reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নৌকা স্কুল : বিশ্বের ১০ মডেল স্কুলের একটি

ভবিষ্যতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সন্তানরা বন্যাপ্রবণ এলাকায় কীভাবে স্কুলে যাবে? এই সমস্যার সমাধানে একজন বাংলাদেশি স্থপতির উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে জীবন এগিয়ে নেওয়ার সহনশীল 'নৌকা স্কুল' এখন বিশ্বে সমাদৃত। এ স্কুলে দেশের বন্যায় প্লাবিত প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা ইন্টারনেট ও সৌরবিদ্যুৎ সংবলিত শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে। গত সপ্তাহে এই 'নৌকা স্কুল' বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএনের জরিপে 'বিশ্বের অন্যতম ১০টি উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা'র একটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশের তরুণ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ানের নৌকার মধ্যে তৈরি 'ভাসমান স্কুল' এখন বিশ্ব মডেল স্কুল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখে থাকা ভারত, চীন, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়াসহ আরও অনেক দেশে চালু হয়েছে মোহাম্মদ রেজওয়ানের মডেলের এই ভাসমান স্কুল। ১৬টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। তার প্রকল্পকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে দুটি তথ্যচিত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা আরও অনেক দেশে চালু হয়েছে এই নৌকা স্কুল। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্ট্নোভেনিয়ার মতো উম্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে যুক্ত হয়েছে এই স্কুল। অসাধারণ উদ্ভাবন নৌকার মধ্যে তৈরি এই ভাসমান স্কুল নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তথ্যচিত্র 'ইজি লাইক ওয়াটার'।

আফ্রিকা, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্যাপ্রবণ এলাকায় বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উম্নয়ন সংগঠনগুলো মোহাম্মদ রেজোয়ানের নৌকা স্কুলের ধারণা অনুসরণ করছে। ফলে নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ সহজ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও অন্যান্য সংগঠন রেজোয়ানের উদ্ভাবিত এই নৌকা স্কুলের মডেলের অনুকরণে হাওর ও বিলে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান করছে।

সিএনএনের মতে, বাংলাদেশের উদ্ভাবিত সৌরশক্তিসম্পম্ন ভাসমান স্কুল সমগ্র বিশ্বে একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। প্রতিদিন সকালে প্রাথমিক স্কুলগুলো বিভিম্ন গ্রামে যায় এবং শিশুদের বাড়ির সামনে থেকে নৌকায় তুলে নেয়। তারপর নৌকাটি একটি জায়গায় দাঁড়ায় এবং ৩০ জন শিশুকে নৌকার ভেতরেই শিক্ষা প্রদান করে। স্কুলগুলোতে একটি ল্যাপটপ, শত শত বই থাকে এবং সোলার প্যানেল থেকে উৎপম্ন বিদ্যুতের মাধ্যমে নৌকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো চালানো হয়।

প্রায় প্রতি বছরই মৌসুমি বন্যায় বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যা বড় ও দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার সবচেয়ে বড় শিকার স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বর্ষার সময় দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বন্যায় দেশের ২ হাজার ৬৪০টি স্কুল দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকে। এর আগে ২০০৭ সালের বন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্কুল ডুবে যাওয়ার কারণে। বর্ষায় স্কুলে যাওয়ার অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকে। অনেক স্কুলের ক্লাসরুমও পানিতে ডুবে থাকে। এর ফলে শুধু স্কুল থেকে নয়, পুরো শিক্ষাজীবন থেকে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ে।

চলনবিল নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে বিস্টৃতত একটি বিলের নাম। চলনবিল সংলঘ্ন অঞ্চলগুলো বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় পানিতে ডুবে থাকে। ভৌগোলিকভাবে এমনিতেই বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা বর্ষায় বন্যাকবলিত হয়।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল এলাকার সিধুলাই সেরকমই একটি বন্যাকবলিত গ্রাম। এ গ্রামেরই সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। ১৯৯৮ সালে তরুণ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান প্রথমে নিজ গ্রামে সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামটি বন্যাকবলিত। পুরো এলাকা বছরের বেশি সময় বন্যা ও পানিতে ডুবে থাকে। রেজওয়ান চিন্তা করলেন ভাসমান পানিকেই গ্রামের উম্নয়নে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। সে ভাবনা থেকেই তিনি নৌকার মধ্যে স্কুলের নকশা করলেন। স্থাপন করলেন 'ভাসমান স্কুল'। ২০০২ সালে এই স্কুল যাত্রা শুরু করে। সেই যাত্রায় প্রথমে তার সম্বল ছিল স্কলারশিপের মাত্র ২২ হাজার টাকা। ২০০৫ সালে মোহাম্মদ রেজোয়ান একটি অবিশ্বাস্য সুসংবাদ পেলেন। তার দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন বড় আকারে সম্প্রসারণের জন্য তাকে এক মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ রেজোয়ানের এই ছোট প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, নৌকার কলেবর বৃদ্ধি পায়, সব নৌকায় সৌরবিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার আনা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটিতে ৫০ হাজার বই ও ১০০টিরও বেশি কম্পিউটার আনা হয়। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতার উদারতায় এখন বাংলাদেশের ভাসমান স্কুলের শিক্ষার্থীরা সৌরশক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে। এই বর্ষা এবং বন্যায় বিধ্বস্ত অঞ্চলেও শিশুরা শিক্ষা সুবিধা পেয়েছে।

'সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা' জাতিসংঘ পরিবেশ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পায়। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তারা বছরে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা, তথ্য, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। বর্তমানে ২২টি স্কুলের নৌকায় প্রতিদিন তিন শিফটে ১ হাজার ৯৮০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নৌকা স্কুল,১০ মডেল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist