সাহাদাৎ রানা

  ০৩ মার্চ, ২০২০

শান্তির বাণী শুনতে কান পেতে আছি

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। সাধারণত এই পৃথিবীতে ৭২ বছর আমাদের পদচারণা থাকলেও আমাদের স্বপ্ন কিন্তু ৭২ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; আমরা আমাদের দুচোখে হাজার বছরের স্বপ্ন দেখি। এটা ভেবে যে আমরা যেকোনো সময় এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারি। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের রেখে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে আরো সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করবে। এভাবে চলবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। এই আশা একজন মানুষের অন্তরে বাস করে।

একজন মানুষ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়, তখন নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে এবং বাস্তবায়িত স্বপ্নগুলো আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে তার উত্তরসূরি অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মকে দায়িত্ব দেয়। যাতে ইচ্ছা কিংবা স্বপ্নগুলো নতুন জীবন ফিরে পেয়ে বেঁচে থাকে বছরের পর বছর। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ-যুবকদের কাঁধে। আর তরুণরাই পারে প্রবীণদের স্বপ্নগুলোকে সুন্দর জীবন দিতে। এজন্যই তরুণদের কাছে প্রবীণরা বেশি আশা করে থাকেন।

সমাজ, দেশ এবং পুরো জাতিই তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার মনে করে। সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কারিগর এবং জাতির কর্ণধার হিসেবে তাদের অন্তরে লালন করেন। তরুণদের মাধ্যমে যেহেতু আগামীর বাংলাদেশ এবং পৃথিবী বিনির্মিত হবে; তাই তাদেরও সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠতে সুযোগ দিতে হবে। তাদের শেখাতে হবে ন্যায়-নীতির কথা। আর কাজের মাধ্যমে উপহার দিতে হবে উত্তম আদর্শ। তরুণদের মাঝে আলাদা কোনো আইকন বা আইডল নেই; প্রবীণরাই নবীনদের আইকন। সমাজে যে দ্বন্দ্ব আছে, তা প্রবীণরাই মিটিয়ে ফেলবেন। হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি-হানাহানিতে তাদের অংশ করালে তারাও ঠিক এই জিনিসটাই শিখবে। ভবিষ্যতে তারাও ঠিক এমনটাই করবে। তরুণদের নিয়ে বেশি আশাবাদী হলো দেশ; নিজের মাতৃভূমি।

দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে তরুণদের মস্তিষ্কে দিতে হবে স্বচ্ছ জ্ঞান। ভবিষ্যতে তারা যাতে ভালো আদর্শ লালন করে স্বচ্ছ ন্যায়নীতি উপহার দিতে পারে। তাদের সামনে দলাদলি করে গোলমাল করলে স্বার্থের জন্য দুর্নীতি শিক্ষা দিলে তারা দেশে ন্যায়নীতি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে? একদল আরেক দলকে নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করলে, ঠেস মেরে বিবৃতি দিলে, কাদা ছোড়াছুড়ি করলে তারা ভালোবাসার ভাষা, বিদ্বেষহীন রাজনীতি কোত্থেকে শিখবে? ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে তাদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে অনৈতিকতা শিক্ষা দিলে তো তারা দুর্নীতিই শিখবে। কিন্তু এই তরুণ সমাজের সামনে এই দলাদলি, খোঁচামারা বক্তব্য প্রদান করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকলে এবং আদর্শ লালন করে দেশ পরিচালনা করতে শেখালে ভবিষ্যতে প্রবীণদের স্থানে তারাও কিন্তু উত্তম আদর্শ দিয়ে দেশ, সমাজ পরিচালনা করতে পারবে।

তরুণদের উদ্যম শুধু দেশের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয়। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের আকাক্সক্ষার জাল বিস্তৃত। সুন্দর আদর্শ দিয়ে বিশ্বের মঞ্চকে সাজাতে তাদের ইচ্ছার কমতি নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান বিশ্বনেতাদের রাজনীতির ধরন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে কিংবা নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে দিনের পর দিন মানুষের জীবন নাশ করে চলছেন। অথচ তারাই বিভিন্ন মঞ্চে মানবতার বাণী ঘোষে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই দৃশ্য অবলোকন করে নিয়মিত হতাশ হচ্ছে। যেই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই কামানের শব্দ আর গুলির আওয়াজ শোনে; সে কোন আদর্শ নিয়ে বড় হবে? ঘর থেকে বের হলে যার ফিরে আসার নিশ্চয়তা থাকে না, বারুদের গোলায় যার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যার চোখের সামনে তার বাসগৃহ জ্বলেপুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়— সে কীভাবে বড় হয়ে শান্তির বাণী প্রচার করবে? প্রতিশোধের নেশায় কি তার শোণিত উত্তপ্ত হবে না? আর এভাবেই কি বছরের পর বছর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতেই থাকবে- কখনো কি এর সমাপ্তি ঘটবে না? এ ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের এখনই সচেতন হতে হবে। বছরে একবার সাধারণ পরিষদে এসে বক্তব্য দিলেই হবে না; যুদ্ধ বন্ধে কাজ করতে হবে। মানুষের বুক ঝাঁজরা করার অস্ত্র আবিষ্কার থেকে বন্ধ করে মানুষের শান্তির জন্য কাজ করতে হবে। নিহতের অভিশাপ আর আহতের আর্তনাদ পৃথিবী আর শুনতে পারছে না।

পৃথিবী শান্তি চায়। আমরা তরুণ; জাতির ভবিষ্যৎ। আগামীর দেশ, পৃথিবী আমাদের হাতে বিনির্মিত হবে। আমাদের বেড়ে ওঠার পথও কণ্টকমুক্ত রাখতে হবে, ঝঞ্ঝাটমুক্ত পরিবেশ আমাদের উপহার দিতে হবে। দুর্নীতির কালো ছোঁয়া সমাজ থেকে দূর করতে হবে। আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজনীতির মাঠে আমরা স্বচ্ছতা ও ঈর্ষামুক্ত রাজনীতি দেখতে চাই। ভিন্ন মত নিয়েও কীভাবে একই সঙ্গে কাজ করা যায়, প্রবীণ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা শিখতে চাই। কাদা ছোড়াছুড়ি আর দেখতে চাই না। বিভিন্ন দল এক মঞ্চে এসে ভালোবাসার চাদরে আবৃত হবে। একই সুরে শান্তির বাণী শুনব বলে অপেক্ষায় আছি। নিজ স্বার্থকে বলি দিয়ে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখব বলে চোখ মেলে আছি। পৃথিবীর সব মানুষের কণ্ঠে এক সুরে শান্তির বাণী শুনতে কান পেতে আছি।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গড় আয়ু,প্রজন্ম,মানবতা,স্বপ্ন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close