মীর হেলাল

  ২৭ মে, ২০১৭

প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তরুণদের মতামত

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মানেই নব উদ্যম এবং উচ্ছ্বাসে সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়। সেই প্রত্যয়ের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা সাহস, ভালোবাসা ও অনুভূতির খবর উঠে আসে সংবাদপত্রে। নিত্যদিনের পাঠকহৃদয়কে সংবাদপত্রই করে উদ্বেলিত, আনন্দিত এবং বেদনাহত। এ সকল অনুভূতিকে ধারণ করেই পাঁচটি বছর অতিক্রম করেছে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ। এ সময়ে সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির অনেককিছুই জয় করেছে পত্রিকাটি। পাঠক হিসেবে যুক্ত হয়েছে তারুণ্যের কাফেলা। যেখানে অসংখ্য চোখ, অসংখ্য হাত এবং পা-এর যোগফল সম্ভাবনার কথা বলে। এ মিছিল থামবার নয়।

২৫ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনেক তরুণ জানিয়েছেন তাদের ভালোলাগা-ভালোবাসা। তারাও স্বপ্ন দেখেন সুন্দর নির্মাণের। যেহেতু পত্রিকা একটি সামাজিক আরশি, সেই আরশিতে ভেসে উঠতে চান সম্ভাবনাময়ী এসব তরুণেরা—

যাত্রা শুভ হোক

শরাফত হোসেন সাংবাদিক

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা ছিল। আর এখন গুনে শেষ করতে ক্লান্ত হতে হয়। কিছু পত্রিকা আছে যেগুলোর নাম অনেকেই মনে করতে পারেন না, কিছু পত্রিকা বন্ধও হয়ে গেছে। সে বিবেচনায় পাঁচ বছর বেশি সময় না হলেও প্রতিদিনের সংবাদ নিজস্ব একটি পথ তৈরি করতে পেরেছে। মোটা দাগে না হলেও প্রকাশনাটির নির্দিষ্ট পাঠক শ্রেণি রয়েছে এবং আর ১০টি প্রকাশনা থেকে কিছুটা আলাদা একটি অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছে এই অল্প সময়ে।

আমাদের প্রকাশনা জগতের সাম্প্রতিককালের একটি বড় ঘটনা বা খবর হলো আগামী দিনের সাংবাদিকতা হবে অনলাইননির্ভর। তার পরও নতুন করে কয়েকটি দৈনিক প্রকাশ হতে যাচ্ছে। আরো কিছু অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তার মানে এখনো প্রিন্ট সংস্করণের গুরুত্ব আছে, অন্তত আমাদের দেশে। সংবাদ পরিবেশনে সত্যনিষ্ঠ হলে নিকট ভবিষ্যতে প্রিন্ট মিডিয়া গুরুত্ব হারাবে না সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে শিরোনাম এবং বিষয়বস্তু ঘুলিয়ে ফেলে। ফলে পাঠক বিভ্রান্ত হন। বিরক্তি নিয়ে ফিরেও আসেন। কিন্তু প্রিন্ট সংস্করণের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ অতটা তীব্র রূপ নেয়নি। অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্র এখন আগের চেয়ে অনেক বিস্তৃত। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকতা বলতে মানুষ খবরের কাগজকেই বুঝত। এখন খবরের কাগজের স্থান কিছুটা হলেও দখল করে নিয়েছে টেলিভিশন, পাশাপাশি সাংবাদিকতার সুযোগ তৈরি হয়েছে রেডিওতেও, আর অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কথা আগেই বলেছি। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খবরের কাগজগুলোও অনলাইন এডিশন চালু করেছে। অনেকে মনে করছেন, টেলিভিশন, রেডিও চ্যানেল, অনলাইনমাধ্যম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। তার পরও সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজতে পাঠক সংবাদপত্রেই আস্থা রাখছেন।

আমাদের প্রচারমাধ্যমের ব্যাপারে সাধারণের কাছে অনেক অপপ্রচার আছে। অনেকে সাংবাদিকতার ইথিক্স না মেনে সংবাদ পরিবেশন করেন বলেই এমনটা হয়েছে। আজকের দিনে কম পরিশ্রমে সহজ সাফল্য লাভের দিকেই সবার ঝোঁক। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটছে, ফলে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকতা কখনো কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। নিজে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত আছি বলে, সংবাদমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করি বলে-একথা বলতে পারছি।

