খালিদ হাসান, জবি

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

অবহেলায় দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য

২৫ মার্চ গণহত্যার নিরব সাক্ষী হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য ‘৭১ এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্মারক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণকবরের ওপরে এ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ভাস্কর রাশা।১৯৮৮ সালে এ ভাস্কর্যের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯১ সালে।২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হয়।তবে বর্তমানে অনেকটা অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্যটি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটু এগিয়ে গেলে নতুন ভবনের সামনে চোখে পড়ে ভাস্কর্যটি। এর একটি অংশে সবচেয়ে বেদনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে। এ অংশে দেখানো হয়েছে- পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, গর্ভবতী মাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হচ্ছে, লাশ ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পত্রশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এটি সে সময়ের বাংলাদেশের প্রতীক। ভাস্কর্যটির অপর অংশে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধ। এছাড়া, দেখানো হয়েছে সবাই আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তার চোখে যুদ্ধজয়ের নেশা। ভাস্কর্যের নিচে রয়েছে পানি, এটি দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে। পানির ভেতরে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, এটি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে।বর্তমানে ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাবর্ধনের অদ্বিতীয় শিল্পকর্ম। এমনকি এটি দেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ও গণহত্যার গুচ্ছ ভাস্কর্য। এর চারদিকে আছে অপরূপ সৌন্দর্যময় পানির ফোয়ারা। ফোয়ারা ছাড়লে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাতের বেলায় রঙিন বাতির আলোয় এর রূপ আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।

পানির ফোয়ারা বেশ কয়েকটা দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ভাস্কর্যটির আস্তরণ খুলে পড়ছে। এতে এর সৌন্দর্যহানি হচ্ছে।দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয়না ভাস্কর্যটি, ভাস্কর্যটির সংরক্ষণের দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভাস্কর্যটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্ত চত্ত্বর’ নামক স্থানে, যেটি ছাত্রছাত্রীদের আড্ডা দেওয়ার অন্যতম স্থান। ভাস্কর্যটির চারিদিকে রয়েছে বসার স্থান। ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য্য অনেকটাই বিকৃতি হয়ে গেছে। ভেতরের অংশের রঙ উঠে গিয়ে মরিচার মত ঝরে পড়ছে। ভাস্কর্যটির ভেতরে বাশ, খুটি ইত্যাদি রাখা আছে ।রয়েছে পানির বোতল,চিপসের প্যাকেট সহ ময়লা আবর্জনা।

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ জানান,‘ভাস্কর্যটির প্রধান আকর্ষণ হলো পানির ফোয়ার এবং সেটি বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ রাখা হয়।বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শুধু মাত্র ভাস্কর্যটির সংস্কার করা হয়,তাছাড়া সারা বছর অযত্নেই পরে থাকে।’ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ জানান,‘দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য এটি,যা আমাদের জন্য গৌরবের,কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতায় এখন এটি মৃতপ্রায়।অনেক শিক্ষার্থী এর সঠিক নাম অ ইতিহাস জানেন না।’

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা বলেন,‘এটা অপরিষ্কার বা নোংরা রাখা কোনভাবেই উচিৎ না। যদি এটি কোনভাবে অপরিষ্কার থেকে থাকে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব, বিশ্ববিদ্যালয় এর উর্ধ্বতন সম্প্রসারণ কাজ চলার জন্য এটির নিয়মিত পরিচর্যা বন্ধ আছে।’ কাজ শেষ হলে তিনি এটির নিয়মিত পরিচর্যার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গুচ্ছ ভাস্কর্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist