সম্পাদকীয়

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

কার পাপে এই নির্মমতা

শিশুর ওপর নির্মমতা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার একটি দৃষ্টান্ত গত ১২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। গলায় থাকা সামান্য স্বর্ণের চেইন হাতিয়ে নিতে এক প্রতিবেশী নারী দুই অবুঝ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করলেন। শিশুদের হত্যা করে নিজের ঘরেই বস্তাবন্দি করে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেই নারী।

কেউ যদি একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার জন্য বলেন, তাহলে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। তার সঙ্গে একমত হওয়া সম্ভব নয়। একমত না হওয়ার সংগত কারণ হচ্ছে পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছর পাঁচ শতাধিক শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ১৪৪ শিশু। আর চলতি বছরের মাত্র দেড় মাসে ১৪ শিশু নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ছয়জনকে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গত চার বছরে দেশে এক হাজার ৮৫ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এ সময় ১৯৯ শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হয় এবং ৩০ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ, বেশির ভাগ ঘটনাই প্রকাশ পায় না।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাই শিশুদের ওপর নৃশংস আচরণের জন্য দায়ী। সমাজে অস্থিরতা বিরাজমান থাকলে মানুষের মনে তার প্রভাব পড়ে। তবে ডিএমপি উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, পারিবারিক শিক্ষায় গলদ থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। তিনি আরো বলেছেন, আইন করে শাস্তি দিয়ে অপরাধীকে হয়তো আটকানো যায়, তার মানসিকতাকে আটকানো যায় না।

বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, শিশুদের ওপর নৃশংসতার ১০০ অপরাধে গড়ে দুটির বেশি শাস্তি পায় না। তিনি আরো জানিয়েছেন, গত ৫ বছরে শিশু হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের ৯৮ শতাংশ অপরাধে কারো শাস্তি হয়নি।

এই পরিসংখ্যান দেখা বা জানার পরেও পুলিশ কর্মকর্তা কি বলবেন, আইন করে শাস্তি দিয়ে অপরাধীকে হয়তো আটকানো যায়, মানসিকতাকে আটকানো যায় না! এখানেই প্রশ্ন এবং আমাদের জিজ্ঞাসা, পুলিশ-প্রশাসনের এহেন বক্তব্য এবং কাজে উদাসীনতার কারণেই কি নির্মূল না হয়ে বেড়েই চলেছে অপরাধ? কেননা পরিসংখ্যান বলছে, পুলিশের অবহেলা ও উদাসীনতা (ইচ্ছাকৃত?) সমাজকে আজ এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।

আমরা মনে করি, অভিভাবকদের মানসিকতা পরিবর্তনের আগে পুলিশ প্রশাসনের মানসিকতা পরিবর্তন আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সেক্টরের মানসিকতার পরিবর্তন হলে স্বাভাবিক নিয়মেই অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে বাধ্য। কেননা অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেছেন, সমাজের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাই শিশুদের ওপরে নৃশংস আচরণের জন্য দায়ী। আর ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাকে স্বাভাবিক করাই পুলিশের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকে হতে হবে সৎ, সাহসী ও কর্তব্যপরায়ণ। এখানে বিচ্যুতি হলে সেই বিচ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র-যা দেশ, জাতি ও সমাজকে করবে কলুষিত।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অপরাধ,শিশু নির্যাতন,নির্যাতন,ধর্ষণ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist