মাসউদুল কাদির

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

তাওবার পরিচয় ও নিয়ম

‘তাওবা’ অর্থ—প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমাপ্রার্থনা করা, অনুতাপ করা, অনুতপ্ত হওয়া ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে—কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপকাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা তাওবা করে, ইমান আনে এবং ভালো কাজ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যারা তাওবা করে এবং নেক কাজ করে, আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা।’ (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭০-৭১)

এই আয়াত দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাওবাকারীদের ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। কারণ, আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতি পাপকাজ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক, এটা আল্লাহ তায়ালা চান না। তাই তার হাবীব বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে তাওবা করার সঠিক নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন-নূর, আয়াত ৩১)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দাদের সফলকাম হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন তাওবার মাধ্যমে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রভু। তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যিনি প্রভু, তাঁর অন্যতম গুণ হলো ক্ষমা করা। তাই মহান আল্লাহ গাফুরুর রাহীম।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গুনাহর জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৭৪)

বান্দা পাপ করার পর আল্লাহর দরবারে ফিরে আসবে, আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করে দেবেন এবং সঠিক পথের দিশা দেবেন। আল্লাহ চান, তার প্রিয় বান্দারা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে জান্নাতের অমিয় সুধা পান করুক। চির শান্তির জান্নাতের ফুলবাগানে ঘুরে বেড়াক।

মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন; এবং সেই জান্নাতে স্থান দেবেন, যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত। (সূরা আত-তাহ্রীম, আয়াত ৮)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা, যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজ করে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাওবা করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী ও হিকমতওয়ালা। (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৭)। তাওবা তো বহুদিন পরে ফিরে এলেও হয়, আবার তাৎক্ষণিকভাবেও হয়। তবে অজ্ঞতাবশত যে পাপ হয়, সেই পাপের পর সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করা হলে সেটাই আল্লাহর কাছে উত্তম তাওবা, সেটাই আল্লাহর কাছে অধিকতর পছন্দের।

আমরা অনেক দোকানে লেখা দেখি, ‘বাকির নাম ফাঁকি, নগদেই হাসি’। স্বাভাবিক জীবনেও আমরা নগদে বিশ্বাসী। নগদ যতটুকু পাওয়া যায়, তা-ই আসল। এ কারণে মহান আল্লাহও খুশি হন নগদ তাওবায়; বান্দা যদি তৎক্ষণাৎই আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাওবা করে।

মহান আল্লাহ তাওবার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ তায়ালা নবী এবং তাঁর ইমানদার সাথিদের অপদস্থ করবেন না। তাদের আলোকমালা তাদের সামনে ও ডানদিকে ছোটাছুটি করতে থাকবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দাও, আমাদের ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান’।” (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত ৮)

আল্লাহ সব সময় ইমানদার বান্দার সঙ্গে থাকেন। বান্দা ভুল করে, আবার ফিরে আসে, কিন্তু মহান আল্লাহর ভালোবাসা বান্দার প্রতি কখনোই নিঃশেষ হয়ে যায় না। তিনি তো এজন্যই রাহমান ও রাহীম। পরম করুণাময়, দয়ালু। আল্লাহর এই দয়ার সুযোগটাই বান্দা বার বার গ্রহণ করতে পারে। কারণ, যখনই বান্দা ফিরে আসে, তখনই আল্লাহর ভালোবাসা তার দিকে ছুটে যায়। হাদিসেও নবীজি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবা শিখিয়েছেন, কিভাবে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে, কিভাবে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করত, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।’ (মুসলিম শরিফ)

আল্লাহর দরবারে তাওবা করতে গিয়ে আমরা হীনম্মন্যতার শিকার হই। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। হীনম্মন্যতার কোনো কারণ নেই। বান্দা যতবারই এবং যখনই তাওবা করবে, মহান আল্লাহ ততবারই তাকে ক্ষমা করবেন। হজরত আবু মূসা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ রাতেরবেলায় হাত প্রসারিত করেন, যেন দিনের পাপীরা তাওবা করে। আবার দিনেরবেলায় হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের পাপীরা তাওবা করে। এভাবে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকবেন।’ (মুসলিম শরিফ)। বান্দা মূলত ক্ষমার কাঙ্গাল, ক্ষমা পেতে চায়। দুনিয়ায় আমরা যারাই যে অপরাধ করি না কেন, ক্ষমা পেলেই খুশি হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওবার সঠিক নিয়ম জেনে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।

লেখক : ইকরা বাংলাদেশ হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল ও কলামিস্ট [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাসউদুল কাদির,কলাম,তাওবা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist