ডা. কারি মাওলানা শেখ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ আহাম্মেদ
ধর্ম ও সমাজ
তারিফুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)। যাকে আল্লাহতায়ালা মাটি এবং পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, হজরত আদম (আ.) সৃষ্টির হাজার বছর আগে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহতায়ালা নূর হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। সেই হিসেবে আদম (আ.) যদি মাটির তৈরি হয়, তবে আমাদের নবী নূরের তৈরি। কথাটি যৌক্তিক ও বিবেকসম্মত।
কারণ মাটি সৃষ্টির বহু আগে নূরের সৃষ্টি। যেমন হাদিসে এসেছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম আল্লাহতায়ালা তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। সেই নূর থেকেই সৃষ্টি জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। যার মধ্যে মাটিও শামিল। আর সেই মাটি থেকেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আপনি কখন নবী হয়েছেন? তিনি বলেন, যখন আদম (আ.) রুহ এবং দেহের মাঝামাঝি ছিলেন। অর্থাৎ আমি তখন থেকেই নবী, যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টিই করা হয়নি।
নিম্নে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৃষ্টি স¤পর্কিত হাদিসসমূহ বিস্তারিতভাবে পেশ করা হলো : হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কোরবান হোক। আমাকে বলুন মহান আল্লাহতায়ালা সবকিছু সৃষ্টির আগে কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন?
হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জাবের! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতায়ালা সবকিছু সৃষ্টির আগে সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর মোবারক তার নিজ দূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সেই নূর তার কুদরতে ভ্রমণ করতে লাগল। সেই সময় না-লওহ ছিল, না-কলম ছিল। জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না। (মুসান্নাফ ইবনে আবদুর রাজ্জাক থেকে হাদিসটি জাবের (রা.)-এর সনদে উল্লেখ্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, সিরাতে হালাবিয়া, ১ম খন্ড, দারুল কিতাব ইলমিয়্যাহ। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ, ১ম খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা। মাওরিদুর রাভী, ২২ পৃষ্ঠা। আন-নিয়ামাতুল কুবরা, ২য় পৃষ্ঠা। নশরুত্ব তীব, ২৫ পৃষ্ঠা।)
হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন হজরত আদম আলাইহিস সালাম দ্বারা অপ্রত্যাশিত ভুল হয়ে গেল তখন তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি আপনার সত্য নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উছিলায় প্রার্থনা করছি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অতঃপর আল্লাহতায়ালা বললেন, হে আদম (আ.)! তুমি কীভাবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চিনলে অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি? আদম (আ.) বললেন, হে আমার রব! যখন আমাকে আপনি সৃষ্টি করেন এবং আমার ভেতর রুহ প্রবেশ করান, তখন আমি আমার মাথা ওপরের দিকে উঠিয়েছি এবং আরশের গায়ে লিখিত দেখেছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। ফলে আমি বুঝতে পারলাম, নিশ্চয়ই আপনার প্রিয়পাত্র ব্যতীত আপনার নামের পাশে অন্য নাম থাকতে পারে না।
তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, তুমি সত্য বলেছ। হে আদম! সে আমার কাছে খুবই প্রিয় সৃষ্টি, তুমি আমার কাছে তার উছিলায় প্রার্থনা করেছ, ফলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর আমি যদি মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সৃষ্টি না করতাম, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না। (মুসতাদরাক আলাস সহিহ, ৩য় খন্ড, হাদিস নং-৪২৮১। বায়হাকি দালায়েলুন নবুওয়ত, ৫ম খন্ড, হাদিস নং-২২৩০। ওফাউল ওফা, ৪র্থ খন্ড, ২২২ পৃষ্ঠা। খাসায়েস কুবরা, ১ম খন্ড, হাদিস নং-১২। নশরুত্ব তীব, ৩০ পৃষ্ঠা। জজবুল কুলুব, উছিলা অধ্যায়, হাদিস নং-১।)
লেখক : পীরসাহেব, মাধবদী রহমানিয়া দরবার শরিফ
পিডিএসও/তাজ