মাসউদুল কাদির

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

তাওবাও ইবাদত

মহাগ্রন্থ কুরআনুম মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুণাময়।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯৯)

অন্যত্র আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ (সূরা হা-মিম আস-সিজদা, আয়াত ৬)

আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘জেনে রাখুন, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার ত্রুটির জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ১৯)

তাওবায় বান্দার গুনাহ মাফ হয়। বান্দা তাওবা করে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করলে বৃষ্টি বর্ষণ হয়। সন্তান-সন্ততিও তাওবার পর দোয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়। সম্পদের অপূর্ণতাও আল্লাহ তায়ালা দূর করেন তাওবার মাধ্যমে। পরকালে তো জান্নাত আছেই। বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় গিফট হলো আল্লাহর দিদার। প্রভুর দিদার লাভ হলে তো বান্দা সবই পেয়ে যায়।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর (নূহ আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২)

কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে, তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন। আর জালিমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন।’ (সূরা নূহ, আয়াত ২৮)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজরত আদম (আ) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর তাওবা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা উভয়ে বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত- ২৩)

হজরত মূসা আলাইহিস সালাম অনিচ্ছাকৃতভাবে কিবতী হত্যার ঘটনার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের ওপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা কাসাস, আয়াত- ১৬)

অসংখ্য আয়াতে কারিমা দিয়ে তাওবার বিষয়টি প্রমাণিত। তাই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাঁর উম্মতদেরকে এর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করে থাকি।’ (মুসলিম)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন।’ (তিরমিযী)


আল্লাহর পথের অভিযাত্রী যারা, তারা পৃথিবীর সব প্রাণির জন্যই রহমতস্বরূপ। একটা কুকুরের অধিকারও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে, এই মুমিন সারা জগতের জন্যই শান্তির বার্তাবাহক


হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে এবং আমার আশা পোষণ করবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো; তোমার থেকে যা কিছুই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোনো পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্বগগন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়া ভরা গুনাহ নিয়ে আসো, অতঃপর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর, আমি তোমার কাছে জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হবো।’ (তিরমিযী)

সাদ্দাদ বিন আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দিনেরবেলা পাঠ করে, অতঃপর সেই দিনই সন্ধ্যার আগে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তা পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রাতেরবেলায় এটা পাঠ করে, অতঃপর সেই রাতেই সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী।’ (বুখারি)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ, প্রতিদিন আমি ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর ইস্তিগফর ও তাওবা করি।’ (বুখারি)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের পরও তিনবার ইস্তিগফার করতেন। (মুসলিম)

পরকালীন নয়, কেবল আল্লাহর পথের অভিযাত্রী যারা, তারা পৃথিবীর সব প্রাণির জন্যই রহমতস্বরূপ। একটা কুকুরের অধিকারও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে, এই মুমিন সারা জগতের জন্যই শান্তির বার্তাবাহক, শান্তির দূত। মাগফিরাত কামনা করা এবং মাগফিরাত নিয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর করা কল্যাণময়তার বড় অঙ্গীকার।

লেখক : ইকরা বাংলাদেশ হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল, কলামিস্ট [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাসউদুল কাদির,ধর্ম,কলাম,তাওবা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist