মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ২৪ মে, ২০২০

তাৎপর্যময় ঈদের রাত

বার বার ফিরে আসে বলেই ঈদকে ঈদ বলা হয়। ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিম সমাজে আনন্দঘন এক আবহ নিয়ে আসে ঈদ। রোজার শেষের রাত অত্যন্ত বরকতের ও তাৎপর্যের। নবীজি, সাহাবায়ে কেরামসহ বুজুর্গরা আমলে কাটাতেন ঈদের রাত। আবু উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বছরের দুই ঈদের রাত যে ব্যক্তি ইবাদতে কাটাবে, তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যে দিন সব অন্তর মরে যাবে।’ (তালখিসুল হাবির)।

আমাদের দেশে ঈদের চাঁদ দেখার একটা আগ্রহ আছে। রমজানের ২৯ বা ৩০ তারিখে পশ্চিমাকাশে মোমিন বান্দারা ঈদের নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করেন। সেটা সুন্নতও। ঈদের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত। ঈদের রাত ইবাদতের বিশেষ রাতগুলোর অন্যতম। তাই ঈদের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা উত্তম।

ঈদের আগেই শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে; হাত-পায়ের নখ কাটতে হবে, গোঁফ ছোট করতে হবে। ঈদের রাতে ঘুমানোর আগে চোখে সুরমা ব্যবহার করতে হবে। সকালে গোসল করতে হবে। সকালবেলায় মিষ্টান্ন আহার এবং নতুন পোশাক বা সাধ্যমতো ও সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও ভালো ইসলামি সুন্নতি পোশাক পরতে হবে। এটা কেবল নতুন পোশাকের গল্প নয়, যার যা ভালো আছে সেটুকুই পরা উচিত।

সাহাবায়ে কেরাম ঈদের রাতকে ইবাদতের রাতই মনে করতেন। বাস্তব দুনিয়ায় আমরা কী দেখতে পাই, সমাজে একশ্রেণির মানুষ বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রচারে কেউ কেউ তৎপর হয়ে উঠে। আনন্দে হারিয়ে যাওয়ার জন্য ঈদ আসে না। ঈদ আসে ভ্রাতৃত্বের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। সুনানুল কুবরা বায়হাকিতে আছে, ‘ইবনে উমর (রা.) ঈদের রাত ইবাদত করে কাটাতেন।’

ঈদের রাতটি আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মূলত গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোতেই নবীজি আমলে নিমগ্ন থাকতেন। খালিদ মাদান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘বছরের পাঁচটি রাত এমন আছে, ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে সেগুলোতে যে ব্যক্তি ইবাদত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এক. রজব মাসের প্রথম রাত, দুই. ঈদুল ফিতরের রাত, তিন. ঈদুল আজহার রাত, চার. আশুরার রাত, পাঁচ. বরাতের রাত।’

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় দুই ঈদের রাতে জাগরণ (ইবাদত-বন্দেগি) করবে, তার অন্তর ওই (কিয়ামতের) দিনেও মরবে না, যে দিন (ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে) মানুষের অন্তরগুলো মারা যাবে। (ইবনে মাজা)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, পাঁচটি রাতের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রাতগুলো হলো— জুমআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ঈদুল আজহার রাত।

মুমিন তো কখনোই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন। ইতেকাফ শেষ কিছুক্ষণের জন্য বাড়িতে ফিরে এলেও আবারো নিমগ্ন হন ইবাদতে। কেউ কেউ ফিরে যান মসজিদে। রাতটা ইবাদতময় করে তোলেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈদের রাতেও আমলে কাটানোর তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

[email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদের রাত,তাৎপর্যময় রাত,রমজান,ইবাদত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close