সম্পাদকীয়
পঙ্গুত্বে ভুগছে পঙ্গু হাসপাতাল
দেয়ালে ময়লা লেগে আছে। ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফ্যানে ময়লা। বিছানার চাদরেও তাই (যে কটি আছে), ময়লা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তেলাপোকার অবাধ বিচরণ। টয়লেটগুলোর অবস্থা এতিমের মতো। ঠিকমতো পানি থাকে না। নেই কোনো হাইকমোড। নার্সের সংখ্যাও নগণ্য। সিওডি ওয়ার্ডে ৮৪ বেডের জন্য বিকেলে ও রাতে নার্স মাত্র দুজন। এটাই হচ্ছে রাজধানী শেরে বাংলায় অবস্থিত পঙ্গু হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোব) সার্বিক চিত্র। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালটি আমাদের একমাত্র জাতীয় অর্থোপেডিক হসপিটাল।
এই যদি হাসপাতালের চিত্র হয়ে থাকে, তাহলে এখানে যারা আসেন অর্থাৎ রোগীদের অবস্থা কী! অল্প কথায় বললে এভাবেই বলা যায়, ‘চরম অব্যবস্থাপনায় ইনটেনসিভ কেয়ারে মৃত্যুর অপেক্ষায় ধুঁকছে জাতীয় অর্থোপেডিক নামের এই হাসপাতালটি।’ এখানে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম বললে বেশি বলা হবে না। নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। নেই পর্যাপ্ত ট্রলি, হুইল চেয়ার। যৎসামান্য যা কিছু আছে তাও আবার দালালদের নিয়ন্ত্রণে। ৮০ শতাংশ বিছানায় বালিশ-চাদরের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে হঠাৎ করে মন্ত্রী আসার আওয়াজ উঠলে বিছানায় চাদর চলে আসে। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরপরই ভোজবাজির মতো চাদর উধাও হয়ে যায়। হাসপাতালের ২৪ ট্রলির একটিরও দেখা মেলে না হাজার চেষ্টাতে।
বিছানায় চাদর নেই কেন? এ প্রশ্নের জবাবে একজন সিনিয়র নার্স বলেছেন, ‘এখানে রোগী হয়ে যারা আসেন তাদের বেশিরভাগই রক্তাক্ত অবস্থায় আসেন। তাই তাদের বিছানায় চাদর দেওয়া হয় না।’ তার এ বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য, আমাদের জানা নেই। তবুও এ প্রশ্নে তার বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বিচার না করেই বলা যায়, যে দু’চারটি বিছানায় চাদর আছে, তার আশপাশে দাঁড়ানোও কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
এখন ভাবনার বিষয় হলো, আমরা কোথায় আছি? মনে হয় যেন একটি পঙ্গু সমাজ ব্যবস্থার অভ্যন্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত একদল কর্মকর্তার অপারেশন টেবিলে শুয়ে আছে বাংলাদেশের একমাত্র পঙ্গু হাসপাতাল। এই হাসপাতালকে দেখভাল করার কেউ নেই। যারা আছেন, তারা অসহায় এবং মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। এই হাসপাতালকে ওরা এভাবেই দেখতে আগ্রহী। এভাবে রাখতে পারলেই তাদের লাভ। দালালদের সহযোগিতায় এখানকার রোগীদের হাতিয়ে নিয়ে নিজস্ব ক্লিনিকে স্থানান্তর করে তাদের চিকিৎসা দেওয়াতেই ওরা বেশি আগ্রহী। তাতে দু’পক্ষই লাভবান হয়। দালাল এবং ডাক্তার অথবা ক্লিনিকের মালিকরা দুস্থ এবং দরিদ্র মানুষের গলা কেটে নিজেদের মেদবহুল শরীরকে আরও কিছুটা স্ফীত করতে পারে। এদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিষয়টির আশু সমাধান হওয়া দরকার।
আমরা মনে করি, সরকার এবং মন্ত্রণালয় বিষয়টির প্রতি নজর দেবে। এবং এখান থেকে দুর্নীতিবাজ চক্রকে নির্মূল করে হাসপাতালটিকে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে সাহায্য করবে।
পিডিএসও/হেলাল