সম্পাদকীয়
ভালোবাসা একলা চলে হাত তো ধরে না
ভালোবাসা বলতে ছোটবেলার ভাবনা ছিল একরকম। যৌবনে তা পাল্টেছে। হয়েছে অন্যরকম। এখন ভালোবাসা বলতে বুঝি, ‘ভালোবাসা একলা চলে হাত তো ধরে না।’ ধরলে সে আর ভালোবাসার মধ্যে থাকে না। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে, ‘ভালোবাসা তাহলে কী?’ উত্তরটা খুব সহজ হলেও মেনে নেয়া কঠিন। ভালোবাসা যখন স্পর্শের দিকে এগিয়ে যায়, স্পর্শ করে—তখন সে সম্পর্ক প্রেম থেকে বাণিজ্যিক সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। আর সম্পর্কটা যখন বাণিজ্যিক তখন লেনদেন এবং লাভ-ক্ষতির বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায়। সে কারণেই ভালোবাসা যতক্ষণ একলা চলে, ঠিক ততক্ষণই তার অস্তিত্ব থাকে। অর্থাৎ, ভালোবাসা যেহেতু একটি অনুভূতি; এই অনুভূতি যতক্ষণ বলছে, আমি ভালোবাসি—এটাই সত্য। বিনিময়ে কি পেলাম বা পেলাম না, এর কোনোটাই আমাকে স্পর্শ করে না—সেখানেই ভালোবাসা ছিল, আছে এবং থাকবে।
বিনিময় আমাদের যা শেখায় তা কেবল লাভ আর ক্ষতি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কোনো দিনই ভালোবাসাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। একটি পরিবারে স্বামী এবং স্ত্রী—দুজনই যদি ভাবে, আমি তোমাকে ভালোবাসি—এটাই শেষ কথা। তোমাকে ভালোবেসে কী পেলাম আর কী পেলাম না, এ হিসাবের বাইরে থেকেই আমার অনুভূতির সবটাই জুড়ে তুমি। সম্ভবত তখনই সেই যুগলের ভালোবাসা সার্থকতার চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করতে সক্ষম। অন্যথায় দরজা দিয়ে অভাব ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসাকে যে জানলা দিয়ে পালিয়ে যেতে হয়—এটা আমাদের সামাজিক বাস্তবতা। এ রকম ভালোবাসার প্রতি অবজ্ঞা না করেই বলছি, সমাজকে বেঁধে রাখার জন্য এ রকম ভালোবাসার যে প্রয়োজন নেই তাও বলা যাবে না। তবে যারা ভালোবাসাকে প্রকৃত অর্থেই জানতে চান তাদেরকে এই বাণিজ্যিক ভালোবাসা থেকে সরে আসতে হবে। বিশেষ করে ভালোবাসার ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে সরে এসে বলতে হবে—তোমাকে ভালোবাসতে পেরেই আমি ধন্য।
এ ক্ষেত্রে হজরত রাবেয়া বসরীর নামাজ শেষে মোনাজাতের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি প্রার্থনায় বসে আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে বলতেন, ‘হে পরোয়ারদিগার, আমি যদি বেহেশত পাওয়ার জন্য তোমার আরাধনা করি, আমাকে তোমার নিকৃষ্টতম দোজখে নিক্ষেপ করো। আমি কখনো বেহেশত প্রত্যাশা করিনি। আমি তোমাকে যেন ভালোবাসতে পারি, সেই শক্তি তুমি আমাকে দাও।’
আমরাও মনে করি, কোনো কিছুর বিনিময় নয়। আমরাও চাই উদার ভালোবাসার নীলসমুদ্রে সাঁতার কাটতে। পরম করুণাময় আল্লাহ যেন সে শক্তি আমাদের দেন।
পিডিএসও/হেলাল