ইমরান হোসেন সুজন

  ০৯ জুন, ২০২০

করোনা পারেনি মাকে সন্তান থেকে আলাদা করতে

নম্রতা হালদার। একটি নিষ্পাপ শিশু। নতুন বান্দুরা গ্রামের রামানন্দ হালদার ও লিপি হালদার দম্পত্তির ঘরে করোনা আক্রান্ত হওয়ার মাত্র ৪৭ দিন আগে পৃথিবীতে আগমন ঘটে তার। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে পরিবারে সুখের কমতি ছিল না রামনন্দ হালদার দম্পত্তির। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে করোনা বাসা বেঁধেছে ছোট্ট নম্রতার শরীরেও। তবে তার বাবা-মার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। সন্তানের করোনা হলেও মা তাকে আলাদা রাখতে পারেনি। করোনা আক্রান্ত নম্রতাকে তার মা পরম আদরে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

পরিবাবর সূত্রে জানা যায়, নম্রতা চাচা ঠেলারাম হালদার ডায়বেটিকসের রোগী হওয়ায় অসুস্থ বোধ করেন। একদিন এলাকায় নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল টিম আসে করোনা পরীক্ষা করতেন। অনেকের সাথে করোনার উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও নম্রতা ও তার বাবা, মা, ভাই, চাচা, চাচাতো বোনসহ পরিবারের ১৩ জনকে করোনার পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্টে পরিবারের ৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে। তারা হলেন চাচা ঠেলারাম হালদার (৬০), শিশুটির চাচাতো বোন সদ্য এসএসসি পাশ করা অথৈ হালদার (১৬) ও শিশু নম্রতা হালদার।

এদের মধ্যে ঠেলারাম হালদার যেহেতু আগে থেকেই ডায়াবেটিকস ও বয়স্কজনিত রোগ ছিল, তাই তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মা-বাবা দুজনের করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে নম্রতা যেহেতু শিশু তাই তার চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েন চিকিৎসকরা। পরে সিদ্ধান্ত হয় শিশুটিকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু ৪৭ দিনের শিশুকে তো আর একা রাখা যায় না—এমন ভাবনা যখন চিকিৎসকদের মনে তখন নম্রতার মা জানান, তিনিই শিশুটির পাশে থাকবেন। মায়ের কথামতো বাসায় মায়ের কাছে রেখেই চলছে শিশুটির চিকিৎসা। শিশুটি আক্রান্ত হলেও বাবা-মা সুস্থ থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা কৌতূহল কাজ করছে। পৃথিবীর সব ভালোবাসায় খাদ থাকলেও মায়ের ভালবাসায় যেকোনো খাদ নেই তার প্রমাণ করলেন মা।

নম্রতার মা জানান, যখন সবাই চিন্তিত ছিলেন কে থাকবে আমার করোনা আক্রান্ত শিশুর কাছে তখন আমি চিকিৎসকদের সামনে এসে বললাম, কে থাকবে আবার? আমি থাকবো, আমার সন্তানের কাছে। দীর্ঘ দশ মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছি। আমার রক্ত পান করে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। এরপর আমার কলিজা ছেড়া ধনটি পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। সন্তানই যদি না বাঁচে, তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কী? সন্তানকে আমার কাছে রেখেই চিকিৎসা করাবো। এতে যদি আমার করোনা হয়, হবে। সন্তানের জন্য মরতে হলে মরবো।

এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা কন্ট্রোল কর্নারের ফোকাল পারসন ডা. হরগোবিন্দ সরকার অনুপ বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে নতুন বান্দুরায় করোনা সন্দেহ ভাজনদের পরীক্ষা করার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করি। এ সময় ওই পরিবারের ১৩ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তিনদিন পর ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসে শিশু, শিশুর চাচাতো বোন ও শিশুর চাচা করোনা আক্রান্ত। শিশুটিকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটির অবস্থা ভালো।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নবাবগঞ্জ,করোনা আক্রান্ত,শিশু
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close