার পরও থেমে যায়নি ছেলেটির লেখাপড়া।
লেখাপড়ার প্রতি দারুণ আগ্রহ ছেলেটির। জেএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এই অদম্য শিক্ষার্থীর নাম একরামুল হক। বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। তার বাবা নজিব উদ্দীন, তিনি দিনমজুর। মা গৃহিণী। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান একরামুল। তার এক বড় ভাই আছে।
একরামুল হক পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট হেমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পীরক্ষা কেন্দ্রের ১৪ নম্বর রুমে ৪৬ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘আইসিটি’ পরীক্ষা দিচ্ছে একরামুল হক।
একরামুল তার ডান হাতের দুই আঙুলের মাঝখানে কলম ধরে কাঁধে ভর দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখছে। তার হাতের লেখাও অনেক পরিষ্কার। আর তার ওই সুন্দর লেখা দেখে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও অভিভূত। পরীক্ষা শেষে একরামুল হকের সঙ্গে কথা হলে সে বলে, ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপর ২০১৫ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি সে। এতেও সে মনোবল হারায়নি।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে ভালো পরীক্ষা দিচ্ছে। লেখাপড়া শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে বলে জানায় সে। সহপাঠী শান্ত বলে, ছোটবেলা থেকেই একরামুল শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারপর সে দুই আঙুল দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত।
একরামুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একটি মাটির ঘর। সেই ঘরের ভেতরে দুটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে তার বাবা-মা ও অন্য কক্ষটিতে সেসহ তার ভাই ঘুমায়। স্থানীয় সফিকুল ইসলাম বলেন, একরামুলের বাবা নজিব উদ্দীন দিনমজুরি করে ৩০০ টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। টাকার অভাবে প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার হেঁটে একরামুল বিদ্যালয়ে যায়। এসব সমস্যা থাকার পরও একরামুল লেখাপড়া ছাড়েনি।
পীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পীরক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার শাহের আলম বলেন, ‘একরামুলের পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। সে একজন মেধাবী ছাত্র। সে তার ডান হাতের দুটো আঙুল দিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা দিতে তার যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিক বিবেচনা করে আমরা সব সময় তার খোঁজখবর নিচ্ছি। আশার করি একরামুল ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে।’
একরামুলের বাবা নজিব উদ্দীন বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই আমার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারপরও সে মনোবল হারায়নি। আর তাই সে এখন লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন দেখছে। অভাবী পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ করতে পারব কি না, সে দুশ্চিন্তায় সময় কাটে।’
পিডিএসও/তাজ