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বর্তমান প্রজন্মের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে, যদিও পেশাদারিত্বে ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি অবিলম্বে দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই দাবি করে, তাদের পাঠকের সিংহভাগ তরুণ। কিন্তু তরুণের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদার প্রতিফলন দেখা যায় না পৃষ্ঠা ওল্টালে। হয়তো বাণিজ্যিক বিবেচনায় কেউ কেউ এমন দাবি করে থাকেন। আবার অনেকে সত্যিকার অর্থেই তরুণ জনগোষ্ঠীকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে। প্রতিদিনের সংবাদ সে রকম একটি সংবাদপত্র, যারা প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে সমৃদ্ধির পথে পা বাড়ায়। এই যাত্রা সময়ের সঙ্গে ঋদ্ধ হবে বলেই বিশ্বাস করি।

প্রতিদিনের সংবাদ তারুণ্যে চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে—একজন পাঠক হিসেবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

সত্যের কাছাকাছি

সোহেল নওরোজ গল্পকার ও ব্যাংকার

মানুষের মন একটা পথ ধরে হাঁটে। সে পথ সব সময় কল্পনার সমান্তরাল হয় না। চিন্তার সঙ্গে বাস্তবতার সখ্য হয়, সংঘাত হয়। মানুষের ভাবনা নতুন প্রাণ পায় কিংবা ধাক্কা খেয়ে গতিপথ বদলে যায়। স্বপ্নের বুননে টুপ করে ঢুকে পড়ে দুঃস্বপ্ন। কখনো কখনো ঘটনার আকস্মিকতায় এলোমেলো হয়ে যায় ভাবনার জগৎ, ভেঙে যায় চিন্তার শৃঙ্খল। একটা মন তথা একটা মানুষ যা কিছু ধারণ করতে চায় বা ধারণ করতে পারে, ভুলে থাকতে চায় বা ফেলে এগিয়ে যায়, প্রকাশ করতে চায় বা সংকোচ-ভয়ে এড়িয়ে যায়—তার প্রতিফলন ঘটে কয়েকটি মাত্র পৃষ্ঠায়। সংবাদপত্র তাই মানুষের মনেরই বিম্ব। একটু বেশিই তরতাজা, সোজাসাপ্টা, খোলামেলা। অপ্রিয় সত্যকেও মিথ্যার আবরণ থেকে বের করে এনে চমকে দেয়। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার সমান্তরালে নিত্য কথা বলে যায়। প্রতিদিনের সংবাদ দৈনন্দিন ঘটনা-অনুঘটনা ধারণ করে অতীতকে সঙ্গে করে আগামীর পথে চলছে, এক-দুই করে পাঁচ বছর!

আমরা সংবাদমুখী মানুষ। কিংবা ঘটনা ও দুর্ঘটনার আধিক্য আমাদেরকে সংবাদমুখী করে রাখে। একটা সংবাদপত্রের আবেদন বা অবদান তাই অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা তা করিও না। সকালের নাশতার টেবিলে, অফিসের ডেস্কে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা যানবাহনে সংবাদপত্রের উপস্থিতি অপরিহার্য। কাগজে ছাপার অক্ষরের পাশাপাশি আছে অনলাইন এবং ই-সংস্করণ। সংবাদপত্রকে যে যেভাবে পারে সঙ্গী করে নিয়েছে। মানুষ সংবাদ চায় বস্তুনিষ্ঠ, নির্ভেজাল। কারণ, সংবাদের সঙ্গে মনের যোগ সমধিক। মনকে ভেজালমুক্ত রাখার চেষ্টাতেই এই চাওয়া, যা দোষের নয় মোটেও। এখানটাতেই সংবাদপত্রের দায় বড় হয়ে ওঠে। সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম অনেক, কিন্তু চেতনাতে পুষ্টি জোগানোর দুরূহ কাজ সার্থকভাবে সবাই কি করতে পারে? বোধহয় না। তাই আমরা রিমোর্টের বোতাম চেপে ক্ষণে ক্ষণে চ্যানেল পাল্টাই, আজ এক পত্রিকা তো কাল আরেক পত্রিকার শরণাপন্ন হই অসত্য সংবাদ ও স্থূল পরিবেশনা এড়াতে। সত্যের কাছাকাছি থাকার যে অভিপ্রায় বা প্রচেষ্টা, সেখানে এক চুলও ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা ও শপথ যেকোনো প্রচারমাধ্যমের প্রধান সম্বল। প্রতিদিনের সংবাদ আপসকামিতা নয়, নিরঙ্কুশ বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী হয়েই আগামীর পথ চলবে—প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই প্রত্যাশা।

এক পশলা বৃষ্টি হউক

ইমরান মাহফুজ সম্পাদক, কালের ধ্বনি

যাপিত জীবনে আমাদের অনেক চাহিদা, অনেক আবদার। পরিবার থেকে রাষ্ট্র-সমাজ, সমানতালে কখনো চলে, কখনো মন্থর গতিতে... এমনি পরিবেশে গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের ভূমিকা, গুরুত্ব ও স্বাধীনতা তথা বর্তমান সভ্য ও নগর সমাজের অপরিহার্য সঙ্গী।

মানুষ যত শিক্ষিত এবং সচেতন হচ্ছে, ততই সংবাদপত্রের ব্যবহার বাড়ছে। সংবাদপত্রের বিচরণ ক্ষেত্র ক্রমেই নগর থেকে শহর, শহর থেকে উপশহর, মফস্বল শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। সকালের সংবাদপত্র দুপুর, বিকেল, রাত এমনকি এক দিন পরে গেলেও মানুষ আগ্রহ নিয়ে পড়ে। তবে সময় পাল্টালেও মানুষ পড়ার পদ্ধতিও পাল্টেছে। আর নিজ প্রয়োজনেই পড়ছে, জানছে। না জেনেও উপায় নেই, কারণ সংবাদপত্র পুরো পৃথিবীটাকেই আমাদের ঘরের এবং মনের কাছাকাছি এনে দেয়। সংবাদপত্রের মাধ্যমেই আমরা ঘরে বসে গোটা বিশ্বকে অবলোকন করি। আর এ বিষয়টি নিয়েও পড়াশোনা যারা করছে, তারা নিজেদের উন্নত করার সঙ্গে সমাজকে পরিবর্তন করুক। এমনটাই প্রতিদিনের সংবাদের জন্মদিনে প্রত্যাশা।

কিন্তু প্রসঙ্গে একটি সমাজচিন্তার সংকট/র‌্যাগিং নিয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় ক্যানভাসে এসেও যারা সংকীর্ণ আচরণ কর, জীবনের শুরুতেই গণ্ডিবদ্ধ চিন্তা কিংবা জোর করে সালাম/সম্মান শেখানো/আদায় মানসিকতা হলে আগামী দিনে পরিবার বা সমাজ-রাষ্ট্রই বা কী পাবে! পরিবার এবং রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করে তথাকথিত সনদ দিয়ে হবে কী? এরা পশুও হচ্ছে না, মানুষও থাকছে না। বিরল এক প্রাণীর বসবাস এই সমাজে। হায় আধুনিক সময়! সব সুযোগের পাহাড়!

বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংনামক নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় পায় না স্বাপ্নিক নবীনরা। এ থেকে অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আস্থা হারান। আধুনিক সময়ে এতটা বর্বরতা মানা যায় না। একটু খেয়াল করে দেখা যাবে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চলছে এসব অপকর্ম। কোথায় পাবে আশ্রয় সাধারণরা?

গত ৯ মে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ৪০ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় হলের ছাদে। সেখানে ভোর ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই রাতে একজন অচেতন হয়ে পড়েন।

১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়রদের হাতে নিজ ক্যাম্পাস বাসে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম জেবা বড় আপুকে কথিত সম্মান না করায় হেনস্তা হন। জেবা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন। তার আগে এ ধরনের কাজে প্রতিবাদ করেন জাবির প্রীতি। সে একজন সৃজনশীল বলেই মনের অধিক শক্তি পেয়েছেন। তাদের সাধুবাদ জানাই। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, এইভাবে প্রতিবাদ করতে হবে বিরল প্রাণীদের আচরণের প্রতি। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মানসিক সামর্থ্য রাখে না। এরা এ দেশেরে স্বাধীনতা-সম্মান বিশ্বাস করে না। জন্ম যাদের ধর্ষণ-নির্যাতন-অমানবিক আচরণের জন্য তারা যাই হউক বাংলাদেশের না। সভ্যতার স্বর্ণসময়ে বসবাস করার মতো পরিবেশ চাই ঘরে এবং বাইরে। মানবিক সমাজ চাই। এমন মানবিক সমাজের জন্য এক পশলা বৃষ্টি হউক, প্রতিদিনের সংবাদের হাত ধরে আসুক তারুণ্যের সোনার বাংলা।

প্রতিদিনের সংবাদকে রেটিং দেব ১০/৭

নাফিজা মৌ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

অফিসে এসে পত্রিকা পড়া আমার সকালবেলার প্রথম কাজ। যদিও এখন পত্রিকা সবাই পড়ে না, ব্রেকিং নিউজ আর অনলাইনেই সব রমরমা খবরগুলো জেনে ফেলে। সহজ-সরল জীবনযাপন করতে পছন্দ করি, আর তাই এক বাক্যেই বলতে চাই, প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকা দেয় সহজ-সরল ইনফরমেশন, নিউজ, পরামর্শ।

পাঠক হিসেবে আমি নির্ভর করতে পারি যে লাইফস্টাইল, ক্যাম্পাসের খবর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব চলমান সময়ের প্রযোজ্য তথ্য। আর সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়—এখানে মনের ভাব বা আকুতি প্রকাশের জন্য সুযোগ আছে, লেখা জমা দিয়ে সবার সঙ্গে কানেক্ট হওয়ার।

তাই আমার নিজস্ব মত, প্রতিদিনের সংবাদকে রেটিং দেব ১০/৭।। পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইল!

সত্যশক্তিতে বলীয়ান হোক গণমাধ্যম

মাসউদুল কাদির সভাপতি, শীলন বাংলাদেশ

গণমাধ্যমের অপার শক্তি চোখের সামনেই দেখা যায়। সত্য উদ্ঘাটিত করার পেছনে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবাই সজ্ঞান করে। নামে আর গ্রামে মিল থাকাতেই জেল খাটতে হচ্ছে জনৈক ব্যক্তির। এসব ঘটনা কোনোভাবেই ঘটনা হয়ে উঠতে পারত না-যদি মিডিয়ার উপস্থিতি না হতো। দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ সত্যশক্তিতে বলীয়ান হয়েই মাথা উঁচু করে পথ চলছে। লক্ষ্য অনেক দূর। ঝকঝকে প্রকাশনার সুনির্মল এক কাগজ এটি। ভিন্ন এক ধারার আবহ নিয়ে বের হচ্ছে নিয়মিত। বাস্তবতা হলো, গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই আপস করলে চলে না। আপসে সংবাদিকতা থাকে না। থাকে না পেশাদারিত্ব। নিরপেক্ষ মানুষ হারায় একমাত্র আশ্রয়স্থল। জনমানুষের জন্যই মিডিয়াকে সত্যশক্তিতে বলীয়ান থাকতে হয়।

সত্যধারণ অনেক বড় পরীক্ষা। সত্যকে নিয়ে চলা বড় চ্যালেঞ্জ। বুকে পাটা শক্ত করে সত্যকে বন্ধু বানিয়ে আপন করে এগিয়ে যেতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে সাহসের। মিথ্যায় ঢাকা পৃথিবীর কোনো সম্পদই সম্পদ নয়। মিথ্যাশ্রয় কখনোই সংবাদও নয়। সংবাদ কখনো মিথ্যা হতেও পারে না। যেটুকু সত্য, সেটুকুই সংবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম চমৎকার বলেছেন, পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর/বিধির বিধান সত্য হোক।

আরেকটু পরে এসে কবি উল্লেখ করেছেন আরো চমৎকার কিছু পঙক্তি। সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর/কর্মে যদি না রয় ছল,/ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল,/সত্যের জয় হবেই হবে/আজ নয় কাল মিলবেই ফল।

সহনশীলতার একটা বিষয় আছে। প্রকাশনার পাঁচ বছর অবশ্যই একটি মাইলফলক। কর্মপ্রচেষ্টা, ত্যাগ, সাহস আর আশার পারদের ওপর ভর করে তারা এ পর্যন্ত পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। মিডিয়াপাড়ায় তাদের উপস্থিতি সরব হয়েছে। একটু আলাদা করে নিজেদেরকে উপস্থাপিত করতেও সক্ষম হয়েছে। এবার সক্ষমতার এই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার পালা। খেই হারিয়ে ফেললে চলবে না। নিজেদের জাত চেনাতে হবে। লেখনী শক্তিতে মজবুত কাঠামো বিনির্মাণে কোনো কুণ্ঠাবোধ করলে চলবে না। যথাযোগ্য মানুষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যেমন দেশ এগিয়ে যায়, তেমনি সংসারও একজন ত্যাগী অভিভাবক পেলে দাঁড়াতে পারে। দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদও প্রকাশক হিসেবে একজন অভিভাবক খুঁজে পেয়েছে। এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা।

সমাজের আয়না

তানভীর এনায়েত কবি ও ডিজাইনার

মানুষ সত্যকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসে। সুন্দরকে ভালোবাসে সত্যের মতো করে। সুন্দরকে খুঁজতে খুঁজতে যেদিন সত্য করে পায়; উল্লসিত হয় মন ও মনন। এই অন্বেষণের পৃথিবীতে জানার যত পথ তার একটি পত্রিকা। সমাজের সত্য আয়না।

সময়ের হিংস্রতায় বিলুপ্ত হয় কখনো তার আচরণ। বিনষ্ট হয় লক্ষ্য। বিপর্যপ্ত হয় সত্য। সুন্দর হয় আহত। তবুও মানুষ চায় স্বচ্ছ জলের মতো একটা আয়না। সমাজের আয়না।

এই সময়ে এসে সে স্বাক্ষরের ভাস্কর্য রচনা করতে চলছে ‘প্রতিদিনের সংবাদ’। অতিক্রম করে এসেছে বিগত পাঁচটি বছর। অব্যাহত রেখেছে তার স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা। কথা বলেছে মানুষ ও রাষ্ট্রের হয়ে।

আগামী দিনেও তার এমন বলিষ্ঠ ভূমিকা বজায় থাকুক এই আমাদের আত্মার প্রার্থনা।

শুভ জন্মদিন

আমিনুল ইসলাম সেলিম কবি ও শিক্ষক

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের সন্নিবেশ, তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক প্রতিবেদন, সম্পাদনার বিচক্ষণতা, কাঠামোগত পরিচ্ছন্নতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাসমূহের বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন, সুনির্দিষ্ট প্রচার-কৌশল ইত্যাদি মিলিয়ে একটি পত্রিকার সাফল্য-ব্যর্থতার চিত্র নিরূপণ করা যায়। নতুন পত্রিকা হলে পাঠকের হাতে পৌঁছানোর ব্যাপারটাই সবার আগে প্রাধান্য পায়। পৌঁছানো ধারণাটা অবশ্য কমপক্ষে দুটি উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমত, পাঠকের সহজলভ্যতা; দ্বিতীয়ত, পাঠকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। যেহেতু পাঠকই অধিকাংশ পত্রিকার উদ্দেশ্যের কেন্দ্রবিন্দু, সেহেতু পত্রিকার গাঠনিক উপাদানও পাঠককেন্দ্রিক। হালামলে যেসব দৈনিক আমরা সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যাই, সেগুলোর অধিকাংশই বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কাজ করে যায়। ফলে যা হয় তা হলো, মানুষের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে এগুলো তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। এগুলো মূলত বাণিজ্যিক মূলমন্ত্রই মেনে চলে। ব্যতিক্রম যে নেই, তা বলা যাবে না।

দু-চারটি পত্রিকা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবেই সচল, সেগুলো আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পত্রিকার একটা নিজস্ব শক্তি থাকে, যার মাধ্যমে অনেক সময়ই জনরুচি তথা রাষ্ট্ররুচিও পরিবর্তন হয়ে যায়। পত্রিকা তো মূলত মানুষেরই গণমাধ্যম প্রতিনিধি। এ প্রতিনিধিত্ব অনেক সময় বিপ্রতীপধর্মী। পত্রিকা জনগণের কাছে জনগণের প্রতিনিধি। আবার সরকারের কাছে জনগণের। এমনকি বিপরীতও হতে পারে। জনগণের কাছে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে, এমন পত্রিকাও প্রচলিত, যাতে সরকারের কার্যকলাপ প্রচার ও জবাবদিহিতার ব্যাপার পরিলক্ষিত হয়। ক্ষেত্র যাই হোক, প্রভাববিস্তারী হতে হলে পত্রিকাকে অবশ্যই প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

প্রতিদিনের সংবাদের প্রকাশনার পাঁচ বছর পেরিয়ে ছয় বছরে পদার্পণ করলেও পাঠকের হাতে পৌঁছার বয়স মাত্র এক বছর। এক বছর খুব বড় সময় নয়। বলা যায়, এটি একটি পত্রিকার পরীক্ষাকাল মাত্র। পাঠকের সঙ্গে এক বছর পত্রিকাটি পরীক্ষা দিয়ে গেছে। এর আগে চার বছর ছিল গোপন প্রস্তুতিকাল। আজ এক বছর পর পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় এসেছে। অথচ পাঠকের হাতে এর উঠে আসা বিবেচনা করলে এটা অনুমান করা যায় যে, এটি এর প্রস্তুতিতে তেমন কোনো ঘাটতি রাখেনি। এক বছর পরীক্ষাও খারাপ দেয়নি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করে এটিকে আজকের অবস্থানে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

অনিয়মিত পাঠেও আমার যা মনে হয়েছে তা হলো-পত্রিকাটি নিরপেক্ষতা ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর মতকে আলাদাভাবে তুলে আনার গোপন ইচ্ছা পত্রিকাটির নেই। রাষ্ট্রের সঙ্গে আদর্শিক কোনো দ্বন্দ্ব আছে বলেও মনে হয়নি। মোটামুটিভাবে প্রায় সর্বস্তরের পাঠকের উপযোগী পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও প্রতিষ্ঠালাভই এর উদ্দেশ্য। গোছানো বিষয়ভিত্তিক বিভাগ ও সাবলীল, নিরপেক্ষ সংবাদ উপস্থাপন কৌশলের কারণে পত্রিকাটি পাঠকের মনে একটা দুর্মর আকর্ষণ তৈরি করে, যা সংবাদের গভীরে যেতে বাধ্য করে। বাণিজ্যই যে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, তা বোঝা যায় এতে বিজ্ঞাপনের অপ্রতুলতা দেখে।

সর্বোপরি আমার আরো যা যা ভালো লেগেছে পত্রিকাটির, তাহলো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা আশাবাদী মনোভাব পোষণ করে। বিষয়টিকে আরো প্রমাণ করে ‘তারুণ্য’ নামের বিভাগটি। যাতে তরুণদের মনোভাবকে সুদৃঢ় করার মন্ত্র থাকে। তরুণরাই যেহেতু জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী, সেহেতু তাদের আশাবাদী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই কাম্য আমাদের। সে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সামান্যতম দায়িত্বও যদি কোনো দৈনিক পত্রিকা মাথায় তুলে নেয়, তাহলে সেটি অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। প্রতিদিনের সংবাদ অবশ্যই সেটুকু পাওয়ার অধিকার রাখে। শুভ জন্মদিন বলার পাশাপাশি তাই অভিনন্দনও জানাতে চাই আমি।

সাহিত্য যে জাতির অনিবার্য দর্পণ, তা অস্বীকার করা বোধহয় কারো পক্ষেই সম্ভব নয়; অন্তত যারা নিজেদের শিক্ষিত বলে মনে করেন। সংস্কৃতির বিভিন্ন খবর প্রকাশের পাশাপাশি পত্রিকাটি বেশ সমৃদ্ধ একটি পাতা প্রকাশ করে থাকে প্রতি শুক্রবারে। সেখানে গল্প ও কবিতা প্রাধান্য পায়। আরেকটা জিনিস প্রাধান্য পায়, তাহলো তারুণ্য। সপ্তাহের শনিবারে প্রকাশ হয় ‘খেয়ালখুশি’ নামে ছোটদের পাতা; সেখানে গল্প, কবিতা, ছড়ার পাশাপাশি স্থান পায় ছোটদের ছবি আঁকার বিষয়টিও। সব মিলিয়ে পত্রিকাটি বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। আজ পত্রিকাটির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রত্যাশা থাকে যে, এটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রদানের পাশাপাশি সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে এর আত্মপ্রকাশের বড় আঙ্গিক হিসেবে ঠিক করে নিতে সক্ষম হবে। এটি নিশ্চয়ই সমাজের প্রতিনিধি হয়ে ওঠার সব রকম যোগ্যতা অর্জন করে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথ রচনা করবে। শুভ জন্মদিন প্রিয় ‘প্রতিদিনের সংবাদ’।

বৈপ্লবিক ঘটনা

জাকির উসমান সাংবাদিক

একটা পত্রিকা পাঁচ বছর পূর্ণ করে ফেলা মানে ছোটখাটো একটা বৈপ্লবিক ঘটনা ঘটে যাওয়া। প্রতিদিনের সংবাদের পাঁচ বছর পূর্তির এই আনন্দ দিনে পত্রিকাটির সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।

ভবিষ্যতের যারা শিল্পী ও সাহিত্যিক-তারা এ রকম একটি মানসম্মত পত্রিকায় নানাভাবে যুক্ত থেকে নিজেদের নির্মাণ করে তোলেন। আমাদের বিশ্বাস, এই পত্রিকাও ভবিষ্যতের অনেক সাহিত্যিক ও শিল্পীর বড় হয়ে ওঠার মাধ্যম হবে। হয়তো এর নানা আয়োজনে যুক্ত থেকে অনেকেই নিজেদের নির্মাণের পথ পাবেন।

প্রতিদিনের সংবাদের ছোটদের পাতা, সাহিত্য পাতা, ফিচার পাতাসহ এ রকম নানা আয়োজন আছে, সেগুলো আমাদের মতো তরুণদের জন্য বিপুল আনন্দ ও খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছে।

আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিদিনের সংবাদ তার স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখবে। কোনো দল-মত-পথ নয়, এর বিষয় ও উদ্দেশ্য হবে এ দেশের ভাগ্যবিড়ম্বিত গণমানুষ।

এ দেশে রাজনীতিহীনতার যে রাজনীতি এর বিরুদ্ধেও প্রতিদিনের সংবাদ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখুক—জন্মদিনে এই কামনা।

আপসহীন পথচলা

আমিন আশরাফ কবি ও গল্পকার

প্রতিদিনের সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে লেখালেখির মাধ্যমে এর সঙ্গে আমার আত্মীয়তা গড়ে ওঠেছে। প্রথম সারিতে যেতে না পারলেও পত্রিকাটি ক্রমেই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে সংবাদপত্র হচ্ছে দেশ ও সমাজের দর্পণ। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির আবেহায়াত। আর মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। পত্রিকাটি যদি এসব বিধি অবলম্বন করে আপসহীনভাবে নিজেদের নীতিনৈতিকতা অটুট রেখে সামনে এগিয়ে যায়, তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রতিদিনের সংবাদ দেশ ও জনগণের মূল প্রবাহ হয়ে দাঁড়াবে।

সময়ের এ তলাটে দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের সংবাদের পঞ্চম বছরে পদার্পণকে আমি আন্তরিক স্বাগত জানাই। বিশেষ করে সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশা থাকে খবরের পেছনের খবর পাঠ করার। সে প্রত্যাশা পূরণ না হলে পাঠক সংবাদপত্রবিমুখ হয়ে পড়ে অথবা পত্রিকায় হালকা, চটুল খবর খোঁজে। তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনা এবং নীতিনির্ধারণে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের আর কোনো ভূমিকা থাকে না। ফলে দেশের কাণ্ডারীরা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্র থেকে হয় বঞ্চিত। এ অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ এবং শঙ্কাহীন সংবাদ সংগ্রহে একজন সাংবাদিককে প্রতিনিয়ত জানবাজি রেখে লড়ে যেতে হয়।

দেশের বঞ্চিত মানুষের অধিকার, নারীর প্রকৃত মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে প্রতিদিনের সংবাদকে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। তাদের এগিয়ে চলাটা অনেক সময় হয়তো সুখকরও হবে না। তারপরও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি অবিচলতার কোনো বিকল্প নেই।

হৃদয়জুড়ে প্রতিদিনের সংবাদ

জীবন শাহ কবি

দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ জানতে পেরে খুশি বোধ করছি। পাঁচ বছর অবিরাম পথচলার সঙ্গী প্রতিদিনের সংবাদকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

আমাদের দেশে পত্রিকার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বহুল প্রচারিত সংখ্যা সীমিত। পাশাপাশি ইলেকট্রিক মিডিয়া তাৎক্ষণিক খবর প্রকাশিত হওয়ায় পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের চাহিদা কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া প্রতিটি দৈনিকের অনলাইন ভার্সন থাকায় একশ্রেণির পাঠকের দৃষ্টি থাকে। প্রিন্ট মিডিয়া সম্ভবত এমন ধারণা পোষণ করে বলেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য খবরে হলুদ মিশিয়ে চমক সৃষ্টি করে। কিন্তু চমক সৃষ্টি করে ধোঁয়াটে অবস্থা পাঠককে সাময়িক বোকা বানানো যায়। পরবর্তীতে পাঠক কী করতে পারে, তাও ভাবা উচিত।

পাঠক মাত্রই সংবাদ পরিবেশনে বৈচিত্র্য চান। বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট চান। সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার ওপর নির্ভর করে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একজন পাঠক হিসেবে লক্ষ্য করেছি, অনেক দৈনিক পত্রিকা তাদের খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে খবরের মূল্যায়ন করতে জানে না। একজন এমপি, মন্ত্রী, নায়ক-নায়িকা কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন, কোথায় ঈদ করবেন তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয়পুরহাটের প্রবল ইচ্ছে শক্তি নিয়ে বিউটি আক্তার পায়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষিত সন্তানের মা-বাবারা বৃদ্ধাশ্রমে কেন কাটাচ্ছেন! একজন বেকার তরুণের অদম্য লড়াইয়ে গড়ে তোলা কর্মসংস্থানের গল্প হতে পারে শিরোনাম। অসহায় মানুষগুলো চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালের বারান্দায় ছটপট করার প্রতিবেদন হতে পারে। হতে পারে কেমন কাটাচ্ছে ঈদ পথশিশুরা।

কোথায়, কিভাবে, কতজন মিলে ধর্ষণ করেছে-এমন সংবাদের পেছনে ছুটে কেবলি সমাজের অবক্ষয় হচ্ছে। তারচেয়ে ধর্ষণ প্রতিরোধে কী কী জনসচেতনতা বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগী হওয়া উচিত।

দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা। গণমাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ অবস্থান আপনাদের। পজেটিভ বাংলাদেশ, পজেটিভ সংবাদ উপস্থাপন করেছেন, করেও যাবেন। পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা অপর্যাপ্ত ও সীমিত আর পত্রিকার তথ্য পরিপূর্ণ, নিত্যনতুন ও বৈচিত্র্য। প্রতিটি দৈনিকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। ইলেকট্রিক মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিপক্ষ হতে পারে না।

পাঠক কী চান? আর আপনারা কী দিতে চান! শুনুন, বলুন আর লিখুন।

আশা করি, প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিটি বিভাগই সব শ্রেণির মানুষের জ্ঞান ও মননশীলতাকে বিকশিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুন্দর হোক আগামীর পথচলা, প্রতিদিনের সংবাদ থাকুক পাঠকের হৃদয়জুড়ে।

প্রতিদিনের সংবাদ একটু আলাদা

আলিমা আফরোজ লিমা শিক্ষক ও মডেল

সকালে খবরের কাগজটি যখন হাতে আসে মনে হয় দুনিয়াটা হাতের মুঠোয়। সংবাদপত্রটির সহজ সাবলীল ভাষা, সাজসজ্জা আর সুন্দর অবয়ব যেকোনো পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

প্রতিদিনের সংবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে—এর সৃষ্টিশীলতা, সংবাদ প্রকাশের সত্যতা, সামাজিক সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের দক্ষতা। সম্পাদকীয় পাতাটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সমকালীন প্রসঙ্গের চারপাশ সপ্তাহজুড়েই। পাঠকের মতামতকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকের সব গুণ আছে পত্রিকাটিতে।

প্রতিদিনের সংবাদের স্বতন্ত্রতা হলো পত্রিকাটিতে কাউকে পক্ষপাতিত্ব করে না। দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংবাদ প্রকাশে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের সংবাদের খবর প্রকাশে স্বাধীনতা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। এটি যেকোনো পাঠককে আকর্ষণ করবে। সর্বোপরি পত্রিকাটির স্বতন্ত্র আর স্বকীয়তা অন্য পত্রিকার তুলনায় আলাদা।

ভিন্নরূপে পত্রিকার উপস্থাপনা ভঙ্গি আর এর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি পত্রিকার সম্পাদক ও কলাকুশলীদের। প্রতিদিনের সংবাদের জন্মদিনে আমার শুভেচ্ছা রইল।

পিডিএসও/এমএইচ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতিদিনের সংবাদ,প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী,আলিমা আফরোজ লিমা,জীবন শাহ,আমিন আশরাফ,মীর হেলাল,জাকির উসমান,আমিনুল ইসলাম সেলিম,তানভীর এনায়েত,মাসউদুল কাদির,নাফিজা মৌ,ইমরান মাহফুজ,সোহেল নওরোজ,শরাফত হোসেন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist