প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৬ মার্চ, ২০২০

বিজ্ঞানের গবেষণা সাধারণের নাগালে আনার উদ্যোগ

আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের জন্যও এবার খুলে দেওয়া হলো দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের গবেষণাগার। যাতে সেখানকার সব গুপ্তরহস্য আমরা অন্তত চাক্ষুষ করতে পারি। শুরুটা হলো কলেজপড়ুয়া, অন্য কলেজের অধ্যাপক, গবেষকদের নিয়ে। এরপর খুলে দেওয়া হবে স্কুলের ছাত্রছাত্রী, আমজনতার জন্যও।

দেখা গেল, গবেষণাগারে বসে কীভাবে বিজ্ঞানীরা পড়তে পারেন সূর্যের ‘মন’। কিছুটা অন্তত বোঝা গেল, পূর্ণগ্রাস ছাড়া সূর্যের যে বায়ুমন্ডল বা করোনাকে কোনো দিন আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, তার অন্দরের ঘটনাবলির পূর্বাভাস কীভাবে কোটি কোটি মাইল দূরের এই গবেষণাগার থেকেই করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেল, সাগর, মহাসাগরের অন্দরের অণুজীবদের নিয়ে গবেষণা কীভাবে এগোচ্ছে, কীভাবে হয় ভূ-বিজ্ঞান বা গণিতের গবেষণা অথবা রসায়ন শাস্ত্রের জটিল গবেষণাগুলো। জানা গেল, ভূকম্পনের সঠিক পূর্বাভাসের জন্য গবেষণা কোন কোন পথ ধরে এগোচ্ছে।

কলকাতার অনতিদূরে মোহনপুরে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’ এর প্রাঙ্গণে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে কলেজপড়ুয়াদের জন্য খুলে দেওয়া হলো দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের গবেষণাগারগুলো। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, জীববিজ্ঞান, গণিত ও ভূ-বিজ্ঞানের। ‘ওপেন ডে’। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার জন্য। যা আগামী দিনে আরো হবে, এমনকি স্কুলপড়ুয়া বা বিজ্ঞানের নাম শুনলেই ভয়ে সিটিয়ে যান যারা, তাদের জন্যও। পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোতে যেমন ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, মহাকর্ষীয় বল, কণাবিজ্ঞান, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিয়োরি, কনডেন্সড ম্যাটার, অপটিক্স, নন-লিনিয়ার ডাইনামিক্সের মতো বিষয়, তেমনই স্পেকট্রোস্কোপি, লাইট-ট্রিগারড কেমিস্ট্রি, সুগার কেমিস্ট্রি, জৈব ও অজৈব রয়াসন, তাত্ত্বিক রসায়ন ও পলিমার কেমিস্ট্রির মতো বিষয়গুলো ছিল রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন গবেষণাগারে। জীববিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোতে ছিল জেনেটিক্স, সেল বায়োলজি, অ্যানাটমি, জিন রেগুলেশন, বায়োকেমিস্ট্রি, অ্যানিমাল বিহেভিয়ার, বোটানি ও বায়ো-ফিজিক্সের মতো বিষয়গুলো।

গণিতের বিভিন্ন গবেষণাগারে ছিল গ্রাফ থিয়োরি, টোপোলজি, নাম্বার থিয়োরি, স্ট্যাটিসটিক্স ও বীজগণিতের মতো বিষয়গুলো। ভূ-বিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোতে ছিল সিসমোলজি, পেট্রোলজি, জিওমরফোলজি, স্ট্রাকচারাল জিওলজি, কমপিউটেশনাল জিওলজি ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলো।

‘ওপেন ডে’র অন্যতম আয়োজক ‘আইসার কলকাতা’র জীববিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অনিন্দিতা ভদ্র বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের এই উদ্যোগের সময়েই বোঝা গেল, এমনকি অধ্যাপকরাও জানেন না, ওপেন ডে বলতে ঠিক কী বোঝায়। যারা জানেন, তারাও রাজ্যে এমন অনুষ্ঠান আগে করেছেন বা তার খবরাখবর জানেন, মনে হলো না। তবু আমাদের মাত্র সাত দিনের প্রস্তুতিতে এসেছিলেন প্রায় শ’তিনেক কলেজপড়ুয়া, গবেষক ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপকরা।

আয়োজকদের লক্ষ্য ছিল, কলকাতা থেকে একটু দূরে থাকা কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা। যারা নিজেদের কলেজে তেমন উন্নত মানের গবেষণাগার পান না। তবে অনিন্দিতা জানিয়েছেন, রাজ্যে এই প্রথম এমন আয়োজনের খবর পেয়ে কলকাতার নামজাদা কলেজগুলোর বিজ্ঞানপড়ুয়ারাও ছুটে গিয়েছিলেন আইসারে।

আয়োজকরা জানালেন, এবার থেকে প্রতি বছরই আয়োজন করা হবে ওপেন ডে। আর সেখানে আসতে বলা হবে স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও। বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে ও গবেষণার দিকে অল্পবয়সিদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এই উদ্যোগ। অনিন্দিতার বক্তব্য, ‘সাধারণ মানুষ যে কর দেন, সেই টাকা থেকেই সরকার অর্থ বরাদ্দ করেন গবেষণার জন্য। তাই আমজনতার জানার অধিকার রয়েছে, গবেষণাগারের ভেতরে কী কী হয়, আর সেগুলো কীভাবে হয়।’

তবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার, জানালেন অনিন্দিতা। তার কথায়, ‘আমি বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে (আইএসসি)’ পড়াশোনা করেছি। সেখানে অনেক বছর ধরেই এমন অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। সেখানে স্কুলের ছেলেমেয়েরাও আসে। আসেন অনেক সাধারণ মানুষ, রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের সঙ্গে যাদের কোনো যোগাযোগ নেই তারাও। কিন্তু রাজ্যে এই প্রথম হওয়ায় দেখলাম, অনেক কলেজ-শিক্ষকও এমন অনুষ্ঠানের নিয়মকানুন জানেন না। তারা ভেবেছিলেন, হয়তো টাকা-পয়সা জমা দিয়ে আগেভাগে নাম নথিভুক্ত করিয়ে এই অনুষ্ঠানে আসতে হবে। পরে তারা সব জেনে খুব খুশি হয়েছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গবেষণা,বিজ্ঞান,ওপেন ডে
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close