অধ্যাপক ড. মো. আমানুল্লাহ

  ০৫ জানুয়ারি, ২০২০

বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা শব্দ দুটি সমার্থক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দ দুটি সমার্থক। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাধ্যমে এই দুটি নাম একসঙ্গে মিলে গেছে। এই দুইয়ের মিলিত স্রোতধারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। একসময় যেসব তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্র তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, তারাই সোনার বাংলার অগ্রগামীতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আহমদ ছফা শেখ মুজিবুর রহমান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।

আমরা প্রত্যেকেই জীবনে অনুসরণ করার জন্য আদর্শ মানুষ খুঁজি। আদর্শ খুঁজতে হলে, কাউকে অনুসরণ করতে হলে তিনি একজন ‘বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মানুষকে যেমন ভালোবাসতেন এ দেশের মানুষও তাকে ভালো বেসেছেন। বঙ্গবন্ধু শৈশবেই দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্কুলে ছাত্রজীবনে

তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুষ্টিভিক্ষার চাল উঠিয়ে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার খরচ বহন করা, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরিয়ে দিতেও তিনি কার্পণ্য করতেন না। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার মতো মহৎ গুণ শক্তভাবেই ধারণ করেছিলেন সেই শৈশবেই।

ধর্মের দোহাই দিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হয়েছিল। কিন্তু অল্প দিনেই বাঙালিরা বুঝতে পারে পাকিস্তান তাদের নয়। প্রথমে ভাষার ওপরে আঘাত দিয়ে শোষণ শুরু করেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম আন্দোলনে কারাবরণ করেছিলেন বাঙালির নেতা শেখ মুজিব। এরপর বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রতিটি বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্র। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। এর ভেতর দিয়ে তিনি আবির্ভূত হন বাঙালি জাতির মহানায়ক হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে সবাই ডাকতেন মুজিব ভাই বলে। এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন বন্ধু, নেতাকর্মী সবার কাছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এ দিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মহানায়ক ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার বক্তব্য বাঙালির প্রাণে শক্তি সঞ্চারিত করে। সেই শক্তিতে একটানা ৯ মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অন্যান্য আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বারবার জেল খেটেছেন। ফাঁসির মঞ্চে নিয়েও তাকে মারতে পারেনি পাকিস্তানি শোষকরা। বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসীর চাপে কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন জাতির জনক। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর দেশকে পুনর্গঠনে তিনি মনোনিবেশ করেন। কিন্তু অশুভ শক্তি বুঝে গিয়েছিল বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে হলে বঙ্গবন্ধুকে থামাতে হবে। সেখান থেকে তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে স্বপ্ন জাগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এখন বাস্তব, এর কারণ সঠিক নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সূচকে এশিয়ার সেরা অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ।

বর্তমানে সব সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক ব্লগপোস্টে মন্তব্যে বলা হয়, পূর্বাভাস, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ হবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর যে দেশ অত্যন্ত দরিদ্র ছিল, সেই দেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার এখন ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন বৈশ্বিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। সেই পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নীত হওয়ার মানে হলো দেশের মোট জাতীয় আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি মানবসম্পদ, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বেড়েছে।

প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের চেয়ে দ্রুতগতিতে বড় হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকবে মালদ্বীপ ও নেপাল, যদিও উভয় দেশের প্রবৃদ্ধি হবে একই হারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তালিকায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সবার নিচে থাকবে পাকিস্তান।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মূলত সে কারণেই বাংলাদেশের এই উত্তরণ। উদাহরণ হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম দেখিয়েছে, ২০১০ সালে যেখানে দিনে ১ ডলার ৯০ সেন্টের চেয়ে কম আয়ের শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, সেখানে ২০১৮ সালে তা ১০ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

দেশের রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাতের আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। পোশাক খাত শুধু অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে না, এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ৮০ শতাংশ নারী পোশাককর্মী পুরো দেশের অর্থনীতিকে চালিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি অর্থনীতির বহুমুখীকরণও ঘটছে। মোট দেশজ উৎপাদনের ৫৩ শতাংশই আসছে সেবা খাত থেকে। অন্যদিকে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যু রোধ ও গড় আয়ু বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবারে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ অনেক অর্থনীতিবিদই বাংলাদেশের এই অজর্নে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেশি। তাই ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেক সংস্থাই পূর্বাভাস দিয়েছে। সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আমরা আশাবাদী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেখান থেকে তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে স্বপ্ন জাগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এখন বাস্তব, এর কারণ সঠিক নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সূচকে এশিয়ার সেরা অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আমরা আশাবাদী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিশেষে, ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে নন অ্যালাইন্ড সম্মেলনে বতৃন্ধুর সঙ্গে কোলাকুলি করার সময় কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনি হিমালয়সম। আর এভাবেই আমার হিমালয় দর্শন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর পর আবারও এক বিশ্বনেতার নেতৃত্বে এসেছে, তিনি হলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমার্থক,বঙ্গবন্ধু,স্বাধীনতা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close