সম্পাদকীয়

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৭

মিয়ানমারের ৪ শর্ত

বিশ্ব সমাজব্যবস্থা সমাজ পরিবর্তনের জাঁতাকলে পড়ে মানবতা যেন তার সব ঐতিহ্য হারিয়ে এক জড়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। একসময় মানবতার এ নান্দনিক সুরে মানব মনে যে নন্দনকাননের জন্ম হয়েছিল, আজ তার লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া ভার। সভ্যতাও হারিয়ে গেছে সীমাহীন বর্বরতায়। সর্বশেষ মিয়ানমারের আচরণ আমাদের সেই বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে, লাখ লাখ মানুষকে নিজভূমি থেকে উৎখাত করে বলছে, ওরা মিয়ানমারের প্রকৃত নাগরিক কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত বিবেচনায় ফেরত নেওয়া হবে। ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সর্বশেষ তারা চারটি শর্ত আরোপ করেছে।

নতুন শর্তে বলা হয়েছে—এক. যেসব রোহিঙ্গা সে দেশে বসবাস করেছে তার প্রমাণপত্র দেখাতে পারলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা সেই প্রমাণপত্র পাবেন কোথায়? তাদের কাছে কখনো তা হস্তান্তর করা হয়নি। আর প্রমাণপত্র যদি দেখাতেই হয় তা দেখানোর দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের নয়। এ দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। শত শত বছর ধরে বাস করা মানুষকে আজ নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন কেন হচ্ছে, তা কারো বোধগম্য নয়। তবে এটুকু পরিষ্কার, মিয়ানমার বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে আগ্রহী। কোনো নীতি কথায়, সে আর বিশ্বাসী নয়।

বাকি তিন শর্তের কথা না বলে এখানে একটি প্রচলিত গল্প বলা যেতে পারে। যুদ্ধফেরত সেনানায়ক রাজার জিজ্ঞাসা—বলো সেনাপতি, এত সৈন্য এবং শক্তি নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার পরও হেরে এলো কেন? উত্তর সন্তোষজনক না হলে তোমার গর্দান যাবে। সেনাপতি বললেন, হুজুর হেরে যাওয়ার পেছনে ১৯টি কারণ রয়েছে। রাজা বললেন, বলো। সেনাপতি বললেন, প্রথম কারণ ছিল যুদ্ধের তৃতীয় দিনেই আমাদের গোলাবারুদ সব শেষ হয়ে যায়। রাজা বললেন, থাম! আর কারণ দর্শানোর প্রয়োজন নেই। মিয়ানমারের শর্ত প্রসঙ্গে প্রথম শর্তটি শোনার পর বাকি তিনটি শোনার প্রয়োজন নেই।

মিয়ানমার যে শর্তের কথা উত্থাপন করেছে, তা পূরণ করা যে অসম্ভব বিদেশি কূটনীতিকরা এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়ে বলেছেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে যারা ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছেন, তাদের কাছে নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের কোনো নথি না থাকাটাই স্বাভাবিক। সব প্রমাণাদি মিয়ানমার সরকারের কাছে থাকতে হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মিয়ানমার সরকার দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গাদের কোনো প্রমাণ সংরক্ষণ করেনি। বিপরীতে বলা যায়, তারা নিজেরাই তা সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। সুতরাং সময় এসেছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন করে ভেবে দেখার। যে ভাবনায় থাকতে হবে আরও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,মানবতা,মিয়ানমার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist