সম্পাদকীয়
দেশপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই
দেশপ্রেম এবং দেশপ্রেম। এর যেকোনো বিকল্প নেই, সম্ভবত এবারই তা প্রমাণ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাহসী তরুণরা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চার উইকেটে টেস্ট বিজয়। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশেষ একটি ম্যাচ। টেস্ট ক্রিকেটের শততম ম্যাচ। প্রয়োজন ছিল একটি জয়ের। বাংলার তরুণরা তা পেরেছেন। নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচের মাথায় মুকুট পরাতে তারা কার্পণ্য করেননি। নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, আমরাও পারি।
শ্রীলঙ্কার সূর্য তখন মধ্যগগনে নেই। অস্তাচলের ডিঙ্গি নৌকাতে উঠি উঠি করছে। রঙ্গনা হেরাথের বলটা সুইপ করেই চিৎকার করে দৌড় শুরু করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চিৎকার করতে করতে দৌড়ালেন মুশফিক। উল্লাস করেছেন মিরাজ, উল্লাস করেছেন মুশফিক, উল্লাস করেছেন দলের প্রতিটি সদস্য, উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার আকাশে তখন সূর্য নেই। সবটুকু আলো যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলার বুকে।
তিন দিন আগেও যারা গালি দিয়া খেলা শিখাইছিলেন তারাও আজকে টাইগারদের প্রশংসায় ভাসায়ে দিচ্ছেন
সারা দেশে বাঁধভাঙা উল্লাস। উচ্ছ্বাস আর উল্লাসের পঙক্তিমালায় অনেকে অনেক রকম রঙে সাজিয়েছেন উপচে পড়া আবেগকে। এ রকম একজন বলেছেন, ‘স্বপ্ন কথা দিয়ে কথা রেখেছে। শুধু হাতছানি দিয়ে ফিরে যায়নি। অভিনন্দন বাংলাদেশ!’ অপর একজন বলেছেন, ‘এখন আমাদের তামিম আছে, তারুণ্যের জয়গান গাওয়া সৌম-সাব্বির-মিরাজ-মুস্তাফিজ-তাসকিনরা আছে। মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে সাকিব আল হাসান নামের এক বিশ্ব সেরা। আছে মুশফিক অথবা চির তরুণ মাশরাফি।’ অপর একজনের কথায় ছিল টক-মিষ্টি-ঝালের আমেজ। তিনি বলেছেন, ‘তিন দিন আগেও যারা গালি দিয়া খেলা শিখাইছিলেন তারাও আজকে টাইগারদের প্রশংসায় ভাসায়ে দিচ্ছেন। এই হলো আমাদের ন্যাচার।’
সবার অভিব্যক্তি এক হওয়ার নয়, এটাই স্বভাবিক। বিভিন্ন অভিব্যক্তি বহুধাবিভক্ত হয়ে প্রকাশ পেলেও ওরা যেন একটি বৃক্ষের সন্তান। যে বৃক্ষের নাম ‘দেশপ্রেম’। ওরা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, তাই উচ্ছ্বাসটাও উত্তাল তরঙ্গের মতো বাঁধভাঙা। আমরা মনে করি, এ উচ্ছ্বাসের প্রয়োজন আছে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকই এমন উচ্ছ্বাস উপভোগ করবেনই। পাশাপাশি এবারের খেলা দেখে মনে হলো, বাংলাদেশ দল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মাঠে নেমেছে। আর সে কারণেই আমরা দেখতে পেলাম, মাঠে প্রত্যেকেই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন। আগামীতে এই দেশপ্রেমকে ধারণ করে আমাদের সন্তানরা মাঠে নামবেন—এটাই ষোলো কোটি মানুষের প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল