কামার ফরিদ

  ২১ অক্টোবর, ২০১৭

পুলিশ আমাদের লজ্জা এবং

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সমাজের সবাই খারাপ নয়। ভালো-খারাপ মিলিয়েই সমাজ। তবে পুলিশের ব্যাপারে এ তত্ত্ব আর টিকছে না। সমাজ বলছে, ওরা আজ রক্ষকের ছদ্মবেশে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গোটা সমাজব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। ভেঙে পড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা। এখানে আবারও বলতে হয়, তাদের মধ্যে সৎ ও সাহসীরাও আছেন। তবে তারা আজ সংখ্যালঘু। সংখ্যাগরিষ্ঠের অনৈতিক চাপের কাছে তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগটাও নিম্নমুখী।

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার দৈনিক ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ পত্রিকার প্রতিনিধি দিদারুল আলম জিসানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। চোখ উপড়ে ফেলারও চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আল ফুয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। এখানে প্রশ্ন হলো, একজন সাংবাদিককে সন্ত্রাসীরা কেন তাদের টার্গেট বানাল? সাংবাদিকের অপরাধ, সে তার পেশাদারিত্বকে মর্যাদা দিয়ে দায়িত্ব পালন করায় দুর্বৃত্তদের স্বার্থে আঘাত লাগে। আর তারই ফলে সাংবাদিক জিসান আজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

এবার জানা যাক সন্ত্রাসীদের পরিচয়। রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পূর্ব রাজারকুল হাজীপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবু বক্কর। রামুর ইয়াবা সম্রাট হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। শুধু ইয়াবা সম্রাট হিসেবেই নয়, এলাকায় নানা কুকর্মের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা সর্বজনবিদিত। তার বিরুদ্ধে এলাকার কলেজছাত্রী ইয়াসমিনকে (১৮) অপহরণের পর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা আছে। কলেজে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময়ে ইয়াসমিনকে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী বক্কর নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। বিষয়টি জানার পর পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে দায়সারা গোছের একটি আপস মীমাংসার নাটক মঞ্চস্থ করে।

থানা কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে ইয়াসমিন পরিবার স্থানীয় পর্যায়ে সুবিচার প্রার্থনা করে। ফলে ঘটনা হিতে বিপরীতে গড়ায়। টেলিফোনে নানা হুমকি-ধমকির পর সন্ত্রাসী বক্কর ইয়াসমিনকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। গত ৩০ আগস্ট সন্ত্রাসী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও তার তিন সহযোগী ইয়াসমিনকে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। আশপাশের লোকদের সহায়তায় ইয়াসমিন রক্ষা পেলেও সাংবাদিক জিসান নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। জিসানের অপরাধ, বক্করের এই অপকর্মের সংবাদ তার পত্রিকায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে এবং তিনিই সংবাদদাতা।

জানা যায়, রামু থানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী আবু বক্করের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, থানার কেউ কেউ বক্করের কাছ থেকে তার অবৈধ ব্যবসার বখরা পেয়ে থাকেন বলেই এলাকায় তাকে স্পর্শ করার মতো কেউ নেই। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার বদলে পাহারা দেওয়ার ভূমিকায় নিয়োজিত। আর সে কারণেই আজ আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, পুলিশ আমাদের লজ্জা। অবশ্য, সবাই নয়।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পুলিশ,লজ্জা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist